ফতওয়ায়ে খতমে নবুওয়াত
সালাত অধ্যায়
সমাধানে মুফতি ওসমান আল-হুমাম উখিয়াভী।
মুহাদ্দিস জামেয়া কুরআনিয়া ওসমানবাদ
রাজঘাটা,নোয়ারবিলা,লোহাগাড়া,চট্টগ্রাম।
সত্যায়নে
ফক্বিহুল আসর আল্লামা মুফতি নুর হুসাইন নুরানী দা.বা.।
আমীর খতমে নবুওয়াত আন্দোলন বাংলাদেশ। পীর সাহেব
মুন্সিগঞ্জ,ঢাকা।
দলিল ভিত্তিক সালাতের ১০০টি প্রচলিত ভুল ( একত্রে
সকল পর্ব)
১।প্রচলিত ভুলঃ প্রচলিত উযূর মধ্যে বাংলায় বা আরবীতে নাওয়াইতুআন আতআজ্জা…… নিয়্যাত হিসাবে
পড়া হয়। কিন্তু
সহীহ হাদীস তো দূরের কথা কোন যঈফ হাদীসেরও মুখে নিয়্যাত উচ্চারণের কথা
বলা নেই।
* রাসূল
(সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) এর পদ্ধতিঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ‘‘আর প্রত্যেক ব্যক্তি তাই পাবে, যা সে নিয়্যাত করবে।’’ (সহীহুল বুখারী-১/১, সহীহ্
মুসলিম’ ৪৬) অতএব নিয়্যাত করতে হবে পড়তে হবে না। আনোয়ার শাহ্ কাশ্মিরী (রঃ) বুখারীর শরা হতে লিখেছেন; নিয়্যাত হলো- অন্তরের কার্যসমূহ। (ফয়যুল বারী-১/৮ পৃঃ)
২। প্রচলিত
ভুলঃ উযূর প্রথমে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, অথবা আলহামদুলিল্লাহ অথবা আশহাদু আল্লাইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ
করলে বিসমিল্লাহ পাঠের সুন্নাত আদায় হয়ে যায়। (ফাতোয়ায়ে আলমগিরী, তাজ কোঃ ১/৩০ পৃঃ) তাছাড়া প্রত্যেক অঙ্গ ধোয়ার জন্য পৃথক
পৃথক দু’আর প্রচলন আছে। (বেহেশতী জেওর-১/৯৮,৯৯,১০, ফতোয়ায়ে আলমগীরী তাজ কোঃ ১/৩৪ পৃঃ)
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘‘সে
ব্যক্তির সলাত হয় না, যার উযূ নেই। আর যে ব্যক্তি উযূর সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলে না, তার উযূ হয় না। (সহীহ
মুসলিম ২/৩২,
তিরমিযী-১/২৯ পৃঃ ইফাবা, ইবনে
মাজাহ-১/১৭৯ পৃঃ, আবু দাউদ-১/৫১ পৃঃ, মিশকাত-২/৩৭০) উল্লেখ্য যে, শুরুতে বিসমিল্লাহ ছাড়া মধ্যখানে প্রত্যেক অঙ্গ ধোয়ার কোন
আলাদা দু’আ সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। সুতরাং কেউ তা করলে বিদ’আত হবে।
৩। প্রচলিত
ভুলঃ মাথার এক-চতুর্থাংশ মাসাহ করা ফরয। মুথতাছার
কুদুরী মাদ্রাসার ৯ম ও ১০ম শ্রেণীর পাঠ্য ৮ পৃঃ ফতোয়ায়ে আলমগিরী ২৮ পৃঃ বেহেশতী জেওর ১/৪১ পৃঃ
১৫ নং মাসআলায় মাথার অগ্রভাগ পরিমাণ মাসাহ করা ফরয। (হিদায়া আলমগীরী-৪৫ পৃঃ ১/ ইফবা মাথার সম্মুখভাগ মাসাহ
না করে যদি কোন ব্যক্তি মাথার পেছনের অংশ অথবা ডান বা বাঁদিকে মাথার
মধ্যাংশ মাসাহ করে তবে মাসাহ দুরস্ত হবে। (তাতারখানিয়া’ ফাতোয়ায়ে আলমগীরী-১/৪৫)
৪। প্রচলিত
ভুলঃ উভয় হাতের পৃষ্ঠ দ্বারা ঘাড় মাসাহ করবে। (ফাতওয়ায়ে আলমগীরী ৫১ পৃঃ)
* রাসূল
(সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ ঘাড় মাসাহ করা বিদ’আত। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) হতে ঘাড় মাসাহ
(বিশুদ্ধ সূত্রে) প্রমাণিত নয়। সহীহ্
মুসলিমের ভাষ্যকার ইমাম নাবাবী (রঃ) একে বিদ‘আত বলেছেন। (সহীহ বুখারী তাওঃ প্র. টীকা ১১১ পৃঃ) উল্লেখ্য যে, উযূর শেষে কালিমায়ে শাহাদাত পড়া সুন্নাত। (মুসলিম-২/৩৯)।
৫। প্রচলিত
ভুলঃ আমাদের দেশে প্রচলিত বিভিন্ন কথিত ধর্মীয় পুস্তকে উযূর পূর্বে পাঠ
করার জন্য নিম্নের দু’আটি শেখানো হয়েছে- উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহেল আলিউল আযীম, ওয়ালহামদুলিল্লাহ
আলা দ্বীনেল ইসলাম, আলইসলামু হাক্কুন ওয়াল কুফরি বাতেলুন, ওয়াল
ইসলামু নুরুন ওয়াল কুফরুজুলমাতুন। (মওঃ গোলাম রহমান, মকছুদুল মোমেনীন-১২৭ পৃঃ)
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ দুই নং আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত
হাদীস দ্রষ্টব্য। এছাড়া উল্লিখিত সব বানাওয়াট বা জাল
কথা এর কোন সহীহ্ ভিত্তি নেই। তাছাড়া ‘বেহেস্তি জেওর’ ও
উল্লিখিত ‘মোকছুদুল মোমেনিন’ সহ
বিভিন্ন প্রচলিত পুস্তকে উযূর প্রত্যেক অঙ্গ ধৌত করার সময় পাঠ করার জন্য বিশেষ দু‘আর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন, হাত ধোয়ার, কুল্লি করার, নাক
পরিষ্কার করার ইত্যাদি। অথচ এই দু‘আর কোন সহীহ্ ভিত্তি নেই। যে হাদীসের উপর ভিত্তি করে বলা হয় তার সবই বানোয়াট বা জাল। ইমাম দারাকুতনী, ইমাম
নববী, ইমাম সূযুতী, মোল্লা
আলী, ক্বারী-আল-হানাফী ও অন্যান্য মুহাদ্দীসগণ সকলেই হাদীসটিকে
জাল ও ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেছেন। (নাববী, আল-আযকার ৫৭ পৃঃ,ইবনুল কাইয়েম, আল-মানারুল মুনিফ ১২০ পৃঃ, আল ক্বারী, আল-আসরারুল
মারফূআ ৩৪৫,
গৃহীত, হাদীসের নামে
জালিয়াত ৩৬৪ পৃঃ)
৬। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের দেশে কোন কোন গ্রন্থে লেখা আছে। উযূর
পরে সূরা ক্বদর পাঠ করিলে সিদ্দীকের দরজা হাসিল হইবে। (মওঃ গোলাম রহমান, মোকছুদুল মোমেনীন ১৩২-১৩৩ পৃঃ)
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ ওমর ফারূক (রাঃ) হতে বর্ণিত, রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি পূর্ণভাবে উযূ করবে ও কালেমায়ে ‘শাহাদাতইন’ পাঠ করবে, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দেওয়া হবে। যেটা দিয়ে ইচ্ছা সে প্রবেশ করবে। (সহীহ্ মুসলিম, মিশকাত
হা/২৮৯) এ দু‘আর সাথে তিরমিযী শরীকের বর্ণনায় আরো একটি দু‘আ পাওয়া যায় তা’হলঃ-
উচ্চারণঃ- ‘‘আল্লা-হুম্মাজ আলনী মিনাত্ তাউয়াবীনা ওয়াজ্ ‘আলনী মিনাল মুতাত্বাহিরীন।’’ অর্থ- হে আল্লাহ আপনি আমাকে অধিক তাওবাকারী এবং পাক পবিত্র
লোকদের অন্তর্ভূক্ত করেদিন। (সহীহ্
তিরমিযী-১/৪৯ পৃঃ)
৭। প্রচলিত
ভুলঃ আমাদের সমাজে অনেক মুসল্লিকে দেখা যায় উযূর শেষে উল্লিখিত দু‘আ পাঠ করার সময় আসমানে দিকে
তাকায়। অথচ উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীসটি ‘মুনকার’ বা যঈফ। (আলবানী, ইরাওয়াউল
গালীল-১/১৩৪ পৃঃ)
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ উপরে বর্ণিত শাহাদাতাইন ও তিরমিযী
বর্ণিত দু‘আটি পাঠ করা। আসমানের
দিকে না তাকিয়ে। (সহীহ্ মুসলিম, মিশকাত হা/ ২৮৯, সহীহ্
তিরমিযী-১/৪৯ পৃঃ, হা/৫৫)
৮। প্রচলিত
ভুলঃ ‘‘তায়াম্মুমে দুই হাত মাটিতে মারিবে-প্রথমবার হাত দ্বারা
মুখমন্ডল মুছিয়া নিবে আর দ্বিতীয়বার হাত দ্বারা কনুই সহ দুই হাত মাসাহ করিবে।’’ (কুদুরী-৪২ পৃঃ)
* রাসূল
(সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ আম্মার ইবন ইয়াসার (রাঃ) গোসলের প্রয়োজনে পানি না থাকায়
মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে সলাত আদায় করলে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ‘‘তোমার জন্য তো এটুকুই যথেষ্ট ছিল’’-এ বলে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) দু’হাত মাটিতে মারলেন এবং দু’হাতে ফুঁ দিয়ে তাঁর চেহারা ও উভয় হাত মাসাহ্ করলেন (সহীহুল
বুখারী-১/৩৩৮)। এই হাদীস দ্বারা একবার পবিত্র মাটিতে
হাত মারার কথা প্রমাণিত হয়। অথচ
মাযহাবী বিদ্বানগণ তায়াম্মুমের জন্য দু’বার মাটিতে হাত
মারার কথা উল্লেখ করে থাকেন। ইমাম
বাইহাকী এ রাবীকে দুর্বল বলেছেন। ইমান
নাসঈ ও দারা কুতনী তাকে মাতরুকুল হাদীস বলেছেন। তাছাড়া শরহে বিকায়ার ১ম খন্ডে দু’হাতের কনুই পর্যন্ত মাসাহ্ করার যে পদ্ধতি বর্ণিত আছে তাতো
সহীহ্ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়, কোন কোন কিতাব
আংটি কিংবা চুড়ি থাকলে নাড়িয়ে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এও বলা হয়েছে যে, যদি এক
গাছি লোম পরিমাণ স্থানও হাতে কিংবা মুখে মোছা না যায় তবে তায়াম্মুম হবেনা। এ সকল কথা প্রমাণহীন ও নব-আবিষ্কৃত বিদ’আত। ‘‘মাসাহা বিহিমা ওয়াজহাহু ওয়া কাফফাইহী’’ দ্বারা সঠিক অর্থ মুখমন্ডলও কব্জি মাসাহ্ করলেন যারা এর
দ্বারা কনুই সহ হাত বুঝেছেন তারা ভুল করেছেন। কারণ, কনুই সহ দুই হাতের আরবী হল ‘‘যিরাউন’’ অতএব বুঝা গেল
তায়াম্মুমের সঠিক তরীকা হল একবার পবিত্র মাটিতে হাত মেরে ফুঁ দিয়ে হস্তদ্বয় কব্জি
পর্যন্ত এবং মুখমন্ডল একবার মাসাহ করা।
৯। প্রচলিত
ভুলঃ ইক্বামাত ঠিক আযানের মত, তবে ‘‘হাইয়্যা
আলাল ফালাহ’’-এর পর ‘‘কাদকামাতিস সলাহ’’ দুইবার বলতে হবে। (হিদায়া ইফাবা-১/৬৫ পৃঃ, ফাতাওয়ায়ে
আলমগীরী-১/১১৬ পৃঃ, আল মুখতাছারুল কুদুরী মাদ্রাসার ৯ম-১০ম শ্রেণীর পাঠ্য-৬১
পৃঃ)
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, ‘বিলালকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, সে যেন আযান জোড় অর্থাৎ দুবার দুবার দেয় এবং ইক্বামাত
ক্বাদামাতিস সলাহ ব্যতীত বে-জোড় অর্থাৎ একবার দেয়। (সহীহ বুখারী ১/৮৫ পৃঃ, সহীহ
মুসলিম ১/১৬৪-১৬৫ পৃঃ আবু দাউদ ১/৭৫ পৃঃ)
১০। আযানের
দু’আ প্রচলিত ভুলঃ আমাদের দেশে রেডিও, টিভি
ইত্যাদি প্রচার মাধ্যমে এবং বিভিন্ন ফিকহী গ্রন্থে কিছু অতিরিক্ত শব্দ বলা হয়, যেমনঃ ‘ওয়াদারাজাতির
রাফিয়া’ এবং ‘ইন্নাকালা তুখলিফুল মি‘আদ’ (বেহেশতী জেওর, ২য় খন্ড
১২২ পৃঃ, মাসআলা-৯)
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম -এর পদ্ধতিঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া
সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘‘যে ব্যক্তি আযান শুনে দু’আ করে-আল্লা হুম্মা রববা হা-যিহিদ দা’ওয়াতিত তাম্মাহ, ওয়াছ
ছলা-তিল ক্বা-য়িমাহ, আ-তি মুহাম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়াল
ফাযীলা, ওয়াব‘আছহু মাক্বা-মাম মাহমূদানিল্লাযী ওয়া
আত্ত্বাহ’-
ক্বিয়ামাতের দিন সে আমার শাফা’আদ লাভের অধিকারী হবে।’ (সহীহুল বুখারী হা/৬১৪ পৃঃ ২৯৮) উল্লেখ্য যে, আযানের জওয়াব দান শেষে প্রথমে দরুদ পড়বে অতঃপর দু’আ পাঠ করবে। (সহীহ
মুসলিম, মিশকাত হা/৬৫৭) প্রিন্টেড
১১। প্রচলিত
ভুলঃ ভারত, পাকিস্তান থেকে আগত ব্রেলভীও রেজভী- বিদ‘আতীদের অনুকরণে
আমাদের দেশের এক শ্রেণীর তথাকথিক ধার্মিক মুসলিমদেরকে আযানের ইক্বামতের সময় ‘‘আশহাদু
আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ’’ বাক্যটি
শুনলেই দুই হাতের আঙ্গুলে চুমু খেয়ে তা দিয়ে চোখ মুছেন। এই
মর্মে একটি মিথ্যা ও জাল হাদীসকে সত্য মনে করে তারা এই কাজ করেন বলে
মনে হয়। (তাহের
ফাতনী, তাযকিরাতুল মাউযূয়াত, ৩৬-৩৭ পৃঃ, মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী, আল-আসরার, ১১৩ পৃঃ, হাদীসের
নামে জালিয়াত, ৩৬৬পৃঃ)
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া
সাল্লাম) বলেনঃ ‘‘যে ব্যক্তি খালেস অন্তরে আযানের জবাব
দেয়, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। (সহীহ্ মুসলিম, হা/৩৮৫)
আযানের জবাব হ’ল মুয়ায্যিন যা বলবে তাই বলতে হবে। কেবল মাত্র ‘‘হাইয়্যা
আলাস সাল্লাহ ও ফালাহ’’ এর জবাবে ‘‘লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা-বিল্লাহ’’ বলতে হবে। (সহীহ্
