শুক্রবার, ২১ জুলাই, ২০১৭

মির্যা কাদিয়ানীর ভবিষৎবাণী : আমার বংশ হতে একজন মাছীলে মাসীহ আকাশ থেকে অবতরণ করবে :
------
পুরনো দোস্ত আহমদ জিলানী। অনেক দিন পর আবার দেখা। ঢাকার কমলাপুরে প্রায় সময় আমার যাওয়া হয়। একদিন ইচ্ছে করি, বায়তুল মোকাররম মসজিদে মাগরিব সালাত পড়ে নিই। শুকরিয়া যে, সেখানেই আহমদ জিলানির সাথে দেখা হয়ে গেল। যথারীতি সালাত শেষ করে দু'জনই বেরিয়ে পড়লাম।
আমি বিশ্বাসই করছিলাম না যে, আহমেদ জিলানী বায়তুল মোকাররমে সালাত পড়তে আসতে পারে। কারণ, কাদিয়ানিদের জন্য অ-কাদিয়ানিদের পেছনে সালাত নিষিদ্ধ। (উল্লেখ্য, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানিকে যারা নবী স্বীকার করবেনা তারা কাদিয়ানিদের ফতুয়া (?) মতে কাফির। দেখুন : রূহানী খাযায়েন : ২২/১৬৭) এজন্য আমার ভেতর কৌতূহল জাগল যে, আহমেদ জিলানী কী করে বায়তুল মোকাররম এল! তবে কি সে.....! আহমদ জিলানী আমার মনের অবস্থা টের পেয়ে যায়। লোকটি খুব সচেতন। সত্য অনুসন্ধানিও। কুরান সুন্নাহ ভিত্তিক যে কোনো আলোচনা তন্ন হয়ে শুনেন। সে আমার চোখের ভাষা বুঝতে পারল। বলল, দোস্ত! আর টেনশন করিসনা! আমি ঘরে ফিরে এসেছি।
বললাম, মানে? ----জাহান্নামের কিনারায় ছিলাম। যে কোনো মুহূর্তে জাহান্নামে পতিত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। মহান প্রভূর দরবারে কোটী কোটী শুকরিয়া, তিনি আমার অন্তর পালটে দিলেন। মিথ্যার ঘোর অন্ধকার থেকে রেহাই দিলেন।... বললেন, আহমেদ জিলানী।
আমি বললাম, কী হল খুইলা কও!
আহমেদ জিলানী আর তার দু'চোখের পানি আটকে রাখতে পারলনা। সে অবুঝ শিশুর মত কান্নাভঙ্গিতে বলতে লাগল, আমি প্রতারিত হয়েছিলাম। কাদিয়ানিয়ত/আহমদিয়তকে সঠিক ইসলাম মনে করে নিজের অজান্তে ঢুকে পড়েছিলাম। এভাবে দীর্ঘ ২ বছর কেটে যায়। এখন ভুল বুঝতে পেরে তাওবাহ করে ফিরে এসেছি। ভাই এখন আমার প্রতিটি মুহূর্তে মনে পড়ছে, যদি ওই অবস্থায় আমার মওত হত...!
তার কথাগুলো শুনার পর আমার পক্ষেও অশ্রু সংবরণ করা সম্ভব হয়নি। দীর্ঘ সময় দু'জনে অবুঝ শিশুর মত কান্নাকাটি করলাম। খানিক পর নিজেকে নিয়ন্ত্রনে এনে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, দোস্ত! তুই এই প্রতারকদের হাতে নিজের এ মহামূল্য ঈমানটুকু তুলে দিতে কেন গেলি?
আবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল জিলানী। কান্না জড়িত অবস্থায় পুরো ঘটনা শুনাল। বলল, ইউনিভার্সিটি লাইফে এক ক্লাসমেটের সাথে প্রথম সাক্ষাৎ হলে সে আমাকে নানা ভাবে খুব ঘনিষ্ঠতার পরিচয় দিল। কিন্তু তার উদ্দেশ্য আমার জানা ছিলনা। সে আমাকে নিজের পরিচয় গোপন রেখে নানা বিষয়ে কথা শুনাত। ধর্ম সম্পর্কে নানা ব্যাখ্যা শুনাত। আমি যেসব বিষয়ে অবগত ছিলাম না সেসব বিষয়েই তাকে বেশি কথা বলতে দেখতাম। বন্ধুত্বের খাতিরে জোর করে হলেও তার কথা গুলো শুনতাম।
এক দিন সে ঢাকার বকশিবাজারে একটি অফিসে নিয়ে গেল। নামাযও তার সাথে পড়াল। কিন্তু কিছুতেই আমি স্বস্তি পাচ্ছিলাম না। আবার তাকেও কিছু বলছিনা। যে ইমামের পেছনে আমাকে নামায পড়াল, তাকে দেখলাম কালো টুপি পরা আর মুখে খোঁচাখোঁচা দাঁড়ি। উনার সাথে আমাকে দেখা করিয়ে দিল। আমাকে বুঝাল, বর্তমানের ইসলাম মোল্লাদের বানানো ইসলাম। এ ইসলাম মেনে জান্নাত পাওয়া যাবেনা। মোল্লাদের ইসলামে ইসলামের নামে রাষ্ট্র দখলের আন্দোলন, সংগ্রাম আর ধর্মের নামে জঙ্গিবাদ, অস্ত্র দিয়ে মানুষ হত্যা (জিহাদ) এসব করে জাহান্নামি হওয়া ছাড়া আর কোনো লাভ নেই। তাই আল্লাহ'র শুকরিয়া জ্ঞাপন করুন যে, তিনি আপনাকে আমাদের মধ্যে এনে দিলেন। আমরা একজন খলিফার নেতৃত্বে চলি। এভাবে নানা বিষয়ে উনারা আমাকে বুঝালেন। উলামায়ে হযরতদের বিরুদ্ধে সীমাহীন বিদ্বেষপূর্ণ কথাবার্তাও শুনালেন। ---বললেন, আহমেদ জিলানী।
এরপর আমি তাকে বললাম, তুমি কি তাদের পরিচয় জানতে চাওনি? তখন জিলানী দোস্ত বলল, তারা কোনো ভাবে প্রকৃত পরিচয় প্রকাশ করতে চায়নি। তবে তাদের বই পুস্তক পড়তে পড়তে তাদের ব্যাপারে আমি বুঝতে পারলাম যে, তারা মির্যা গোলাম আহমদ নামের কাউকে অনুসরণ করছে। কিন্তু লোকটি সম্পর্কে যখন তাদেরকে প্রশ্ন করি তখন বিভ্রান্তিকর উত্তর পেতে থাকি। তাদের অনেক মুরুব্বিকে জিজ্ঞেস করেও সুস্পষ্ট কোনো উত্তর পেলাম না। কেউ তাকে যামানার ইমাম মাহদী মনে করেন। কেউ, ঈসা মাসীহ আবার কেউ বা মাসীহে ঈসার অবতার। আবার কেউ কেউ তাকে নবীও মানেন। কিন্তু আমার জানা ছিল যে, হযরত মুহাম্মদ (সা) সর্বশেষ নবী। তাই তাদের সেসব কথাবার্তা আমাকে অনবরত সন্দেহের শেষ সীমায় নিয়ে গেল। আমি তাদের প্রকাশনী থেকে ২৩ খন্ডে প্রকাশিত মির্যার রচনা সমগ্রী 'রূহানী খাযায়েন' পড়তে শুরু করি। উক্ত বইয়ের ৩নং খন্ডের ১৭৯ এবং ১৮০ নং পৃষ্ঠায় এমন কিছু কথাবার্তা মির্যার জবানিতে পেলাম তা পড়ে বুঝতে আর বাকি থাকেনি যে, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী মূলত আঠার শতকের জঘন্যতম একজন ধোঁকাবাজ ও ভন্ডনবী।
সে ওখানে কী লেখেছে? বললাম আমি।
প্রতিউত্তরে সে বলল, সেখানে মির্যা সাহেব লিখেছেন:
بلکہ خدا تعالیٰ نے ایک قطعی اور یقینی پیشگوئی میں میرے پر ظاہر کر رکھا ہے کہ میری ہی ذریت سے ایک اور شخص پیدا ہوگا جس کو کئی باتوں میں مسیح سے مشابہت ہوگی وہ آسمان سے اترے گا اور زمین والوں کی راہ سیدہی کر دے گا.
