“এক মহা পরুষের বিপ্লবী আওয়াজ ”
আল্লামা মুফতি নুর হুসাইন নূরানী দা.বা. পীর সাহেব মূন্সীগঞ্জ।
এর আপোষহীণ বানী
নবিজী সা.এর দুশমণ কাদিয়ানীদেরকে রাষ্ট্রীয় ভাবে কাফের ঘোষণা না করা পর্ন্ত ঘরে ফিরব না।
আমাদের প্রিয়
নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বশেষ নবী। তার পরে পৃথিবীতে আর কোন নবীর আগমন ঘটবে না। হযরত আদম আ. থেকে নিয়ে মানব জাতির হেদায়েতের উদ্দেশ্যে যত নবী আল্লহ তায়ালা প্রেরণ করেছেন, তাদের সমাপ্তি হয়েছে বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে। নবীদের
ধারাবাহিকতার এ পরিসমাপ্তিকে বলা হয় ‘খতমে নবুওয়াত’। আর আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লমকে বলা হয় খাতামুন্নাবিয়্যিন তথা সর্বশেষ নবী।
খতমে নবুওয়াত ‘জরুরিয়্যাতে দীন’ তথা দীনের
স্বতঃসিদ্ধ ও মৌলিক বিষয়সমূহের অন্যতম। আল্লাহর
ওপর, নবীদের ওপর এবং দীনের অন্যান্য মৌলিক বিষয়ের ওপর যেমন ঈমান
রাখা ফরয, তেমনি ফরয খতমে নবুওয়াতের ব্যাপারে স্বচ্ছ আকীদা পোষণ করা , হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শেষ নবী
হিসেবে মেনে নেয়া। নবীদের ওপর ঈমান না রাখা যেমন কুফুরী, তেমনি খতমে নবুওয়াতকে অস্বীকার করা বা এর বিকৃত ব্যাখ্যা
করাও কুফুরী। খতমে নবুওয়াত পবিত্র কুরআনের শতাধিক
আয়াত এবং অসংখ্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। নিম্নে কয়েকটি দৃষ্টান্ত পেশ করা হচ্ছে।
পবিত্র কুরআনে খতমে
নবুওয়াত
১. পবিত্র
কুরআনে আল্লাহ তায়ালা সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন যে, ‘মুহাম্মদ তোমাদের কোন ব্যক্তির পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসূল ও সর্বশেষ নবী। আর আল্লাহ সর্ব বিষয়ে অবগত ’। [সূরা আহযাব:৩৩ : ৪০]
২. আল্লাহ তা’আলার ঘোষণা, ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে
পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের ওপর আমার নেয়ামত পূর্ণ করে
দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দীন হিসেবে মনোনীত করলাম’। [সূরা মায়েদা ৫:৩]
এ আয়াতে আল্লাহ
তা’আলা দীন পরিপূর্ণ করে দেয়ার ঘোষণা করেছেন। সুতরাং এ দীনই হল সার্বকালীন এবং সার্বজনীন। এর মধ্যে সংযোজন ও বিয়োজনের জন্য নতুন আর কোন নবীর প্রয়োজন
অবশিষ্ট নেই।
৩. মুহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ, ‘আপনি বলুন, হে মানুষ! আমি তোমাদের সকলের প্রতি
আল্লাহর প্রেরিত রসূল। যিনি আকাশ ম-লী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্বের অধিকারী’। [সূরা আ’রাফ : ১৫৮]
এ আয়াত থেকে
সুস্পষ্ট প্রতিভাত হয় যে, আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধুমাত্র একটি গোত্র, দেশ বা ভূখ-ের জন্য প্রেরিত হননি; বরং তিনি প্রেরিত হয়েছেন গোটা পৃথিবীতে কেয়ামত পর্যন্ত
আগমনকারী সকল মানুষের জন্য। তিনি সর্বকালের সর্বজনের নবী। তিনিই শেষ নবী।
হাদীসে খতমে
নবুওয়াত
১. হযরত আবু
হোরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমার ও আমার পূর্ববর্তী নবীগণের
দৃষ্টান্ত হল ঐ ব্যক্তির মত, যিনি উত্তমরূপে একটি ঘর বানিয়েছেন এবং
সুন্দরভাবে তা সাজিয়েছেন। তবে ফাঁকা রেখেছেন এক কোণে একটি ইটের
জায়গা। তখন লোকেরা তা প্রদক্ষিণ করতে লাগলো এবং অভিভূত হয়ে বলতে
লাগলো, এই ইটটি কেন লাগানো হলো না? নবীজী বললেন, আমি হলাম সে ইটটি। আর আমিই শেষ নবী। [সহীহ বুখারী, হাদীস : ৩৫৩৫]
২. হযরত আনাস
ইবনে মালেক রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘রিসালাত ও নবুওয়াতের ধারা সমাপ্ত
হয়েছে। সুতরাং আমার পরে কোন রাসূল নেই এবং আমার পরে কোন নবীও নেই।’ [তিরমিযি, হাদীস : ২২৭২]
৩. হযরত আবু
হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বনী ইসরাঈলের নেতৃত্ব দিতেন নবীগণ। কোন নবীর ইন্তেকাল হলে
আরেক নবী তার স্থলাভিষিক্ত হতেন। আর আমার
পরে কোন নবী নেই। তবে অচিরেই অনেক খলিফা হবেন, যারা সংখ্যায় থাকবেন অনেক। [সহীহ বুখারী, হাদীস : ৩৪৫৫]
৪. হযরত জুবাইর
ইবনে মুতঈম রা. তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি হলাম ‘আক্কিব’। আর ‘আক্কিব
তিনিই, যার পরে আর কোন নবী নেই। [সহীহ মুসলিম :২/২৬১, হাদীস :২৩৫৪]
৫. হযরত সাওবান
রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অচিরেই আমার উম্মতের মধ্যে ত্রিশজন
মিথ্যুকের আবির্ভাব ঘটবে। প্রত্যেকেই নিজেকে নবী দাবি করবে অথচ
আমিই সর্বশেষ নবী। আমার পরে আর কোন নবী নেই। [সুনানে আবি দাউদ, হাদীস : ৪২৫২]
সারকথা
পবিত্র কুরআন ও
হাদীসের আলোকে আমরা জানতে পারলাম যে, হযরত মুহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বশেষ নবী। তার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা দীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন এবং
তারই মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটিয়েছেন নবুওয়াতের ধারাবহিকতার। এখন আর কোন নবী আসবেন না; না কোন ‘যিল্লি’ তথা ছায়া নবী আর না কোন শরীয়তবিহীন
নবী। সুতরাং এখন কেউ যদি নবী হওয়ার দাবি করে, তাহলে যে কোন অর্থেই দাবি করুক না কেন – সে হবে মিথ্যা নবী। আর কেউ যদি তাকে নবী হিসেবে মেনে নেয় তাহলে সে হবে মিথ্যা
নবুওয়াতের স্বীকৃতি দানকারী। আর উভয়েই
দীনের একটি মৌলিক বিষয় অস্বীকার করার কারণে ইসলামের সীমানা থেকে বের হয়ে কুফুরের
সীমানায় প্রবেশ করবে। আর কাফেদের পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দীন-ইসলামের নামে ঈমান বিধ্বংসী
সর্বপ্রকার ফেতনা থেকে হেফাজত করুন। আমীন !
আমাদের সংগ্রাম চলবেই
উত্তরমুছুন