মুসলিম, আবু দাউদ, নাইনুল আউতার ২য়
খন্ড-৫৩ পৃঃ)
১২। প্রচলিত
ভুলঃ আমাদের দেশে ফজরের আযানে ‘‘আস-সালা-তু
খঅয়রুম মিনান নাউম’’ এর জওয়াবে ‘‘সাদ্দাক্বতা ওয়া বারাকতা’’ বলার
কোন সহীহ্ ভিত্তি নেই। অনুরূপভাবে ইক্বামতের সময় ‘‘ক্বাদক্বা-মাতিস সালাহ’’ এর
উত্তরে ‘‘আক্বা-মাহাল্লা-হুওয়া আদা-মাহা’’ বলার সম্পর্কে আবু দাউদে বর্ণিত হাদীসটি যঈফ। (আলবানী, ইরাওয়াউল গালীল-১/২৫৮-৫৯, মিশকাত-হা/
৬৭০)
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ উপরিউল্লিখিতি আযানের যবাবই সুন্নাত। (সহীহ্ মুসলিম, মিশকাত-হা/
৬৫৭ আযানের যওয়াব দান অধ্যায়)
১৩। প্রচলিত
ভুলঃ আমাদের দেশে সাহরীর জন্য সুন্নাতি পদ্ধতি পরিহার করে
বিভিন্ন বিদ‘আতী ও ইয়াহুদী- নাসারাদের অনুকরণে ঢোল, বাঁশি
নিয়ে মধ্যরাত থেকে ডাকা ডাকি শুরু হয়। এবং
মাসজিদ থেকে লাউডস্পিকার ও সাইরেন এর মাধ্যমে অব্যাহতভাবে ও কিছুক্ষণ পর পর
(গজল, নাআত, তাক্বরীর সেহরীর অনুষ্ঠান ইত্যাদির মাধ্যমে) ডাকা হয় যা
সম্পূর্ণরূপে বিদ‘আদ এবং ইবাদরত ব্যক্তি ও পিড়িত লোকজনকে কষ্ট দেওয়া হয় যা
একেবারেই পরিত্যক্ত।
* রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) এর যুগে তাহাজ্জুদ ও
সাহারীর আযান বেলাল (রাঃ) দিতেন, এবং ফজরের আযান
অন্ধ সাহবী আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম (রাঃ) দিতেন। তাই সাহারী প্রসঙ্গে রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)
বলেনঃ‘‘ বেলাল রাত্রি থাকতে আযান দিলে তোমরা খানা পিনা কর, যতক্ষণ না ইবনে উম্মে মাকতূম আযান দেয়। কেননা সে ফজর না হওয়া পর্যন্ত আযান দেয়না। (সহীহ্ বুখারী, সহীহ্
মুসলিম, মিশকাত-হা/ ৬৮০-৮১) তিঁনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)
আরো বলেনঃ ‘‘
বেলালের আযান যেন তোমাদেরকে সাহারী খাওয়া থেকে বিরত না করে। কেননা সে রাত্রি থাকতে আযান দেয় এজন্য যে, যেন তোমাদের তাহাজ্জুদ গোজার মুসল্লীগণ (সাহারীর জন্য) জেগে
ওঠে। (কুতুবে সিত্তাহর সকল গ্রন্থ, তিরমিযী ব্যতীত, নায়ল-২/১১৭)
১৪। প্রচলিত
ভুলঃ আমাদের দেশে গ্রামে ও শহরে কিছু কিছু মাসজিদে আযানের আগে ও
পরে মাইক ‘‘আস-সলাতু আসসালা-মু আলাইকা ইয়া রসূলুল্লাহ’’ বলা হয়। এতদ্ব্যতীত
ঘুমের থেকে জাগার দু‘আ, সময় নিকটে, যিকির গজল, ওয়াজ ও কুরআন তিলাওয়াত, ইস্পিকার খুলেই
আলহামদুলিল্লাহ ইত্যাদি শোনা যায়। অথচ
এগুলি সবই বিদ‘আত এবং আযান ব্যতীত সব কিছুই পরিত্যাজ্য।
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ আযানের পরে পুনরায় ‘‘আস-সলাত’’ ‘‘আস-সলাত’’ বলে ডাকতে হযরত আবদুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) প্রমূখ ‘বিদ‘আত’ বলেছেন। (তিরমিযী, মিশকাত-হা/ ৬১৬ এর টিকা আলবানী, সলাতুর রসূল ৪৫ পৃঃ)। তবে ব্যক্তিগতভাবে যদি কেউ কাউকে সলাতের জন্য ডাকেন জাগিয়ে
দেন, তাতে তিনি অবশ্যই নেকী পাবেন। (সহীহ্ বুখারী-১/৮৩)
১৫। প্রচলিত
ভুলঃ আমাদের সমাজে এক শ্রেণীর মৌলবীগণ ফাতওয়া দিয়ে থাকে যদি কেউ
কোন কারণবশত ফজরের সুন্নাত পড়তে না পারে তা‘হলে সূর্য উঠার
পর পড়তে হবে। (বেহেস্তী জেওর)
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ জামা‘আতের জন্য ইক্বামত হলে ফরয সলাত ব্যতীত অন্য কোন (সুন্নাত
বা নফল) সলাত হবেনা (তিরমিযী, সহীহ্ মুসলিম, মিশকাত-হা/১০৫৬) অতএব ফজরের ইক্বামত হওয়ায় সুন্নাত না পড়ে
আমা‘আতের সাথে ফরয পড়ে নিতে হবে। অতঃপর ফরয শেষ করে (সূর্য ওঠার আগেই) দু’রাক‘আত সুন্নাত পড়ে নিবে। এটাই সুন্নাতি নিয়ম। (তিরমিযী, আবু দাউদ, মিশকাত ৯৭ পৃঃ সহীহ্)
(যদি একান্ত কোন
কারনে ফরজ সালাত শেষ হবার পর সময় না পায় যেমন যদি কারো টয়লেটে গিয়ে সময় পার হয়ে যাওয়া বা
হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যাওয়া বা যা ওজর বলে গন্য শরীয়তের দৃষ্টিতে এমন কারনে
যদি কারো সময় পার হয়ে যায় তাহলে সূর্য উঠার পর তা আদায় করে নিবে। – বাংলা
হাদিস)
১৬। প্রচলিত
ভুলঃ আমাদের সমাজে তাথাকথীত কিছু সংখ্যক নামধারী আহলে হাদীসকে ‘বিসমিল্লাহ’কে সূরা ফাতিহার
অংশ হওয়ার পক্ষে সৌদি আরবের কুরআনের নাম্বারকে দলীল হিসাবে উপস্থাপন করতে
দেখা যায়। অনুরূপ ‘‘জেহেরী’’ অর্থাৎ স্বশব্দে পড়া সলাতে ‘বিসমিল্লাহ’ জোরে
বলার দুর্বল হাদীস দ্বারা দলীল দিতে দেখা যায়। অথচ এর স্বপক্ষে
নির্ভযোগ্য কোন ভিত্তি নেই।
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ বিসমিল্লাহ সূরা ফাতিহার অংশ হওয়ার
স্বপক্ষে কোন সহীহ্ দলীল নেই (নায়ল ৩/৫২ পৃঃ সলাতূর রসূল-৪৯) আনাস বিন মালেক (রাঃ) বলেনঃ ‘‘ আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম), আবু বক্বর, ওমর ও ওসমান
(রাঃ)-এর পিছনে সলাত আদায় করেছি। কিন্তু
তাঁদের কাউকে ‘‘বিসমিল্লাহ’’ জোরে পড়তে শুনিনি।’’ (সহীহ্ মুসলিম, আহমাদ, নায়ল ৩/৩৯, দারাকুতনী-হা/
১১৮৮-৯৫) ইবনু খুযায়মার রেওয়ায়াতে স্পষ্টভাবে এসেছে যে, তারা চুপে চুপে পড়তেন। (সহীহ্ ইবুন খুযায়মাহ-হা/৪৯৪-৭) দারাকুতনী বলেনঃ ‘‘বিসমিল্লাহ’’ জোরে বলার বিষয়ে
কোন হাদীস ‘সহীহ্’ প্রমাণিত হয়নি। (নায়ল-৩/৪৭, ফিকহুয়
সুন্নাহ-১/১০২, স. রসূল-৫০)
১৭। প্রচলিত
ভুলঃ আমাদের সমাজে অনেক মুসল্লিদের ‘তাকবীরে
তাহরীমার’ সময় কানের লতি স্পর্শ করতে দেখা যায়, এবং অনেক কথীত মৌলবীদের সতর্কতা বসত কানে হাত লাগানোর কথা বলতে শুনা যায়।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া
সাল্লাম) হস্তদ্বয়কে কাঁধ বরাবর উঠাতেন। (সহীহ্ বুখারী-২ হা/৬৯৯-৭০০-৭০১-৭০২-৭০৩, সহীহ্ মুসলিম-২ হা/ ৭৪৫-৭৪৬-৭৪৮) আবার কখনও বা কানের লতি
বরাবর উঠাতেন (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, নাসাঈ, সহীহ্
মুসলিম-২/১৪২ হা/৭৪৯-৭৫০)
১৮। প্রচলিত ভুলঃ প্রত্যেক ওয়াক্ত ফজর, যোহর, আছর, মাগরিব, এশা এবং বিত্র, জুমুআ, ঈদ ও অন্যান্য সলাত ফরয, সুন্নাত নফল এর জন্য পৃথক পৃথক আরবী নিয়্যাত পড়া হয়। (বেহেশতী
জেওর ২/১৩০-১৩২ মাসআলা) অনুবাদে বলা হয়েছে ‘তবে বুযুর্গানে দ্বীন আরবী নিয়্যাত পছন্দ করিয়াছেন’ তাই
আরবী নিয়্যাত করিতে পারিলে ভাল। নিম্মে আরবী নিয়্যাত
লিখিয়া দেওয়া হইয়াছে। কিন্তু মূল কিতাবে নিয়্যাত লেখা নাই।
* রাসূল
(সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ কোন জিনিষ সম্পন্ন করার ব্যাপারে মনের দৃঢ় সংকল্প এবং
অন্তরের গভীর ইচ্ছা পোষণ করাকে শরীয়াতের পরিভাষায় নিয়্যাত বলে। আর উহার স্থান হলো-অন্তর বা কলব, এর সাথে মুখে উচ্চারণ করার কোন সম্পর্ক নেই। (ইগাছাতুল লুহফান-১/১৫৬ পৃঃ) সলাতে নিয়্যাত ফরয এবং শর্ত বটে, কিন্তু মৌখিক বলার অবকাশ নেই। মনে মনে খেয়াল করিয়া আল্লাহু আকবার বলিয়া হাত বাঁধিবে, ইহাতে সলাত হইয়া যাইবে। সাধারণের মধ্যে যে লম্বা চওড়া নিয়্যাত মাশহুর আছে, উহা বলার কোন প্রয়োজন নাই। (বেহেশতী জেওর-২/১৩০) হাফেয ইবনে কাইয়িম (রহঃ) লিখিয়াছেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সলাতে
দাঁড়াইতেন,
তখন আল্লাহ আকবার বলিতেন এবং পূর্বে কিছুই বলিতেন না এবং
মুখে কোন নিয়্যাত উচ্চারণ করিতেন না এবং একথাও বলিতেন না যে, আমি অমুক চার রাক’আত সলাত কিবলা
মুখ করিয়া ইমাম অথবা মুক্তাদি হইয়া পড়িতেছি এবং আদা ও কাযা বা কোন ওয়াক্তের নাম
নেন নাই। এইরূপ করা সম্পূর্ণরূপে বিদ’আত। এ ব্যাপারে একটি শব্দও রাসূলে কারীম
(সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) কর্তৃক সহীহ্ সনদে বা যঈফ সনদে অথবা মুরছাল কোন
হাদীসে বর্ণিত হয় নাই বরং এইরূপ কোন কার্য তাহার কোন সাধারণ সাহাবী কর্তৃক বর্ণিত
হয় নাই, এবং এটা একজন তাবেঈনও পছন্দ করেন নাই। এমনকি ইমাম চতুষ্টয়ও মনপুতঃ মনে করেন নাই। (যাদুল মা’আদ ১/৫১ পৃঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহিওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ‘আমলসমূহ নিয়্যাতের উপর নির্ভরশীল, আর প্রত্যেক ব্যক্তি তাই পাবে যা সে নিয়্যাত করবে।’ (১/৪১ সহীহ বুখারী, ৯/৪৬
সহীহ মুসলিম) আল্লামা মোল্লা কারী হানাফী বলেন, রাসূল
(সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) ত্রিশ হাজার সলাত পড়েছেন। তথাপি তাঁর থেকে একথা বর্ণিত নেই যে, আমি অমুক অমুক সলাতের নিয়্যাত করছি। তাঁর এই নিয়্যাত না পড়াটা সুন্নাত। যেমন তাঁর কাজ করা সুন্নাত। (মিশকাত১/৩৭ পৃঃ) তিনি অন্যত্র বলেন, শব্দ উচ্চারণ করে নিয়্যাত করা নাজায়িয। কারণ এটা বিদ’আত। অতএব, যে কাজ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া
সাল্লাম) করেন নি সে কাজ সর্বদা যে করে সে বিদআতী।
১৯। প্রচলিত
ভুলঃ প্রচলিত সলাতে তাকরীরে তাহরীমার পূর্বে মুসাল্লাহ্র দু’আ [জায়নামাজের
দু‘আ] হিসাবে ‘ইন্নি ওয়াজ্জাহাতু’-পড়া হয়।
(রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ কোন সহীহ হাদীসে এইরূপ পড়ার নির্দেশ নাই। সহীহ হাদীসে আছে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)
বলেছেনঃ ‘‘সলাত শুরু হয় তাকবীর তাহরীমা বা আল্লাহু আকবার বলে এবং শেষ
হয় সালামের মাধ্যমে। ‘ইন্নি ওয়াজ্জাহতু’- তাকবীরে তাহরীমার পর (সানা হিসাবে) পড়ার কথা হাদীসে আছে। (সহীহ বুখারী-১/১৩ পৃঃ, সহীহ
মুসলিম-২১৯,
২৬৩, ২৬৪ পৃষ্ঠা, আবু দাউদ ১/১১০ পৃঃ তিরমিযী-২/১৭৯, ১৮০ পৃঃ, নাসাঈ -১/১৪২
পৃঃ, মিশকাত মাদ্রাসার পাঠ্য-২/৭৫৭, ৭৬৪
২০। প্রচলিত
ভুলঃ দাঁড়ানো অবস্থায় উভয় পায়ের মাঝে চার আঙ্গুল পরিমাণ ফাঁকা
রাখা উচিত (খুলাসা, ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী-১৯৪) এজন্যই দেখা যায় প্রচলিত সলাতে
মুক্তাদিগণ কাঁধের সাথে কাঁধ এবং একে অপরের পায়ের সাথে পা মিলিয়ে না
দাঁড়িয়ে বরং ফাঁক ফাঁক হয়ে দাঁড়ান, এটা সহীহ হাদীসের পিরীত। আর
উল্লিখিত মাসআলার অনুসরণে একজনের দু’পায়ের মাঝে, চার আঙ্গুল ফাঁক রাখলে কষ্মিনকালেও অন্যের পায়ের সাথে পা মিলানো
সম্ভব নয়। অথচ ঐ চার আঙ্গুল ফাঁক রাখাটা একটা কিয়াস যা সহীহ্ হাদীসের
বিরোধী।
২১। প্রচলিত
ভুলঃ প্রচলিত সলাতে নারীগণ বুকের উপর এবং পুরুষগণ নাভির নীচে
হাঁত বাঁধে যার কোন বিশুদ্ধ ভিত্তি নাই। এক্ষেত্রে
আহমাদ ও আবু দাউদ বর্ণিত হাদিসটি দলীল হিসাবে পেশ করা হয়। আলী
(রাঃ) বলেনঃ ‘‘সুন্নাত হচ্ছে সলাতে ডান হাতকে বাম হাতের উপর রেখে
নাভীর নীচে রাখা।’’ কিন্তু হাদিসটির সনদ দুর্বল, তাই উহা আমলযোগ্য নয়, তার
বিপরীত সহীহ হাদীস নিম্মে উল্লেখ করা হলো।
* রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ সাহল বিন সা’য়াদ (রাঃ) হতে
বর্ণিত, তিনি বলেনঃ সলাতে লোকদেরকে ডান হাত বাম হাতের বাহুর উপর
স্থাপন করার নির্দেশ দেওয়া হতো। (সহীহ
বুখারী আঃ প্রঃ হা/৬৯৬, সহীহ্ মুসলিম ২/হা/৭৮০, ইফাবা আবু দাউদ ১/হা-৭৫৯।
২২। প্রচলিত
ভুল পদ্ধতিঃ আমাদের সলাতে মুক্তাদিগণ ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা
পাঠ করে না। অথচ সূরা ফাতিহা ছাড়া সলাত হয় না। (মিশকাত মাদ্রাসার পাঠ্য-২/৩৩০ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে
মুক্তাদিদের সূরা ফাতিহা পড়া জায়েজ নয়।)
* রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ‘‘যে ব্যক্তি এমন সলাত পড়ল যাতে সূরা ফাতিহা পড়ে নাই সে সলাত
ত্রুটিপূর্ণ,
ত্রুটিপূর্ণ, ত্রুটিপূর্ণ
তথা অসম্পূর্ণ’’ (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)। রাসূল
(সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) একদা ফজরের সলাত শেষে বলেন, তোমরা কি ইমামের পিছনে পাঠ কর? আমরা বললাম, হাঁ দ্রুত পড়ে
নিই। তিনি বললেন, এরূপ করো না। তবে সূরা ফাতিহা পড়ে নিও। কেননা যে ব্যক্তি এ সূরা পড়বে না তার সলাত হবে না। (আবু দাউদ, তিরমিযী) তিনি
আরো বলেন,
যে ব্যক্তি সলাতে সূরা ফাতিহা পড়ল না তার সলাত হল না। (সহীহ বুখারী ১/১০৪ পৃঃ)
(রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ‘‘তোমরা তোমাদের কাতার সোজা করে নাও। কেননা আমি আমার পিছন দিক থেকেও তোমাদেরকে দেখতে পাই। (রাবী আনাস-রাঃ- বলেন) আমাদের প্রত্যেকেই তার পার্শ্ববর্তী
ব্যক্তির কাঁধের সাথে কাঁধ এবং পায়ের সাথে পা মিলাতাম। (সহীহুল বুখারী) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) আরো
বলেনঃ ‘‘তোমরা তোমাদের কাতার সমূহের মধ্যে পরস্পর ঘাড়সমূহকে সোজা
রাখ। সেই সমহান সত্তার কসম যার হাতে আমরা প্রাণ! শয়তানকে দেখি সে
কাতারের ফাঁক সমূহে প্রবেশ করে যেন কালো ভেড়ার বাচ্চা। (আবু দাউদ, দেখুন সহীহ
বুখারী-১০০ পৃঃ, সহীহ মুসলিম-১৮২ পৃঃ, আবু দাউদ-৯৭ পৃঃ, তিরমিযী-৫৩
পৃঃ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ- ৭১
পৃঃ দারা কুতনী-১/২৮৩ পৃঃ)
২৩। প্রচলিত
ভুলঃ আমাদের দেশে জেহ্রী সলাতে উচ্চৈস্বরে আমীন বলা হয় না, যা নাবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহিওয়া সাল্লাম) ও সাহাবাদের আমলের বিপরীত। বরং
ইমাম ও মুক্তাদির সকলকেই সরবে আমীন বলতে হবে। কেননা
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) জেহ্রী সলাতে উচ্চৈস্বরে আমীন বলতেন এবং
মুক্তাদিদেরও উচ্চৈস্বরে বলার নির্দেশ দিতেন।
* রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ আবু হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) বলেন, ইমাম যখন আমীন বলে তখন তোমরাও আমীন বলো। কেননা যার আমীন বলা ফেরেশতাদের আমীন বলার সাথে মিলে যাবে
তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। তাবেয়ী আতা (রহ) বলেছেন, আমীন
হলো দু’আ। আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রাঃ) এবং তাঁর
পিছনে মুক্তাদিরা আমীন বলতেন। এমনকি
মাসজিদে গুনগুন শব্দ শোনা যেত। (সহীহ
বুখারী) ওয়ায়িল বিন হুজুর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি
বলেনঃ ‘আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) কে ‘‘গায়রিল মাগযূবি আলাইহিম ওয়ালায্যাল্লীন’’ পড়তে শুনেছি। অতঃপর
তিনি নিজের স্বরকে উচ্চ করে আমীন বলেছেন। (তিরমিযী) (বিস্তারিত দেখুন-সহীহ বুখারী ১/১০৭, ১০৮, মুসলিম-১৭৬ পৃঃ, আবু দাউদ- ১৩৪ পৃঃ, তিরমিযী-৫৭,৫৮ পৃঃ নাসাঈ-১৪০ পৃঃ, ইবনু
মাজাহ-৬২ পৃঃ,
মিশকাত-৭৯-৮০ পৃঃ)
২৪। প্রচলিত ভুলঃ অধিকাংশ মুসল্লী শুধুমাত্র তাকবীর তাহরীমা অর্থাৎ সলাত
শুরুর তাকবীর বলার সময় ‘রফউল ইয়াদাঈন’ বা হাত উত্তোলন করে থাকে; কিন্তু
পরবর্তীতে রুকুর আগে ও পরে তা করে না (আবার অনেকে তাকবীরে তাহরীমার সময়ও করে না)-
এটা সুন্নাত বিরোধী।
* রসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ আবদুল্লাহ ইবনে‘উমার (রাঃ) হতে
বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) কে
দেখেছি তিনি যখন সলাতের জন্য দাঁড়াতেন তখন উভয় হাত কাঁধ বরাবর উঠাতেন এবং তিনি যখন
রূকু’র জন্য তাকবীর বলতেন তখনও এরূপ করতেন (হাত উঠাতেন)। আবার যখন রূকু হতে মাথা উঠাতেন তখনও এরূপ করতেন। ইমাম বুখারী এটা বর্ণনা করেছেন। তাঁর অপর বর্ণনায় এটাও আছে যে, যখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) দ্বিতীয় রাক‘আত হতে তৃতীয় রাক‘আতের জন্য
দাঁড়াতেন তখনও দুই হাত (কাঁধ বরাবর) উঠাতেন। (সহীহ বুখারী-১/১০২ পৃঃ, সহীহ
মুসলিম-১৬৮ পৃঃ, আবু দাউদ-১/১০৪, ১০৫ পৃঃ, তিরমিযী-১/৫৯
পৃঃ, নাসাঈ-১৪১-১৫১, ১৬২ পৃঃ, ইবনু খুজাইমাহ-৯৫,৯৬, মিশকাত-৭৫ পৃঃ, ইবনে
মাজাহ-১৬৩ পৃঃ,, যা‘আদুল মা‘আদ-১/১৩৭, ১৩৮, ১৫০ পৃঃ, হিদায়া দিরায়াহা-১১৩-১১৫ পৃঃ, মিশকাত মাদ্রাসার পাঠ্য-২/৭৩৮-৭৩৯, ৭৪৯, ৭৪১, ৭৪৫ পৃঃ, ইসলামিয়াত বি,এ হাদীস পর্ব-১২৬-১২৯ পৃঃ)
উল্লেখ্য যে, দু’হাত তুলা প্রসঙ্গে কিছু লোক সহীহ হাদীসের উপর আমল না করার
জন্য ভান করে মিথ্যা ও বানোয়াট কথার আশ্রয় নিয়ে বলে যে, ইসলামের প্রথম যুগে পুতুল পুজারী নও মুসলিমরা সলাতের সময়ও
বগলে পুতুল নিয়ে আসতো। তাই নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া
সাল্লাম) তাদেরকে রুকুতে যাবার ও রুকু হতে মাথা তোলার সময় দু’হাত তুলতে বলেছিলেন। এসব কথা কোন হাদীসে তো দূরের কথা এমনকি ইতিহাসেও প্রমাণহীন। বরং তা ভিত্তিহীন মিথ্যা ছাড়া কিছুই নয়। যারা এসব কথা বলে তাদের ভয় করা উচিৎ যে, এই মিথ্যা অপবাদটি স্বয়ং রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া
সাল্লাম) এর উপর ও তাঁর সাহাবীদের উপর পড়ে (নাউযুবিল্লাহ) কারণ তাঁরা মৃত্যুর
পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত রুকুর পূর্বেও পরে হস্তদ্বয় উত্তোলন করেছেন। (বায়হাকী, তালখীসুল হাবীব
৮১ পৃঃ আদদেরায়াহ-৮৫ পৃঃ) সাবধান! এ অপবাদই জাহান্নামী হওয়ার জন্য যথেষ্ট। এই মর্মে আবু দাউদে বর্ণিত যা সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ
(রা.) বলেনঃ তিনি (স.) কেবলমাত্র তাকবীরে তাহরীমার সময় ১ বার দু’হাত তুলতেন। (আবু
দাউদ, মিশকাত, ৭৭ পৃঃ) কিন্তু
এ হাদীস সম্পর্কে ইমাম আবু দাউদ (রহঃ.) নিজেই বলেন, হাদীসটি সহীহ নয় (মিশকাত ৭৭ পৃঃ) মোল্লা আলী ক্বারী আল
হানাফী (রহঃ) বলেনঃ সলাতের রুকুতে যাবার সময় এবং রুকু হতে উঠার সময় দু’হাত না তুলা সম্পর্কে যেসব হাদীস বর্ণিত হয়েছে সেগুলো সবই
বাতিল হাদীস। তন্মধ্যে একটিও সহীহ নয়- যেমন ইবনে
মাসুদের (রা.) হাদীস। (মাউযুআতে কাবীর
১১০ পৃঃ আইনী তুহফা-১/১৩১ পৃঃ) লক্ষনীয় যে, হানাফী
মাযহাবের বিশিষ্ট মুহাদ্দীস আল্লামাহ আইনী আল-হানাফী (রহঃ) রুকুতে যাওয়ার আগে দু’হাত তুলার ব্যাপারে ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) সম্পর্কে
লিখেছেনঃ ইমাম আবু হানীফা হতে বর্ণিত যে, তা
অর্থাৎ রফউল ইয়াদাইন ত্যাগ করলে গুনাহ হবে। (ওমদাতুল ক্বারী-দারুল ফিকর ছাফা, ৫/২৭ পৃঃ আইনী তুহফা-১/১৩১ পৃঃ) অতএব প্রতিটি মুসলিমের
প্রতি আমার অনুরোধ আল্লাহকে ভয় করুন, গোড়ামী
ও মিথ্যার আশ্রয় বাদ দিয়ে সহীহ হাদীসের উপর আমল করুন। কারণ ইমাম আবু হানীফা (রহ.) বলেছেন, ‘সহীহ হাদীস পেলে সেটাই আমার মাযহাব বলে গণ্য করবে।’
২৫। প্রচলিত ভুলঃ প্রচলিত সলাতের প্রথম ও তৃতীয় রাক‘আতে অর্থাৎ
বেজোড় রাক‘আতে সাজদাহ্ হতে উঠে ‘না বসে’ সোজা দাঁড়িয়ে যাওয়া হয়। এটা
সুন্নাত বিরোধী। ‘দাঁড়াইবার সময় বসিবেনা এবং হাত দিয়া মাটিতে ভর করিয়া দাঁড়াইবে না।’ (কুদুরী-৬৬ পৃঃ)
* রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ মালিক ইবন হয়াইরিস আল-লাইসা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) কে সলাত পড়তে
দেখেছেন। যখন তিনি তাঁকে সলাতে বেজোড় রাক‘আতে (সাজদাহ্ হতে) দাঁড়াতেন তখন তিনি সোজা না বসে দাঁড়াতেন
না। (সহীহ বুখারী-১/১১৩ পৃঃ, আবু
দাউদ ১১১,
১১২ পৃঃ, নাসাঈ-১৭৩ পৃঃ, ইবনু মাজাহ-২৬৪ পৃঃ, মিশকাত-৭৫
পৃঃ, তিরমিযী ই.ফা.বা.-১-হা/৭৬৯)
২৬। প্রচলিত
ভুলঃ আমাদের দেশে অধিকাংশ ইমাম, মুক্তাদি দু’সাজদাহ্র মাঝে বসে কোন দু’আ পড়েন না, এটা
সুন্নাত বিরোধী।
* রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ দুই সাজদাহর মাঝখানে বসে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া
সাল্লাম) এই দু’আটি পাঠ করতেনঃ‘ আল্লাহুম্মাগাফিরলী আয়ারহামনি ওয়াহদিনি ওয়া’আফিনী ওয়ারযুক্নী’ (সহীহ
বুখারী)
২৭। প্রচলিত
ভুলঃ দন্ডায়মান এবং বসাঅবস্থায় পিঠ সোজা না রাখা যেমন পিঠ কুঁজো
করে রাখা বা ডানে-বামে হেলে থাকা। অনুরূপভাবে
রুকু’ ও সাজদাহা্য় পিঠ সোজা না রাখা।
* রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ রাসুলুল্লাহ্ (স) বলেন ‘‘যে
ব্যক্তি রুকূ-সাজদায় পিঠ সোজা করে না, আল্লাহ
তার সলাতের দিক দৃষ্টিপাত করবেন না।’’ (তাববারানী
সহীহ সনদে) তিনি আরো বলেন, ‘অতিম্মুর রুকূ ওয়াস্সুজুদ’ অর্থাৎ তোমরা রুকূ ও সাজদাহ পরিপূর্ণরূপে আদায় কর। (সহীহ বুখারী, সহীহ
মুসলিম)
২৮। প্রচলিত
ভুলঃ রুকূ অবস্থায় প্রশান্তি ও ধীরস্থিরতা অবলম্বন না করা। দেখা
যায় অনেকে তাড়াহুড়া করে সলাত আদায় করতে গিয়ে ভালভাবে রুকূ-সাজদাহ্ করে না, রুকূর
সময় পিঠ সোজা না করে মাথাটা একটু নীচু করে। মোরগের
মত করে সাজদাহ্ করে। অথচ এভাবে সলাত আদায়কারীকে নিকৃষ্ট চোর বলা হয়েছে। আর তার
সলাতও বিশুদ্ধ হবে না।
* রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ হুযাইফা (রাঃ) দেখলেন জনৈক ব্যক্তি অপূর্ণরূপে রুকূ-সাজদাহ্
করছে। তিনি তাকে বললেন, তুমি তো
সলাত আদায় করোনি। তুমি যদি এ অবস্থায় মৃত্যুবরণ কর, তবে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-কে
আল্লাহ্তা’আলা যে ফিতরাত (বা ইসলাম) দিয়ে প্রেরণ করেছেন, তুমি তা ভিন্ন অন্য ফিতরাতের উপর মৃত্যুবরণ করবে। (সহীহ বুখারী, সহীহ
মুসলিম)। আবু হুরাইরা (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহিওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি
দেখলেন, এক ব্যক্তি মাসজিদে নববীতে প্রবেশ করে সলাত আদায় করল। তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, তুমি ফিরে গিয়ে সলাত আদায় কর, কেননা তুমি সলাত আদায় করোনি। এইভাবে লোকটি তিনবার আদায় করল ও রসূল (স) তাকে তিনবার
ফিরিয়ে দিলেন,
তখন লোকটি বলল, হে
রসূল! আমাকে সলাত শিখিয়ে দিন…. (অতঃপর তিনি তাকে
ধীরে সুস্থ্যে সলাত আদায় শিক্ষা দিলেন)। (সহীহ বুখারী, সহীহ
মুসলিম, মিশকাত হা/৭৯০)
২৯। প্রচলিত
ভুলঃ প্রচলিত সলাতে মুসল্লীদের দেখা যায় সাজদাহ্র স্থানে দৃষ্টি
না রেখে আকাশের দিকে দৃষ্টি বা অন্য দিকে দৃষ্টিপাত করতে, যা
সুন্নাত বিরোধী। অথচ দৃষ্টি নত রাখা এবং সার্বক্ষণিক দৃষ্টি সাজদাহ্র স্থানে রাখার জন্য
নির্দেশ রয়েছে। তবে তাশহদ অবস্থায় ডান হাতের তর্জনী খাড়া রেখে তা নাড়াতে
হবে এবং তার উপর দৃষ্টি রাখতে হবে।
* রসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘‘কি হয়েছে কিছু লোকের যে, তারা