অর্থ : মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী সাহেব লিখেছেন : খোদাতায়ালা একটি অকাট্য ও বিশ্বাসযোগ্য ভবিষৎবাণীতে আমার প্রতি প্রকাশ করলেন যে, আমার বংশধর হতে এক ব্যক্তি জন্ম নেবে। যিনি কতেক ক্ষেত্রে মাসীহ ঈসা'র সাথে সামঞ্জস্যতা রাখবে ও সে আকাশ থেকে অবতরণ করবে এবং দুনিয়াবাসির পথ সোজা করে দেবেন তথা হিদায়াতের পথ দেখাবেন।" (রূহানী খাযায়েন : ৩/১৮০; ইযালাতুল আওহাম ১ম খন্ড; ১৫৬ নং পৃষ্ঠা।) স্কিনকপি পোস্টের নিচে দেখুন!
----
উপরে মির্যা সাহেব নিজেই নিজের কথিত ভবিষৎবাণীতে সুস্পষ্টভাবে বলে গেছেন, তার বংশধর তথা মির্যা বংশের একজন কথিত মাছীলে
মাসীহ জন্ম নেবে এরপর সে আকাশ থেকে অবতরণ করবে। যাকে তিনি অকাট্য এবং এক্বিনি বলেই ব্যক্ত করেছেন। অথচ ইতিপূর্বে আমাকে অত্যাধিক যুক্তি আর কুরানের নানা আয়াতের ব্যাখ্যা দ্বারা বুঝানো হত যে, কোনো মানুষের পক্ষে আকাশে উঠা সম্ভব নয়। যদি তা সম্ভব হত তাহলে ইসলামের পয়গম্বর হযরত মুহাম্মদ (সা) তিনি সর্বপ্রথম এ সম্ভবপর কাজটি করে উম্মতকে দেখাতেন। এতে করে উনারা আমাকে সর্বশেষে যে কথা বুঝাতে চেষ্টা করেছেন তা ছিল, মুসলমানের বিশ্বাস, বনী ইস্রাইলের নবী হযরত ঈসা ইবনে মারিয়ম (আ) আকাশে থাকা এবং কেয়ামত পূর্ব মুহূর্তে দুনিয়াতে আকাশ থেকে অবতরণ করা সত্য নয়। (নাউজুবিল্লা)।
অথচ মির্যা সাহেব তার বইতে তার বংশধর হতে একজন জন্ম হয়ে আকাশ থেকে অবতরণ করে আসার সুস্পষ্ট ভবিষৎবাণী দিয়ে রেখেছেন। যা প্রকারান্তরে কাদিয়ানী মুরুব্বিদের সেসব অহর্নিশি যুক্তি আর ব্যাখ্যাকে অসার এবং মিথ্যা বলে সাব্যস্ত করল।
আর যদি কাদিয়ানী তার্কিক ও মুরুব্বিদের সেসব যুক্তি আর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণকে সঠিক ধরা হয় তাহলে অকপটে স্বীকার করতে হবে যে, তাদের যুক্তি এবং ব্যাখ্যা অনুসারে মির্যা কাদিয়ানী সাহেবের ভবিষৎবাণী ভুল এবং মিথ্যা। কিন্তু আমি কারো নিকট তাদের এসব স্ববিরোধী আর বিভ্রান্তিকর কথাবার্তার সুষ্ঠু সমাধান পেলাম না। যার ফলে আমি বুঝলাম যে, এ কাদিয়ানী জামাত একটি ধুর্ত ও ঈমান চোর জামাত। তাই এ ঈমান চোর জামাত ত্যাগ করে তাওবাহ পড়ে আবার ঘরে ফিরে আসতে বাধ্য হলাম।
বললেন, আহমদ জিলানী।
আমি : আল্লাহ আপনার মত সবাইকে এ ঈমান চোরের জামাতের ধোঁকাবাজি বুঝার তাওফিক দিন, আমীন।
-----
মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী কলেরায় আক্রান্ত হওয়া এবং পায়খানায় মৃত্যুবরণ করার তাত্ত্বিক ঘটনা পড়ুন : www.markajomar.com/?p=3520
------
লেখক, প্রিন্সিপ্যাল নূরুন্নবী।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

ইসলামের দৃষ্টিতে বৃক্ষরোপণ ও সবুজ বনায়নের গুরুত্ব

ইসলামের দৃষ্টিতে বৃক্ষরোপণ ও সবুজ বনায়নের গুরুত্ব হাফেয মাওলানা মুফতি ওসমান আল-হুমাম উখিয়াভী সিনিয়র মুহাদ্দিস জামেয়া ইসলামিয়া বাইতুল ক...