সলাতরত অবস্থায় আকাশের দিকে দৃষ্টিপাত করে? তার পর
তিনি কঠোর শব্দ ব্যবহার করে বলেন, ‘‘তারা এথেকে বিরত
হবে; অন্যথায় তাদের দৃষ্টিশক্তি ছিনিয়ে নেওয়া হবে।’’ (সহীহ বুখারী, সহীহ
মুসলিম) সলাত অবস্থায় ডানে-বামে দৃষ্টিপাতের ব্যাপারে নাবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহিওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘‘এটা হচ্ছে বান্দাহর সলাত থেকে কিছু অংশ শয়তানের ছিনিয়ে
নেওয়া।’’ (সহীহ বুখারী)
৩০। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের দেশে সলাত বৈঠকে অর্থাৎ ‘তাশহদ’ পড়ার
সময় ‘আশহাদু আল্লা ইলাহা’ বলার সঙ্গে সঙ্গে শাহাদাত আঙ্গুল উঠিয়ে আবার ইল্লাল্লাহু বলে টুপ
করে নামিয়ে ফেলা হয়। এরূপ
করার কথা কোন হাদীসেই বলা হয়নি।
* রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ তাশহ্হুদ বা আত্তাহিয়্যাতু পড়া শুরু থেকে বৈঠকের শেষ
পর্যন্ত উক্ত আঙ্গুল উঠিয়ে রাখতে হবে এবং নাড়াতে হবে। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) বাম হাতের তালু বাম
হাঁটুর উপর বিছিয়ে দিতেন, আর ডান হাতের সবগুলো আঙ্গুল
মুষ্টিবদ্ধ করে তর্জনী দ্বারা কিবলার দিকে ইঙ্গিত করতেন এবং সেদিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ
করতেন।’ (সহীহ মুসলিম-১৬২ পৃঃ, আবু
দাউদ-১৪২ পৃঃ,
নাসাঈ-১৮৭ পৃঃ, মিশকাত-৮৫
পৃঃ, ইসলামিয়াত-বি,এ হাদীস পর্ব
১৯১, ১৯২ পৃঃ)
৩১। প্রচলিত ভুলঃ তাকবীর তিলাওয়াত ও সলাতের অন্যান্য দু’আর সময় ঠোঁট না
নাড়িয়ে শুধু মনে মনে বলা-এটি একটি বহুল প্রচিলত ভুল।
* রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ বিশুদ্ধ পদ্ধতি হলো ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, ইমাম ছাড়া অন্য সবার জন্য সুন্নাত হচ্ছে চুপে চুপে পাঠ করা। চুপে চুপে বলার সর্বনিম্ন সীমা হচ্ছে নিজেকে শোনানো- যদি
তার শ্রবণশক্তি ঠিক থাকে এবং কথায় কোন জড়তা না থাকে। এ বিধান সকল ক্ষেত্রে’ ক্বিরাত
পাঠ, তাকবীর, রুকূ সাজদাহর
তাসবীহ্ প্রভৃতি।’ তাছাড়া ঠোঁট না নাড়ালে তো তাকে পড়া
বলা চলে না। কারণ, আরবীতে এমন অনেক অক্ষর আছে ঠোঁট না নাড়ালে যার উচ্চারণই হবে
না (কিন্তু নিয়্যাত এর ক্ষেত্রে এর বিপরীত)।
৩২। প্রচিলত ভুলঃ তাশাহ্হুদে বসে দরূদ পাঠ করার সময় অনেক সুফিদের শোনা যায়
(সাইয়েদেনা) শব্দ বৃদ্ধি করে পাঠ করতে। (মোকছুদুল মোমেনীন বেহেস্তের কুণ্জী-৩১৬-১৭)
* রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ হাফেয ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন, ‘দু’আ যিকিরের ক্ষেত্রে হাদীসে প্রমাণিত
শব্দাবলী উচ্চারণ করাই সুন্নাতসম্মত।’ তাছাড়া
কোন সহীহ্ হাদীস, সাহাবী বা তাবেঈদের আমল থেকে এর কোন
প্রমাণ নেই।
৩৩। প্রচলিত ভুলঃ শেষ বৈঠকে তাশাহ্হুদে ‘তাওয়াররুক’ না করাঃ অধিকাংশ মুসল্লী সব ধরণের তাশাহ্হুদে বসে
ইফতেরাশ করে। (তাওয়াররুক হচ্ছে, ডান পা খাড়া রেখে বাম পা-কে ডান পায়ের নীচে
দিয়ে সামনের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে নিতম্বের উপর বসা।)
* রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ আবু হুমাইদ সায়িদী (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) যখন দু’ রাক’আতে বসতেন (অর্থাৎ মাঝখানে বৈঠকে) তখন
বাম পায়ের উপর বসতেন, ডান পা খাড়া রাখতেন। আর যখন শেষ রাক’আতে বসতেন তখন বাম পা (ডান পায়ের নীচে দিয়ে) সামনের দিকে বাড়িয়ে দিতেন
এবং ডান পা খাড়া করতেন তারপর নিতস্বের বা উরুর উপর বসতেন। (সহীহ বুখারী-১/১১৪ পৃঃ, সহীহ
মুসলিম-১/১৪ পৃঃ, আবু দাউদ-১/১৩৮ পৃঃ, তিরমিযী-৩৮, ৩৯ পৃঃ
নাসাঈ-১৭৩ পৃঃ, ইবনু মাজাহ-১৮৭ পৃঃ, মিশকাত মাদ্রাসার পাঠ্য হা/ ৭৩৬, ৭৪৫)
৩৪। প্রচলিত ভুলঃ বিতর সলাতে দু’আ-ই কুনূত পড়িবার পূর্বে তাকবীর বলিয়া হাত উঠাইবে তৎপর দু’আ পড়িবে
(কুদুরী-৬৮ পৃঃ) এর কোন প্রমাণ সহীহ হাদীসে নেই।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ ‘‘নাবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) সলাতের প্রথম তাকবীরের মতো ইসতিসকা ব্যতীত অন্য
কোন দু‘আয় কাঁধ বরাবর হস্তদ্বয় উঠাতেন না। (নাসাঈ-২/৪১৬ পৃঃ)
৩৫। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের দেশে শুধুমাত্র তিন রাক’আত বিতর সলাতকে
সীমাবদ্ধ ধরা হয় (হিদায়া-ই.ফা.বা-১/১১৮ পৃঃ) অথচ তা সহীহ নয়। কারণ
সহীহ হাদীস দ্বারা এক থেকে নয় রাক’আত পর্যন্ত বিতর সলাত সাব্যস্ত আর এক দল তথাকথিত মৌলবীরা তো
এক রাক’আত সলাত
স্বীকারই করে না।
* রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ বিতর অর্থ বে-জোড়। রাতের সলাতকে বে-জোড় করার জন্য বিত্র পড়া হয়। বিতরকে আল্লাহ পছন্দ করেন, কেননা আল্লাহ বিত্র। আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেনঃ
রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেনঃ ‘‘ আল বিতরু রাকাআতুন মিন আখিরিল লাইলি।’’ বিত্র হ’ল এক রাক’আত রাতের শেষাংশে (সহীহ্ মুসলিম)। তাছাড়া এক, তিন, পাঁচ, সাত, নয়, রাক’আত ও বিত্র পড়া যায় (দেখুন সহীহ বুখারী-১৩৫, ১৫৩ পৃঃ, সহীহ মুসলিম-২৫৩, ২৫৪, ২৫৫, ২৫৬ পৃঃ, আবু দাউদ-২০১
পৃঃ, নাসাঈ-২৪৬, ২৪৭ পৃঃ, তিরমিযী-১/১০৬ পৃঃ, মিশকাত
মাদ্রাসার পাঠ্য- ২/ হা/১১৮৫, ২২৮৬, ১১৯৬ পৃঃ, রায়হাকী-৩/৪১-৪৩
পৃঃ)
* রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া
সাল্লাম) উযূতে সম্পূর্ণ মাথা মাসাহ করতেন। যেহেতু আল্লাহ্ তা’আলা বলেছেনঃ ‘‘ওয়ামছাহু বিরুউসিকুম’’, অর্থাৎ
তোমাদের মাথা সমূহ মাসাহ কর। (আল-মায়েদাঃ
৬) তার পর দু’হাত দিয়ে মাথা মাসাহ করলেন। অর্থাৎ হাত দু’টি সামনে এবং
পেছনে নিলেন। মাথার সম্মুখভাগ থেকে শুরু করে উভয়
হাত পেছনের চুলের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত নিলেন। তারপর আবার যেখান থেকে শুরু করেছিলেন, সেখানেই ফিরিয়ে আনলেন। (সহীহুল বুখারী ১/১৮৫, মুসলিম
১৮৬, ১৯১, ১৯২, ১৯৭, ১৯৯, ২/৭, ২৩৫, আহমাদ ১৪৪৫)
৩৬। প্রচলিত ভুলঃ বিত্র সলাতে প্রচলিত দু‘আ যথা ‘আল্লাহুম্মা
ইন্নানাস্তাঈনুকা’ আমরা সহীহ সূত্রে পাই নাই বরং সেটা মুরসাল বা যঈফ (বাইহাক্বী-২/২১১)
* রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ হাসান বিন আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ ‘আমার মাতামহ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) আমাকে কিছু কথা শিখিয়েছেন, যা আমি বিতরের সলাতে কুনূতে পাঠ করি তা
হল-আল্লা-হুম্মাহদিনী ফিমান হাদাইতা….. তাবারাকতা
রববানা ওয়াতা আ-লাইতা, লা-মানজা নিকা ইল্লা-ইলাইকা। (তিরমিযী-১/৪২৯, ইবনু
মাজাহ-২/৪৬০,
নাসাঈ-২/২৯৯) কিন্তু নাসাঈতে কুনুতের শেষে এই বর্ধিত অংশ
উল্লেখ রয়েছেঃ ‘‘ওয়া সাল্লাল্লাহু আলান্নাবিইয়ি’’ যার প্রচলন আহলে হাদীসদের কিছু লোকের মধ্যে দেখা যায়। অথচ এর সনদ যঈফ। একে যঈফ
বলেছেন হাফিয ইবনু হাজার, কাসত্বলানী, যরক্বানী ও অন্যান্যগণ এজন্যই বর্ধিত অংশ বলা। একত্রিত করার ক্ষেত্রে আমাদের রীতি অনুযায়ী এখানে তা উল্লেখ
করলাম না। (শাইখ আল-আলবানী
রহিমাল্লাহ)
৩৭। প্রচলিত ভুলঃ ফরয সলাতের ইক্বামাতের পর নফল পড়া মাকরুহ। কিন্তু
ফজরের বিষয়টি এর থেকে ব্যতিক্রম। যদি
জামাআত সম্পূর্ণ ছুটে যাবার আশংকা না থাকে তবে ইক্বামাতের পরও ফজরের সুন্নাত
জায়িয। (ফাতওয়ায়ে
আলমগীরী-১৪৮ পৃঃ)
* রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ অথচ বুখারীতে একটি অধ্যায়ে রচিত হয়েছে-ইকামাত হয়ে গেলে ফরয
ব্যতীত অন্য কোন সলাত নেই। এই অধ্যায়ে যে হাদীসটি এসেছে তা হলো
রাসূলুল্লাহ (স) ফজরে (সলাতে) এক ব্যক্তিকে ইক্বামাত হয়ে যাবার পর দু’রাক’আত সলাত আদায় করতে দেখলেন। অতঃপর ফরয সলাত শেষে উক্ত ব্যক্তিকে বললেন ফজর কি চার রাক’আত? এ কথা দু’বার বললেন। (সহীহ
বুখারী, তাওহীদ-১/২১/৬৬৩) অথচ আমাদের দেশের মৌলবীরা বলেন ফজরের দু’রাক’আত সুন্নাতের গুরুত্ব অনেক বেশী তাই
এর অনুমতি আছে। তাদের নিকট প্রশ্ন হল-গুরুত্বটা কি
ফরয সলাতের চেয়েও বেশী? অথচ ফজর বা অন্য কোন ফরয সলাতের
জামাআত শুরু হবার পর কেউ মাসজিদে এলে অথবা কেউ সুন্নাত পড়া অবস্থায় থাকলে তাকে
সুন্নাত ছেড়ে দিয়ে জামাআতে শরীক হতে হবে। ইক্বামাতের পর সুন্নাত সলাত পড়া বৈধ নয়। আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল
(সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘‘যখন
জামাআতের জন্য ইক্বামাত দেওয়া হয় তখন ফরয ব্যতীত অন্য কোন সলাত নেই। বায়হাকীর বর্ণনায় আছে, রাসূল
(সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) কে বলা হ’ল ফজরের সুন্নাত
দু’রাক’আতও পড়া যাবে না? রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ফজরের দু
রাক’আতও পড়া যাবে না। (সহীহ বুখারী-২/১২১ পৃঃ, সহীহ
মুসলিম-১/২৪৭ পৃঃ, আবু দাউদ-১/১৮১ পৃঃ, তিরমিযী-১/৯৬ পৃঃ, নাসাঈ-১৩৮, ১৩৯ পৃঃ)
৩৮। প্রচলিত ভুলঃ সাজদাহ্র সময় মাটিতে বা মুসাল্লায় হাত বিছিয়ে দেওয়া যা
আমাদের দেশের নারীগণ (অধিক পর্দার কারণে) করে থাকে অথচ তা ‘‘সহীহ
হাদীসের খেলাফ সাজদাহর সময় জড়ো সড়ো হইয়া সাজদাহ করিতে হইবে। তখন
বাহুদ্বয় শরীরের সহীত, পেট রানের সহীত, রান হাঁটুর নলার সহীত এবং হাঁটুর নলা যায়নামাযের সহীত মিলাইয়া রাখিতে হইবে। অর্থাৎ
মহিলাদের সাজদাহ্র সময় একমাত্র মস্তক ব্যতীত সর্ব শরীরের অঙ্গ
সমূহ একত্রে মিলাইয়া সাজদাহ্ করিতে হইবে।’’ (মোকছুদুল মোমেনীন-১৭৫)
* রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ‘‘ সাজদায় (অঙ্গ প্রত্যঙ্গের) সামাঞ্জস্য রক্ষা কর এবং তোমাদের
মধ্যে কেউ যেন দু’হাত বিছিয়ে না দেয় যেমন কুকুর বিছিয়ে
দেয়। (সহীহ বুখারী-ই.ফা.বা-২/ হা/৭৮৪) অনুরূপভাবে সাজদাহর সময় দু’বাহু পার্শ্বদেশ থেকে পৃথক রাখতে হবেঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহিওয়া সাল্লাম) যখন সলাত আদায় করতেন, তখন উভয়
হাত (সাজদাহর মধ্যে) এরূপ করতেন যে, তাঁর
উভয় বগলের শুভ্রতা প্রকাশ হয়ে পড়ত। (সহীহ্
বুখারী-ই.ফা.বা-২/হা/৭৭০)
৩৯। প্রচলিত ভুলঃ ফজরের সলাত বিলম্বে আদায় করা মুস্তাহাব। (ফাতওয়ায়ে আলমগীরী-১৪৫ পৃঃ)
* রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ ‘‘মহিলাগণ
সর্বাঙ্গ চাদর ঢেকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) এর সাথে ফজরের
জামাআতে হাযির হতেন। তারপর সলাত আদায় করে তারা যার যার ঘরে
ফিরে যেতেন। আঁধারে কেউ তাদের চিনতে পারত না। সহীহ্ বুখারী-২/হা/৫৫১ আবছা আঁধারে যখন নাবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহিওয়া সাল্লাম) ও সাহাবায়ে কেরাম ফজরের সলাত সম্পন্ন করতেন তখন বিলম্বে অর্থাৎ
ভোরের আলো প্রকাশিত হবার পর তা আদায় করা মুস্তাহাব বলার কোন এখতিয়ার থাকে কি?
৪০। প্রচলিত ভুলঃ কোন ব্যক্তি ইক্বামাতের সময় মাসজিদে প্রবেশ করলে তার জন্য
দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করা মাকরুহ। বসে
যাবে। পরে মুয়াযযিনের হাইয়্যা আ’লাল ফালাহ বলার
সময় দাঁড়াবে। (মুযমারাত) (ফাতওয়ায়ে আলমগীরী-১৫৭)
* রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ ইক্বামাতের সময় এবং এর পরে কাতার সোজা
করা নামে সহীহ বুখারীতে একটি অনুচ্ছেদ রচিত হয়েছে। (অনুচ্ছেদ নং-৪৬৩, বুখারী
২য় খন্ড-৯৫ ই.ফা.বা) ঐ অধ্যায়ে ৬৮৪ নং হাদীসে বর্ণিত আছে- ইক্বামাত হচ্ছে এমন সময়
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) আমাদের দিকে মুখ করে তাকালেন এবং
বললেনঃ ‘‘তোমাদের কাতারগুলো সোজা করে নাও আর মিলে দাঁড়াও কেননা আমি
আমার পেছনের দিক থকেও তোমাদের দেখতে পাই। তাহলে ইক্বামাত বলার পূর্বেই তো কাতার সোজা করা নিয়ম আর
ইক্বামাতের পরও ইমাম সাহেব দেখবেন যে কাতার সোজা হল কিনা।
৪১। প্রচলিত ভুলঃ কাদ্কামাতিস সলাহ্ বলার সামান্য পূর্বে ইমাম
তাকবীর বলবে (ফাতওয়ায়ে আলমগীরী-১৫৭)
* রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রোগের
কারণে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) তিনদিন পর্যন্ত ঘরের বাইরে আসেন নি। এসময় একবার সলাতের ইক্বামাত দেওয়া হলে। আবু বক্বর (রাঃ) ইমামতির জন্য অগ্রসর হচ্ছিলেন। এমন সময় নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) ঘরের পর্দা
ধরে উঠলেন।….তিনি হাতের ইশারায় আবু বক্বর (রাঃ)-কে
ইমামতির জন্য ইশারা করলেন ও পর্দা ফেলে দিলেন। (সহীহ বুখারী-২/হা/৬৪৭) এই হাদীসে ইক্বামাত শেষ হবার পরই আবু
বক্বর (রাঃ) ইমামতির জন্য অগ্রসর হবার কথা বর্ণিত। উপরন্তু ইমাম মুক্তাদী সকলকেতো ইক্বামাতেরও জবাব দিতে হয়। তাহলে কাদ্কামাতিস সলাহ্ বলার সাথে সাথে ইমাম তাকবীর বললে
বাকী শব্দগুলোর জবাব তিনি কখন দিবেন? মুক্তাদীরা
তাকবীর শেষ হবার পর ইমামকে অনুসরণ করে সলাত শরু করবে না মুয়ায্যিনের ইক্বামাতের
অবশিষ্ট কালিমাগুলো শুনে জবাব দিয়ে তারপর সলাত শুরু করবে? এর মধ্যে তো ইমামের সানা শেষ হয়ে কিরআত শুরু হয়ে যাবে। তাহলে মুক্তাদিরা কখন সানা পড়বে? এসব হাদীস বিরোধী ফাতওয়ার কি কোন প্রয়োজন ছিল? না এসব ফাতওয়া প্রদান করে হাদীসকে উপেক্ষা করে সলাতে বিদ’আত ঢুকানো হয়েছে?
৪২। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের দেশে পুরুষ ও মহিলাদের সলাতের মধ্যে
পার্থক্য দেখা যায়। অথচ এটা সহীহ্ হাদীস পরিপন্থী বিদ‘আত।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া
সাল্লাম) পুরুষ ও মহিলালে সলাতে কোন পার্থক্য বর্ণনা করতেন না। বরং (মহিলা সাহাবী) উম্মু দারদা (রাঃ) বলেনঃ‘‘ আমরা পুরুষদের মতই সলাতে বসতাম (অর্থাৎ পুরুষের মত সলাত
আদায় করতেন) অথচ তিনি ছিলেন ফকীহা বা দ্বীন সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞানী। কিন্তু লোকেরা পুরুষ-মহিলার সলাতে পার্থক্য বর্ণনা করে থাকে
(সহীহ্ বুখারী-১/৩৫৫) আল্লামা আইনী হানাফী, উম্মু
দারদা (রাঃ) এর উক্ত রেওয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেন, ‘মহিলাদের
জন্যও পুরুষদের ন্যায় বসা মুস্তাহাব। আর তা
হল, ডান পা খাড়া রাখবে এবং বাম পা বিছিয়ে রাখবে। এটাই ইমাম নাসাঈ, ইমাম
আবু হানীফা এবং ইমাম মালিক রাহিমাল্লাহুগণের উক্তি। (আইনী ৩/১৬৫)
৪৩। প্রচলিত ভুলঃ মাহিলাদের জন্য জাম’আতে শরীক হওয়া
মাকরূহ। (ফাতওয়ায়ে
আলমগীরী- ২২৭)
* রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) এর যুগে নারীগণ
মাসজিদে জাম’আতে উপস্থিত হয়ে সলাত আদায় করতেন-আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) ফজরের সলাত আদায় করতেন আর তার সঙ্গে অনেক মুমিনা
মহিলা চাদর দিয়ে গা ঢেকে শরীক হত। অতঃপর
তারা নিজ নিজ ঘরে ফিরে যেত আর তাদেরকে কেউ চিনতে পারত না। (সহীহ্ বুখারী-১/হা/৮১৫-৮২৪ ই.ফা.বা, তিরমিযী-১/৫৩২ পৃঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) মহিলাদের জামাআতে শরীক
হওয়ার অনুমতি দিবার পর কেউ যদি তা রহিত করে সেটা কি ওহীর বিরুদ্ধাচারণ করা হলো না? ফিতনার যুগের অজুহাত পেশ করে মাসজিদে যেতে নিষেধের ফাতওয়া
দেওয়া হয়,
আর হাট-বাজার, মার্কেট, ক্ষেত-খামার, রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, কোর্ট-কাচারি, অফিস-আদালত
এমনকি মন্ত্রী হয়ে বেপর্দায় বিদেশে ঘুরে বেড়ালেও আপত্তি থাকেনা। এমনটি তো আশ্চর্য ব্যাপার। অথচ মাসজিদে পৃথকভাবে পর্দার সাথে সর্বাঙ্গ ঢেকে আল্লাহর
ইবাদতে শামিল হওয়া তো সব থেকে নিরাপদ। ফিতনা-ফাসাদ
মুক্ত মাসজিদ তো দুনিয়ার সব থেকে নিরাপদ স্থান। সেখানে আল্লাহর বান্দীরা প্রবেশ করলে কেন ফিতনার কারণ বা
আশংকা হবে?
অথচ যেখানে শয়তানের পদচারণা সেই মার্কেট আর বাজারে নারীর
আহবান উচ্চ কন্ঠে। এখানেই তো ফাতওয়া জোরদার হওয়া উচিৎ
ছিল। আল্লাহর বিধান ও রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর
পদ্ধতির উপর হস্তক্ষেপ আদৌ কল্যাণকর নয় বরং বিপজ্জনক। আমার বুঝে আসে না, নারীরা
তাদের অধিকার আদায়ে যখন সোচ্চার তখন এই মৌলিক অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে নিশ্চুপ কেন?
৪৪। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের দেশে অধিকাংশ মুসল্লীকে দেখা যায় মাসজিদে গিয়ে
প্রথমে বসেন অতঃপর দাঁড়িয়ে সুন্নাত বা নফল সলাত আদায় করেন। অথচ এটা
সহীহ্ হাদীসের পরিপন্থী এবং বসাই যাবেনা দু’রাক’আত আদায় ব্যতীত।
* রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘‘তোমাদের মধ্যে কেউ যখন মাসজিদে প্রবেশ করে যতক্ষণ পর্যন্ত
দু’রাক’আত সলাত না পড়ে ততক্ষণ পর্যন্ত যেন না
বসে। অন্য বর্ণনায় তিনি বলেনঃ ‘‘যখন তোমাদের মধ্যে কেউ মাসজিদে প্রবেশ করে, সে যেন বসার পূর্বে দু’রাক‘আত সলাত পড়ে (সহীহ্ বুখারী-১/৬৩, ১৫৬ পৃঃ)। লাল
বাতি জ্বলা অবস্থায় সলাত পড়া নিষেধ-তাহলে একজন লোক মাসজিদে প্রবেশ করে যদি দেখে
লাল বাতি জ্বলছে তাবে সে উপরে বর্ণিত সহীহ্ হাদীসের নির্দেশ অনুযায়ী দু’রাক‘আত সলাত পড়বে না লাল বাতির নির্দেশ
মানবে? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) এর নির্দেশ
পালন করা কর্তব্য না ব্যক্তি বিশেষের বা ইমাম সাহেবের বিদ’আতী বা নাজায়েয নির্দেশ মানা কর্তব্য? সাধারণত দেখা যাচ্ছে সাধারণ লোকেরা দু’রাক‘আত সলাত না পড়েই বসে পড়েন। এখন ঐ ব্যক্তি সলাত না পড়ে রাসূলের নির্দেশিত সুন্নাতের
খেলাফ করার জন্য কে দায়ী হবে? একথা কি আমাদের
শ্রদ্ধেয় ইমাম সাহেবরা একবারও চিন্তা করেছেন? ফলাফল
কি হল? একটা সুন্নাত বর্জিত হল আর একটা বিদ’আত স্থান করে নিল। সমাজে এভাবেই তো বিদ’আতের অনুপ্রবেশ
ঘটে।
৪৫। প্রচলিত ভুলঃ জুমু‘আর খুতবা পাঠ আরম্ভ হলে কেবল ঐ দিনকার ফজরের সলাতের কাজা
ব্যতীত অন্য কোন সলাত…. জায়েয নেই। (সহীহ্ মোকছুদুল মোমেনীন বা বেহেশতের কুঞ্জি-১৯২ পৃঃ মাসলাহ-৫)
অনুরূপভাবে আমাদের দেশে জুমু‘আর দিনে মাসজিদে প্রবেশ করে প্রথমে বসে
তারপর দাঁড়িয়ে সুন্নাত পড়ে’ এটা সুন্নাহ বিরোধী। বরং
মাসজিদে প্রবেশ করে বসার পূর্বেই কমপক্ষে দু’রাক‘আত সলাত পড়তে
হবে। খুতবার সময় মাসজিদে প্রবেশ করলেও দু’রাক‘আত পড়ে বসতে হবে।
* রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ প্রমাণ হলোঃ জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ ‘‘ কোন এক
জুমু‘আর দিন নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) লোকদের সামনে
খুতবা দিচ্ছিলেন এমন সময় এক ব্যক্তি আগমন করল। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, ‘‘হে অমুক তুমি কি সলাত আদায় করেছ? সে বলল, না। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘‘উঠ, সলাত আদায় কর।’’ অপর এক বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া
সাল্লাম) খুতবা দেওয়া অবস্থায় বলেনঃ ‘‘যখন
তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি ইমামের খুতবা দেওয়া অবস্থায় মাসজিদে আগমন করে সে যেন
সংক্ষিপ্ত করে দু’রাক‘আত সলাত পড়ে নেয়। (সহীহুল বুখারী-১/১২৭, ১৫৬ পৃঃ, সহীহ মুসলিম- ২৮৭ পৃঃ, আবু
দাউদ-১৫৯ পৃঃ,
তিরমিযী-৬৭ পৃঃ নাসাঈ-২০৭ পৃঃ, ইবনু মাজাহ-৭৯ পৃঃ, মিশকাত-১২৩
পৃঃ)
৪৬। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের দেশের অধিকাংশ মাসজিদে ইমামদের দেখা যায় খুব দ্রুত
ক্বিরআত পড়ে এবং রমযান মাসে তারাবীর সলাতের হাফিয সাহেবরাতো এত দ্রুত
ক্বিরআত পড়ে যে, এক শ্বাসে সূরা ফাতিহা, অতঃপর মাদ্দ্ কিংবা ওয়াকফ্ ছাড়া তিলাওয়াত হয় যা কুরআন-সুন্নাহ্
পরিপন্থী।
* রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ আনাস (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করা হল যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) এর ক্বিরআত
কেমন ছিল?
তিনি উত্তরে বললেনঃ ‘‘ তার
পড়ার দীর্ঘস্বর বিশিষ্ট ছিল। তিনি
তিলাওয়াত করলেন, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম এবং ‘বিসমিল্লাহ’ ‘আর রাহমান’ ও ‘আর রাহীম’ প্রত্যেকটি দীর্ঘস্বর অর্থাৎ মাদ্দের সাথে পাঠ করতেন। (সহীহুল বুখারী-৪/হা/৪৬৭৩)। উম্মে সালমা (রাঃ) বলেন, ‘‘রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) ক্বির‘আতসময় প্রত্যেক
আয়াত পৃথক পৃথক করে পড়তেন। ‘আলহামদুলিল্লাহি রাবিবল আলামীন’ বলে ওয়াক্ফ করতেন। (সুনাসে দার কুতনী- ১/হা/১১৭৮) উল্লেখ্য যে, উল্লিখিত পদ্ধতিতে তিলাওয়াত না করা খোদ আল-কুরআনেরও খেলাফ। আল্লাহ‘তাআলা বলেনঃ ‘‘ আর সলাতে কুরআন খুব স্পষ্ট করে ধীরে ধীরে পাঠ কর। (আল-মুয়াম্মিলঃ ৪)
৪৭। প্রচলিত ভুলঃ দুই ওয়াক্তের সলাত এক ওয়াক্তের মধ্যে একত্রে আদায় কোন ওজরের
কারণেও করা যাবে না। সফরেও
না, বাড়ীতে থাকা অবস্থায়ও না। তবে
আরাফা ও মুজদালিফায় আদায় করা যাবে। (মুহীত) (ফাতওয়ায়ে আলমগীরী-১৪৬ পৃঃ)
* রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ সফর অবস্থায় দু’ওয়াক্তের সলাত
একত্রে আদায় ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি
বলেনঃ ‘‘
সফরে দ্রুত চলার সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া
সাল্লাম) যুহর ও আসরের সলাত একত্রে আদায় করতেন আবার মাগরিব ঈশা একত্রে আদায় করতেন। (সহীহ বুখারী-১১৩৮, ই.ফা.বা-
১০৪২, সহীহ মুসলিম ই.ফা.বা- ৩/হা/ ১৪৯১ হতে ১৫২০ পর্যন্ত। তিরমিযী-ই.সে.হা/ ৫১৯,৫২০)
৪৮। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের সমাজে প্রচলিত জানাযায় সূরা ফাতিহা পড়া হয় না এবং
প্রত্যেক তাকবীর সমূহে হাত উঠানো হয় না; দলীল
হিসাবে বলা হয়, ‘জানাযা পড়ার নিয়মঃ জানাযার সলাত এইভাবে
পড়িবে যে, প্রথম তাকবীর বলিয়া আল্লাহ্র প্রশংসা ও গুণাগুণ জ্ঞাপন করিবে, অতঃপর
আবার তাকবীর বলিয়া নাবী কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) এর উপর
দরুদ পাঠ করিবে, তারপর তৃতীয় তাকবীরে পাঠ করিবে নিজের জন্য, মৃতের
জন্য ও সমস্ত মুসলমানের জন্য দু’আ করিবে, সবশেষে চতুর্থ তাকবীর বলিয়া সালাম ফিরাইবে। প্রথম
তাকবীর ছাড়া অন্য কোন কাবীরের সময় হাত উঠাইবে না।’’ (আল হিদায়া
ই.ফা.বা- ১/১৭৪ পৃঃ, আল মুখতাসারুল কুদুরী-মাদ্রাসার ৯ম ও১০ম শ্রেণীর পাঠ্য-১০৪
পৃঃ) উল্লিখিত গ্রন্থদ্বয় আমাদের দেশের কওমী ওআলিয়া মাদ্রাসার ছেলেদের পড়ানো হয়, যার
মধ্যে হাদীস বিরোধী অগণিত ফাতওয়া বিদ্যমান। তাইতো
আমাদের এই সিলেবাসধারী মৌলবীদের সূরা ফাতিহার কথা জিজ্ঞেস করলে তারা বলে
এটা তো (নামায) সলাত নয় ‘দু’আ’ কারণ এতে রুকূ, সাজদাহ্ নেই। ‘‘জানাযার
সলাতে কুরআন শরীফের কোন সূরা ক্বিরআত পাঠ করবে না। সূরা
ফাতিহা দু‘ আর নিয়্যাতে পাঠ করাতে কোন দোষ নাই। কিন্তু
ক্বিরআতের নিয়্যাতে পাঠ করা জায়েয নয়। কেননা
এটা ক্বিরআতের ক্ষেত্র নয়। বরং দু‘আর ক্ষেত্র।’’ (মুহীতঃ ফাতওয়ায়ে
আলমগীরী-১/৩৯৮ পৃঃ) অথচ স্বয়ং আল্লাহতা‘আলা যে কুরআনে জানাযাকেসলাত বলেছেন, সেটা
দেখার সুযোগটুকুও হয়না তাদের। কারণ
তাদের সঠিকভাবে কুরআনের তালিম দেওয়া হয়না। আর
কেনইবা দিবে কারণ হিদায়া গ্রন্থকে তারা কুরআনের মত মনে করে (নাউযুবিল্লাহ)। এ
ব্যাপারে বিস্তারিত দেখুন এ দীন লেখকের লেখা ‘মাযহাবের স্বরূপ’ বইটি
* রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘‘(ভবিষ্যতে)
উহাদের (মুশরিকদের) মধ্যে কাহারো মৃত্যু হইলে তুমি কখনও উহার জন্য (জানাযার) সলাত
পড়িবে না এবং উহার কবর পার্শ্বে দাঁড়াইবে না। উহারা তো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করিয়াছে এবং
পাপাচারী অবস্থায় উহাদের মৃত্যু হইয়াছে। (আত্-তাওবা, ৯ঃ৮৪)
আল্লাহ বলেন- জানাযা সলাত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) বললেন- জানাযা সলাত, অথচ আমাদের তথাকথিত সিলেবাসধারী মৌলবীরা নিজেদের লালিত
ভ্রান্ত আদর্শ টিকিয়ে রাখার জন্য বলেন- এটা সলাত নয় এটা তো দু‘আ। জানাযার সলাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করা
আবশ্যক। কেননা, সূরা ফাতিহা হলো উত্তম দু‘আ। জানাযার সলাতে ফাতিহা পাঠ করা নাবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) থেকে প্রমাণিত, ‘‘তালহা বিন আবদুল্লাহ বিন আউফ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ ‘‘আমি
আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) এর পিছনে জানাযার সলাত আদায় করেছি। তাতে তিনি সূরা ফাতিহা পাঠ করলেন এবং জানাযা শেষে বললেন, যেন লোকেরা জেনে নেয় যে, জানাযায়
সূরা ফাতিহা পাঠ করা সুন্নাত। (সহীহ
বুখারী-১/১৭৮ পৃঃ, আবু দাউদ-২/৪৫৫ পৃঃ, নাসাঈ-২৮১ পৃঃ, ইবনু
মাহ-১০৮,
১০৯ পৃঃ, যা‘আদুল মা‘আদ-১/৩১২ পৃঃ)
জানাযার তাকবীর সমূহে হাত উত্তোলন
আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) যখন জানাযার সলাত
পড়তেন, তখন প্রত্যেক তাকবীরে হাত উত্তোলন করতেন। (দারাকুতনী তায়ালীকসহ-১/১৯২ পৃঃ, বুখারী কিতাবুল রাফউল ইয়াদাইন-১৫৪,১৫৭ পৃঃ)।
৪৯। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের সমাজে মহিলাদের জানাযায় শরীক করা হয়না, অথচ এটা
সুন্নাহ বিরোধী
* রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ আব্বাদ ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন, সাদ ইবনু আবু ওয়াক্কাস (রাঃ) এর ইন্তিকালের পর নাবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রীগণরা তাঁর জানাযা মাসজিদে নিয়ে আসার
জন্য সংবাদ পাঠালেন, যাতে তাঁরা তাঁর জানাযার সলাত আদায়
করতে পারেন। তাঁরা তাঁর জানাযার সলাত আদায় করলেন। (সহীহ্ মুমলিম -১/৩১২, ৩১৩
পৃঃ)
৫০। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের দেশে শুধু ফজর এবং আসর সলাতে ইমামগণ সালাম ফিরিয়ে
মুক্তাদিদের দিকে ঘুরে বসেন। (মারাকুলফালাহর, উদ্বৃতিতে আহকামে যিন্দেগী-১৪৭ পৃঃ) এটা সুন্নাহ
পরিপন্থী। বরং প্রত্যেক সলাতেই ঘুরে বসতে হবে। হাদীসে শুধু
ফজর এবং আসরকে নির্দিষ্ট করা হয়নি।
* রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ সামুরা বিন জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ ‘‘ রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) যখন কোন সলাত শেষ করতেন তখন আমাদের দিকে মুখ করে
বসতেন। (সহীহ্ বুখারী-১১৭ পৃঃ, সহীহ
মুসলিম-২৪৭ পৃঃ, মিশকাত-মাদ্রাসার পাঠ্য-২/হা/
৮৮৩-৮৮৫)
৫১। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের সমাযে ফরয সলাত শেষ হলেই ইমাম মুক্তাদি মিলে দলবদ্ধ
হয়ে মুনাজাত করা বহুল প্রচলিত। সমাজে
এভাবে ব্যাপকভাবে দু’আ হয়ে আসছে। অথচ
নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) থেকে এ ব্যাপারে কোন
বিশুদ্ধ হাদীস পাওয়া যায়না। সাহাবী
তাবেঈদের যুগেও এর সহীহ্ সনদ ভিত্তিক কোন প্রমাণ মিলেনা। এমনকি নাবীজি
(সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) থেকে সহীহ্ তো দুরের কথা যঈফ বা মাওযূ
বর্ণনাও পাওয়া যায় না। তাই একাজ সম্পূর্ণ সুন্নাহ বিরোধী, তথা বিদ’আত যা-পরিত্যাগ
করা প্রত্যেক মুসলিমের অবশ্য কর্তব্য। দুঃখজনক
হলেও সত্য যে, বর্তমানে মুসলিম সমাজ এই বিদ’আতটিকে একটি
সুন্নাত তো বটেই বরংফরযের মতই মনে করে। যার
কারণে আপনি দেখবেন, যদি আপনি ফরয সলাত শেষে রাসূল (সাল্লাল্লাহু
আলাইহিওয়া সাল্লাম) এর সহীহ সুন্নাহ্ অনুযায়ী প্রমাণিত দু’আ যিকিরে মাশগুল
হন, ওদের সাথে বিদ’আতী মুনাজাত শরীক না হন তবে অন্যান্য মুসল্লীরা আপনার
প্রতি বাঁকা নজরে দেখবে, যেন আপনি মস্তবড় একটি অপরাধ করেছেন। আর ইমাম
সাহেব যদি কখনও এই মুনাজাত ছেড়ে দেয় তবে অনেক ক্ষেত্রে তার চাকুরী নিয়ে
টানাটানি হযে যাবে। উল্লেখ্য যে, উল্লিখিত বিষয়টিকে মুনাজাত বলাও ঠিক নয় এটা
শব্দগত দিক দিয়েও ভুল। বিস্তারিত দেখুন এই দীনহীন লেখকের ‘সহীহ্
আক্বীদার মানদন্ডে তাবলীগী নিসাব’ নামক গ্রন্থের আখেরী মুনাজাত অধ্যায়।
নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ সালাম ফিরানোর পরে নিম্মোক্ত দু’আসমূহ পাঠ করা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) থেকে
প্রমাণিত-
ক) আল্লাহ
আকবার (একবার), আসতাগফিরুল্লাহ (তিনবার)…. (মুত্তাফাকুন আলাইহি, মিশকাত-হা/৯৫৯)
খ) ‘আল্লা-হুম্মা
আনতাস্ সালা-মু ওয়া মিন্কাস্ সালা-মু, তাবারক্তা
ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইক্রাম’ (সহীহ মুসলিম, মিশকাত-হা/৬০)। তাছাড়া
আরও অন্যান্য দু’আ সহীহ্ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। আল্লাহ্ আমাদের সকল মুসলিম ভাই বোনকে সলাত সহ জীবনের
সার্বিক ক্ষেত্রে আল-কুরআন ও সহীহ্ সুন্নাহর অনুসরণ করার তাওফীক দান করুন।
৫২। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের সমাজে মাগরিবের আযানের পর ফরযের পূর্বে
সুন্নাত পড়া হয় না। অথচ ইচ্ছা করলে দু’রাক‘আত পড়া যায়।
* রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ আবদুল্লাহ বিন মুগাফফাল (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা
মাগরিবের পূর্বে দুই রাক‘আত সলাত আদায় কর। তোমরা মাগরিবের পূর্বে দু’রাক‘আত সলাত আদায় কর। কিন্তু তৃতীয়বার বললেন, যার
ইচ্ছা পড়বে,
এটা আমি এই জন্য বললাম যাতে লোকে এটাকে (অপরিহার্য)
সুন্নাহরূপে গ্রহণ না করে। (মুত্তাফাকুন
আলাইহি, সহীহ বুখারী ই.ফা. বা-হা/১১০৭, ১১০৮, মিশকাত মাদ্রাসার পাঠ্য-২/হা/ ১০৯৭, ১১১১,১১১৩) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি
বলেন, আমরা যখন মাদ্বীনাতে ছিলাম তখন মুয়ায্যিন মাগরিবের সলাতের
আযান দিতো,
তখন লোকেরা তাড়াহুড়া করে মাসজিদের খুঁটিসমূহের দিকে যেতেন
এবং দু’রাক‘আত সলাত পড়তেন। এমনকি কোন নবাগত আগন্তুক ব্যক্তি এসে মাসজিদে প্রবেশ করলে
সেই লোকদের সলাত পড়ার অবস্থা দেখে মনে করত যে, সম্ভবত
জামাআত শেষ হয়ে গেছে। এই জন্য যে, ঐ দু’রাক‘আত সলাত অনেক বেশী লোকে পড়ত। (সহী মুসলিম, মিশকাত
মাদ্রাসার পাঠ্য-২/হা/১১১২, সহীহ বুখারী-আযিযুল হক হা/ ৬২৭, ৬২৮)
৫৩। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের সমাজে জুমু‘আ মাসজিদে জামাআত হওয়ার পর দ্বিতীয় জামাআত জায়েয নেই বলে ফাতওয়া দেওয়া
হয়ে থাকে অথচ তার কোন সহীহ্ ভিত্তি নেই। বলা হয়ে
থাকে, ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-এর মতে ফরয সলাতের জন্য ছানী জামাআত
(অর্থাৎ মাসজিদে একবার জামাআত হয়ে গেলে আবার দ্বিতীয়বার ঐ মাসজিদে ঐ সলাতের
জন্য জামাআত) মাকরূহ তাহরীমা। (ফাতওয়ায়ে দারুল উলুমুত্ত বেহেস্তী গওয়াহের এর উদ্বৃতিতে আহকামে
যিন্দেগী-১৫)।
* রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ প্রয়োজনবোধে একই মাসজীদ একাধিকবার এক ওয়াক্তের সলাত জামাআতে
আদায় করতে পারবে। প্রথমবার ব্যতীত সব সলাত নফল হিসাবে
গণ্য হবে। আবু সাইদ খুদরী (স.) বলেন : জনৈক
ব্যক্তি প্রবেশ করেছে তখন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সলাত শেষ
করেছেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বললেন তোমাদের মধ্যে কে আছে যে এই ব্যক্তির সাথে দাঁড়িয়ে সাদাকা করার সওয়াব গ্রহণ
করবে? তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে পুনরায় তার সাথে সলাত আদায় করলেন। বায়হাকীর বর্ণনায় আছে যে, আবু বক্বর (রাঃ) দাঁড়ালেন এবং তার সাথে সলাত আদায় করলেন, অথচ তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) এর
সাথে সলাত আদায় করেছেন। মুসান্নাফে আবদুর রাযযাকে আবু উসমান
(রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আনাস বিন মালিক (রাঃ) তার সাথীদেরকে নিয়ে আমাদের নিকট দিয়ে
অতিক্রম করার সময় বললেনঃ ‘‘তোমরা কি সলাত পড়েছ? আমরা বললাম, হ্যাঁ। আবু উসমান বললেন, অতঃপর
আনাস তাঁর আরোহী থেকে নামলেন এবং সামনে অগ্রসর হয়ে তাঁর সাথীদের ইমামতি করে তাঁদের
নিয়ে সলাত পড়লেন। রায়হাকীর বর্ণনায় আছে উসমান বলেনঃ ‘‘ আমরা ফজরের সলাত পড়ে বানী রিকায়াহ মাসজিদে বসেছিলাম।’’ (সহীহ বুখারী-১/৮৯ পৃঃ, তিরমিযী-৫৬
পৃঃ, আবু দাউদ-৬৫ পৃঃ, বায়হাকী-৩য়
খন্ড ৯৮,৯৯ পৃঃ)
৫৪। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের সমাজে সলাতে ইমামের ভুল হলে মুক্তাদিরা ‘আল্লাহু
আকবার’ বলে ইমাম সাহেবকে সতর্ক করে থাকেন। অথচ ‘আল্লাহু
আকবার’ বলে সতর্ক করার কোন বিশুদ্ধ প্রমাণ নেই।
* রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ সলাতে ইমাম সাহেবের ভুল হলে যে কোন মুক্তাদি ‘সুবহানাল্লাহ’ বলে
ইমাম সাহেবকে সতর্ক করে দিবেন এবং মহিলা মুক্তাদি ‘হাতে তালি বাজিয়ে’ ইমাম
সাহেবকে সতর্ক করে দিবেন। (সহীহ বুখারী-
আ.প্র. ১/হা/৬৪৩, সহীহ মুসলিম-ই.ফা.বা-২/হা/ ৮৩২, ৮৩৭, ৮৩৮, ৮৩৯)
৫৫। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের সমাজে নারীগণ মাসজিদে জামাআতে শরীক হয় না। শহরে
বিভিন্ন মাসজিদে জামাআতের সময় লক্ষ্য করা যায় সলাতের সময় হলে পুরুষগণ
নারীদেরকে মাসজিদের এক পার্শ্বে দাঁড়িয়ে রেখে সলাত আদায় করে নেন। অথচ ঐ
নারীর প্রতিও সলাত ফরয। তথাপিও ভ্রান্ত ফাতওয়ার জন্য সে মাসজিদে প্রবেশ করে সলাত
আদায় করতে পারে না। মাসজিদের
নারীদের জন্য পর্দা সহ সলাতের একটি স্থান থাকা দরকার যা নাবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহিওয়া সাল্লাম) এর যুগ থেকে আজও মাসজিদে নববীতে মওজুদ আছে।
* রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি
বলেনঃ ‘‘রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) ফজরের সলাত
আদায় করতেন আর তাঁর সঙ্গে অনেক মুমিনা মহিলা চাদর দিয়ে গা ঢেকে শরীক হত, অতঃপর তারা নিজ নিজ ঘরে ফিরে যেত আর তাদেরকে কেউ চিনতে পারত
না। (সহীহ বুখারী-১/আ.প্র.হা/১৮৫-৮২৪ পৃঃ, ই.ফা. বা-৩৬৫, তিরমিযী-হা/৫৯)
৫৬। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের সমাজে, বিশেষ করে আহলে হাদীসগণের মধ্যে যার জানাযা হয়েছে এমন ব্যক্তির জন্য
একাধিক স্থানে গায়েবানা জানাযা পড়া হয়ে থাকে, অথচ এর
শরয়ী কোন ভিত্তি নেই।
* রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত, নাবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) আবিসিনিয়ার বাদশাহ নাজ্জাশীর জানাযার সলাত চার
তাকবীরে পড়েছেন (সহীহ্ বুখারী)। অন্য
বর্ণনায় হুযাইফা বিন উসাইদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসে বললেনঃ ‘‘তোমরা তোমাদের ভাইয়ের প্রতি জানাযার সলাত পড়। যে ভাই তোমাদের অন্য দেশে মৃত্যুবরণ করেছে। সাহাবাগণ বলেন, ‘‘হে আল্লাহর
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) তিনি কে? নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) বললেন, আবিসিনিয়ার বাদশাহ সুমো নাজ্জাশী। সাহাবাগণ দাঁড়ালেন এবং তার গায়েবী জানাযার সলাত পড়লেন। (মুসনাদে তাহমাদ, ফতহুর
রববানী-৭/২২০ পৃঃ, ইবনু মাজাহ-১/১১০, ১১১ পৃঃ, সহীহ্
মুসলিম-হা/ ২০৭১-২০৭৭ ই.ফা.বা) এজন্য বিদ্বানদের প্রাধান্যযোগ্য মত হচ্ছে গায়েবানা
জানাযা শরীআতসম্মত নয়। তবে যে ব্যক্তির জানাযা হয়নি তার
গায়েবানা জানাযা পড়া যাবে। যেমন জনৈক মুসলমান কোন কাফির ভূখন্ডে
মৃত্যুবরণ করল অথবা পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করল কিন্তু তার লাশ পাওয়া গেলনা। তখন তার গায়েবানা জানাযা আদায় করা ওয়াজিব। অন্যথায় নয়। (বিস্তারিত
দেখুন-নাসির উদ্দিন আল-আলবানীর সলাতুল জানাযা ও শইখ উসাইমীন-এর ফাতওয়া আরবানুল
ইসলাম-৪৪০ পৃঃ)
৫৭। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের সমাজে দুই ঈদ ৬ তাকবীরের সাথে আদায় করা হয়ে থাকে। দলীল
হিসেবে বলা হয়-‘‘প্রথম রাকআতে তাকবীরে তাহরীমা বলিয়া হাত বাঁধিবেন। তারপর
তিনবার তাকবীর বলিবেন। অতঃপর
সূরায়ে ফাতিহা ও তার সাথে অন্য একটি সূরা পড়িবেন। তারপর তাকবীর
বলিয়া রুকূতে যাইবেন। অতঃপর দ্বিতীয় রাক‘আতে প্রথম ক্বিরআত পড়িবেন। ক্বিরআত
শেষে তিনবার তাকবীর বলিবেন ও চতুর্থ তাকবীর বলিয়া রুকূতে যাইবেন। (কুদুরী-৯৪ পৃঃ) ইসলামী ফাউন্ডেশন কর্তৃক অনুদিত হিদায়াতেও
অনুরূপ বলা হয়েছে। অতঃপর
শেষে বলা হয়েছে এই হল ইবনে মাসউদ (রাঃ) এর মত এবং তাআমাদের মাযহাব। (হিদায়া-১/১৬২ পৃঃ)।
* রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ আবুদল্লাহ ইবিন আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) এর নিকট
উপস্থিত ছিলাম। তিনি দু’ ঈদের সলাত প্রথম রাক‘আতে তাকবীরে
তাহরীমা ব্যতীত সাত তাকবীর দিয়েছেন এবং দ্বিতীয় রাক‘আতে দাঁড়ানো তাকবীর ব্যতীত পাঁচ তাকবীর দিয়েছেন। এই সনদ সহীহ্ এবং বর্ণনাকারীগণ অধিক নির্ভরযোগ্য এবং অধিকতর
প্রতিষ্ঠিত শব্দে বর্ণিত কেননা এ হাদীস ‘সামীতু’ বা ‘আমি নিজে শুনেছি’- এরকম শব্দ দ্বারা এসেছে। (ইমাম শাফেয়ীর কিতাবুল উলম-১/২৩৬ পৃঃ, আবু দাউদ-১৬৩ পৃঃ, তিরমিযী-১/৭০
পৃঃ, ইবনে মাজাহ্-৯১ পৃঃ)। উল্লেখ্য যে, হাদীসের
গ্রন্থসমূহের মধ্যে সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম ও
নাসাঈ এই তিনটি গ্রন্থে ঈদের সলাতের তাকবীর সম্পর্কে কোন হাদীস নেই। এছাড়া বাকী সব গ্রন্থে ঈদের সলাতের তাকবীর সম্পর্কে ২০০ টির
অধিক হাদীস রয়েছে, কিন্তু ‘ছিত্তাতুন’ বা ৬ শব্দ বলে
কোন সহী্হ্ তো দূরের কথা কোন দুর্বল এমনকি মাওযু হাদীসও নেই। অতএব সকল প্রকার ভ্রান্ত দলীল ও মাযহাবী গোঁড়ামী বর্জন করে
হাদীসের উপর আমল করার উদাত্ত আহবান রইল।
৫৮। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের দেশে মহিলাদের ঈদের সলাত থেকে বঞ্চিত রাখা। পর্দার
অযুহাত দিয়ে। অথচ তাদেরকে ঈদের সলাতে অংশগ্রহণ করতে আল্লাহর রাসূল
(সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) নির্দেশ দিয়েছেন। ভ্রান্ত
ফতোয়ার দ্বারা তাদেরকে নেকী অর্জনের পথ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। বরং
নারীদেরকে পূর্ণ পর্দার সাথে ঈদের জামা‘আতে শরীক হবার সুযোগ করে দিতে হবে। ‘‘ মহিলাদের
জন্য মসজিদ বা ঈদগাহে জামা‘আতে সলাত পড়তে যাওয়া মাকরূহ ও নিষিদ্ধ। সাহাবাদের
যুগ থেকে এই নিষেধাজ্ঞা চলে আসছে।’’ (দররুল মুখতার এর
উদ্বৃতিতে ফাতওয়ায়ে দরুল উলুম ৩য় খন্ড আহকামেজিন্দেগী-১৫৯)
* রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ উম্মে আতিয়াহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ ‘‘ আমাদের
নারীদেরকে আদেশ করা হয়েছে যে, আমাদের ঋতুবতী
মহিলাগণ ও পর্দানশীল মহিলাগণ যেন দুই ঈদের দিনেই ঈদগাহে বের হবে যাতে তারা
মুসল্লীদের জামা‘আতে উপস্থিত হতে পারে এবং দু‘আয় অংশগ্রহণ করতে পারে। আর ঋতুবতী নারীরা তাদের সলাতের স্থান হতে একপাশে সরে বসে। তখন এক মহিলা প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) আমাদের
কারও কাছে শরীর ঢাকার মত চাদর নেই! রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) বললেন, তার বান্ধবীর আপন চাদর ধার হিসাবে পরবে। (সহীহ্ বুখারী-১৩৩ পৃঃ, সহীহ
মুসলিম-২৮৯,২৯০ পৃঃ, আবু দাউদ-১৭৭
পৃঃ, তিরমিযী-১১৯ পৃঃ)
৫৯। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের সমাজে উমার (রাঃ) এর দোহাই দিয়ে বিশ রাক‘আত তারাবীহ্র
সলাত পড়া হয়। অথচ তা সম্পূর্ণ রাসূলের পদ্ধতির বিপরীত। আর উমার
(রাঃ) ও আট রাক‘আত তারাবীহ্ চালু করেছেন।
* রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ জননী আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ ‘‘রমাযান
ও রমাযান ব্যতীত অন্য সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) এর রাতের
সলাত ১১ (এগার) রাক‘আতের বেশী ছিল না। (সহীহ্ বুখারী, সহীহ্
মুসলিম) সায়ের বিন ইয়াযীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি
বলেনঃ ‘‘
উমার (রাঃ) উবাই বিন কা’আব ও তামীম আদ্দারিকে
রমাযান মাসে লোকদেরকে ১১ (এগার) রাক‘আত সলাত পড়াতে
নির্দেশ দিয়েছিলেন। অতঃপর ইমাম একশত আয়াতের অধিক আয়াত
বিশিষ্ট সূরাসমূহ পড়তে থাকেন যাতে আমরা দীর্ঘ সময়ে দাঁড়ানোর কারণে লাঠিতে ভর দিতে
বাধ্য হতাম। তখন আমরা ফজরের কাছাকাছি সময় ব্যতীত
উক্ত নফল সলাত হতে অবসর গ্রহণ করতে পারতাম না। (সহীহ্ বুখারী-১/১৫৪,২৬৯ পৃঃ, সহীহ্ মুসলিম-২৫৪ পৃঃ, আবু
দাউদ-১/১৮৯ পৃঃ, নাসাঈ-১৪৮ পৃঃ, তিরমিযী-৯৯ পৃঃ, ইবনু
মাজাহ্-৯৭,৯৮ পৃঃ) উল্লেখ্য যে, আমাদের
দেশে তারাবীহর সলাতে প্রতি চার রাক‘আত শেষে যে দু’আ ‘সুবহানাজিল মুলকী…..’ নামে পড়া হয় তার কোন দলীল নেই বরং বিদ‘আত। অনুরূপ খতম পড়ার নামে মোরগের ঠোকরের
ন্যায় যে দ্রুত ক্বিরআত, রুকূ, সাজদাহ্ করা হয় তাও হাদীস পরিপন্থী।
৬০। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের সমাজে অধিকাংশ মুসল্লীদের দেখা যায় প্রস্রাবান্তে
ঢিলা বা টয়লেট পেপার প্রস্রাবের রাস্তায় স্থাপন করে হাঁটাহাঁটি, পা কুটি
মারা, কোথ মারা, কাশি দেওয়া ইত্যাদি কাজে অভ্যস্ত থাকতে। অতঃপর
পানি ব্যবহার করা হয়। অথচ প্রস্রাব হতে পবিত্রতা অর্জনের জন্য এই প্রকার কার্যকলাপের
দলীল কোন সহীহ্ হাদীসে নেই।
* রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ পানির দুষ্প্রাপ্যতায় সহীহ্ হাদীস মতে মাটির ঢিলা, পাথর ব্যবহার করা যায়, কিন্তু
তা নিয়ে হাঁটাহাঁটি, পা কুচি মারা, কোথ মারা, কাশি দেওয়া
ইত্যাদির দলীল নেই। সহীহ্ হাদীস মতে কমপক্ষে ৩টি পাথর বা
মাটির ঢিলা দিয়ে প্রস্রাবের দ্বার মুছে ফেলাই যথেষ্ট। ঢিলা ব্যবহার করলে আর পানির প্রয়োজন নেই। প্রমাণ দেখুন- আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেনঃ ‘‘ নাবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বের হলে আমি তাঁর অনুসরণ
করলাম। তিনি কোন দিকে তাকাতেন না, আমি তাঁর নিকটবর্তী হলে তিনি বললেন, কয়েকটি কঙ্কর চাই। ওটা দিয়ে আমি শৌচ কাজ করব, কিন্তু হাড় কিংবা গোবর আনবে না। আমি তাঁর জন্য কাপড়ের খুঁটে করে কয়েকটি কঙ্কর এনে তার পাশে
রেখে চলে গেলাম। তিনি প্রাকৃতিক প্রয়োজনে সমাধা করে
সেগুলো ব্যবহার করলেন। (সহীহ্ আল
বুখারী-১ম খন্ড আ.প্র. ১০৯ পৃঃ, হা/ ১৫২, সহীহ মুসলিম ২য় খন্ড ই.ফা.বা-৩৪ পৃঃ হা/৩৪ পৃঃ হা/৪৯৭,৪৯৮। ঢিলা
কুলুখের পর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) পুনরায় আর পানি
ব্যবহারের কথা বলেননি, উপরন্তু বললেন, এটাই যথেষ্ট (দেখুন-আবু দাউদ ই.ফা.বা. হা/ ৪০ অনুরূপ পানি
ব্যবহারের পূর্বে ঢিলা কুলুখ ব্যবহারের কোন প্রমাণ নেই। (দেখুন সহীহ্ বুখারী ১৪ খন্ড আ.প্র. পৃঃ ১০৮ হা/ ১৪৭,১৪৯ সহীহ মুসলিম ২য় খন্ড ই.ফা.বা পৃঃ ৩৯, হা/ ৫১০,৫১১,৫১২, আবু দাউদ ১ম খন্ড ই.ফা.বা হা/ ৪৩।
৬১। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের সমাজে মাযাহাবের দুহাই দিয়ে মুষ্ঠীমেয় মাসজিদ ছাড়া
সব মাসজিদগুলোতে আউয়অল ওয়াক্তে সলাত পড়া হয়না বরং মধ্যম থেকে আখেরী ওয়াক্তে
পড়া হয়। বিশেষ করে ফযর, আসর ও জোহর ওয়াক্ত সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকার কারণে অনেক কর্মব্যস্ত
মহিলারা ও পুরুষেরা জোহরের সলাত আসরের সময় আদায় করে থাকে।
* রসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ সলাতের সময়ের গুরুত্বারোপ করে আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ ‘‘নিশ্চয়ই মু‘মিনদের উপরে নির্দিষ্ট সময়ে সলাত আদায় করা ফরয করে দেওয়া
হয়েছে। (সূরা-নিসা-১০৩) মি‘রাজ রজনীতে সলাত
ফরয হওয়ার পরের দিন (নায়নুল আওত্ত্বার ২/২৮) জোহরের সময় জিবরীল (আঃ) এসে প্রথম দিন
আউয়াল ওয়াক্তে পরের দিন শেষ ওয়াক্তে নিজ ইমামতিতে পবিত্র কা’বা চত্বরে মাকামে ইব্রাহীমের পাশে দাঁড়িয়ে পাঁচ পাঁচ দশ
ওয়াক্ত সলাত আদায় করে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) কে সলাতের
পছন্দনীয় সময়কাল ঐ দুই সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। (সহীহ্ আবু দাউদ-হা/৪১৬, মিশকাত, সলাতের সময়কাল অধ্যায়-হা/৫৩৮)—- রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞাসা
করা হ‘লো যে, কোন কাজটি অধিক
উত্তম? তিনি বললেনঃ ‘‘ প্রথম
ওয়াক্তে সলাত আদায় করা (সহীহ্ আবু দাউদ-১/৬১ পৃঃ, তাহকীক মিশকাত ১/১৯২ পৃঃ টিকা-৭) হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ‘‘ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) তাঁর জীবনে
মাত্র দু’বার ছাড়া কখনও সলাত শেষ ওয়াক্তে পড়েননি।’’ (সহীহ্ তিরমিযী, মিশকাত
৬১ পৃঃ) এজন্য তিনি আলী (রাঃ) লক্ষ্য করে বলেনঃ ‘‘হে আলী ৩টি কাজে মোটেই দেরী করবেনা তন্মধ্যে ১টি হলো যখনই
সলাতের সময় হবে তখনই সলাত আদায় করো’’। (সহীহ্ তিমমিযী, মিশকাত ৬১
পৃঃ)
নিন্মে সলাতের ওয়াক্তসমূহ সংক্ষেপে দেওয়া হলো
১। ফজরঃ- সুবহে সাদিক হতে সূর্যদ্বয়ের পূর্ব পর্যন্ত। রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) সর্বদা ‘গলস’ অর্থাৎ একটু অন্ধকার থাকতে ফজরের সলাত
আদায় করতেন। (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, মিশকাত-৬০
পৃঃ) হানাফী মাযহাবের মুহাক্কেক ইমাম তাহাবী (রহঃ) বলেনঃ ‘‘ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) ও সাহাবায়ে
কিরাম থেকে বর্ণিত, সুন্নাহ অনুযায়ী ‘গালাসে’ অর্থাৎ অন্ধকারে
ফজরের সলাত শুরু করা উচিৎ এরবং ‘ইস্ফার’ (একটু ফর্সা) হলে শেষ করা উচিৎ এটাই হ’ল ইমাম আবু হানীফা, ইমাম
আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদ (রাহেমাহুমুল্লাহ) প্রমুখের মত। (সরহে মাআনীল আছার-১/৯০ পৃঃ)
২। যোহরঃ- সূর্য মাথার উপর থেকে পশ্চিমে ঢলে যাওয়ার পর হতে শুরু করে
প্রতিটি বস্ত্তর ছায়া সমপরিমাণ হওয়া পর্যন্ত যোহরের সময় থাকে। (সহীহ মুসলিম, আবু
দাউদ, তিরমিযী, মিশকাত-৫৯ পৃঃ)
উল্লেখ্য যে,
ইমাম আবু হানীফার শাগরেদদ্বয় অর্থাৎ আবু ইউসুফ ও ইমাম
মুহাম্মাদ এবং খোদ ইমাম আবু হানীফার (রহঃ) একটি মত উপরে উল্লিখিত সহীহ্ হাদীসের
উক্ত সময়কালকে সমার্থণ করেছেন। (হেদায়া-১/৮১
পৃঃ ‘সলাত’ অধ্যায় ‘সময়’ অনুচ্ছেদ)
৩। আসরঃ- প্রতিটি বস্ত্তর ছায়া সমপরিমাণ হওয়া থেকে সূর্য হলুদ বর্ণ
হওয়া পর্যন্ত আসরের সময়। (সহীহ্ মুসলিম, মিশকাত বাংলা-হা/ ৫৩৪) তবে বিশেষ কোন ওজরবসত সূর্যাস্তের
পূর্বে এক রাক‘আত আদায় করলে তা সময়ের মধ্যে গণ্য হবে। (সহীহ্ বুখারী, সহীহ্
মুসলিম, মিশকাত-৩৬১ পৃঃ) ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) এর একমত এবং তাঁর দু’ছাত্র আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদের নিকট প্রতিটি বস্ত্তর ছায়া
সমপরিমাণ হলে আসর শুরু হয়। (হিদায়া মাআ
দিরায়া-১/৮১ পৃঃ)
৪। মাগরিবঃ- সূর্য অস্ত যাওয়ার পর থেকে পশ্চিম আকাশে লাল আভা দুর না
হওয়া পর্যন্ত মাগরিব সলাতের সময়। (সহীহ্
মুসলিম, মিশকাত-৫৯ পৃঃ) তবে আউয়াল ওয়াক্তে অর্থাৎ সূর্যাস্তের সাথে
সাথে সলাতুল মাগরিব আদায় করা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) ও
সাহাবীগণের সুন্নাত।
৫। ঈশার সলাতের সময়ঃ পশ্চিম আকাশে লাল আভা দূর হওয়ার পর থেকে অর্ধেক রাত পর্যন্ত
ঈশার সলাতের সময়। (সহীহ্ মুসলিম, মিশকাত-৫৯ পৃঃ) তবে রাত্রের এক তৃতীয়াংশের সময় পড়া উত্তম। (আহমাদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ্, মিশকাত-৬১
পৃঃ) উল্লেখ্য যে, যরুরী কারণে ফজরের পূর্ব পর্যন্ত ঈশার
সলাত পড়া জায়েজ আছে। (সহীহ্ মুসলিম, ফিকহুস সুন্নাহ্-১/৭৯ পৃঃ)
৬২। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের সমাজে অনেক অসুস্থ্য ব্যক্তি অর্থাৎ সাজদাহ্ করতে
অপারগ ব্যক্তিকে বালিশে, অথবা টেবিলে, আজাকালতো মাসজিদগুলোতে এক ধরণের সামনে টেবিল বিশিষ্ট চেয়ার এর উপর
সলাতে সাজদাহ্ করতে দেখা যায়। অথচ
এভাবে অসুস্থ্য ব্যক্তিকে কোন জিনিষের উপর সাজদাহ্ করতে কঠোরভাবে নিষেধ আছে।
* রসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) পীড়িত ব্যক্তিকে
পরিদর্শন করতে গিয়ে তাকে বালিশের উপর সলাত আদায় করতে দেখে তিনি তা টেনে নিয়ে দূরে
নিক্ষেপ করেন। অতঃপর সে ব্যক্তি একখন্ড কাঠ নিলেন এর
উপর সলাত পড়ার জন্য। তিনি তাও টেনে নিয়ে ফেলে দিলেন এবং
বললেনঃ ‘‘যদি সম্ভব হয় তাহলে মাটির উপর সলাত পড়বে তানা হলে ইশারা করে
পড়বে, এবং সাজদাহ্কে রুকূ অপেক্ষা বেশি নিচু করবে’’। (সহীহ্ বুখারী, তাবরানী, কাযযার, ইবনুস সান্মাক, সহীহ্ হাদীস গ্রন্থে)
৬৩। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের দেশে সাহ্ও সাজদাহ্র যে নিয়ম প্রচলণ আছে তা সুন্নাত
বিরোধী। ‘‘সলাতে ভুল হলে সলাতের ভিতরে শেষ বৈঠকে শুধুমাত্র ‘তাশাহুদ’ পাঠ
করিয়া ডান দিকে সালাম ফিরাইয়া দুইটি সাজদাহ্ করিতে হয়। অতঃপর
বসিয়া আত্তাহিয়্যাতু, দরূদ ও দোয়া পড়িয়া সালাম ফিরাইয়া সলাত শেষ করিতে হয়। (মোকছুদুল মোমেনীন-১৮৭ পৃঃ)
* রসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ যদি ইমাম সলাতরত অবস্থায় নিজের ভুল সম্পর্কে নিশ্চিত হন
কিংবা লোকমা দিয়ে মুক্তাদিগণ ভুল ধরিয়ে দেন, তবে
তাশাহুদ শেষে তাকবীর দিয়ে পর পর দু’টি ‘সাজদায়ে সহো’ দিবেন। অতঃপর সালাম ফিরাবেন। (মুত্তাফাক্ব আলাই, মিশকাত-হা/
১০৮ ‘সলাত’ অধ্যায় ‘সাহো’ অনুচ্ছেদ)। সলাতে (রাক‘আতে) কমবেশী যা-ই হৌক সালামের আগে বা
পরে দু’টি ‘সাজদায়ে সহো’ দিতে হবে। (সহীহ্
মুসলিম নায়লুল আওত্তার-৩/৪১১)। সার কথা
‘সাজদায়ে সহো’ সালাম
ফিরানোর পূর্বে ও পরে উভয় জায়েয আছে। তবে
কেবল ডাইনে একটি সালাম দিয়ে ‘সাজদায়ে সহো’ করার প্রচলিত প্রথার কোন ভিত্তি নেই। (মিরাতুল মাকাতীহ-২/৩২-৩৩) অনুরূপভাবে ‘সাজদায়ে সহো’র পরে ‘তাশাহুদ’ পড়ার কোন সহীহ্
হাদীস নেই। উক্ত মর্মে ইমরান বিন হুসাঈন (রাঃ) হ’তে যে হাদীসটি এসেছে, তা
দুর্বল। (তিরমিযী, আবু দাউদ, ইরওয়াউল গালীল
হা/ ৪০৩,
২//১২৮-২৯ পৃঃ) হানাফী মাযহাবের প্রমাণ্য গ্রন্থ হেদায়ার
ব্যাখ্যাকার ইবনুল হুমাম আল-হানাফী (রহঃ) বলেনঃ ‘‘ এক দিকে সালাম ফিরানোকে বিদ‘আত বলা হয়েছে।’’ (ফতহুল
কাদীর ১/২২২ পৃঃ) অনুরূপভাবে সহো সাজদাহর পর ‘তাশাহুদ’ পড়া সম্পর্কে আল্লামা যাইলায়ী-আল-হানাফী (রহঃ) বলেনঃ ‘‘ ‘সহো সাজদাহর’ পর
তাশাহুদ পড়ার প্রমাণে কোন সহীহ্ হাদীস নেই। (নাসুবুররায়াহ, আইনী-তুহফা-১/২১৯
পৃঃ)
৬৪। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের সমাজে প্রায় সকল মাসজিদে ও ঘরে কারুকার্যখচিত
মুসাল্লাহ ও অনুরূপ কাপড়ে মুসল্লীদের সলাত আদায় করতে দেখা যায়। অনুরূপ
মাসজিদগুলোতে সামনের দেওয়ালে, মক্কা-মদিনার মিনারসহ বিভিন্ন ধরণের নকশাদার টাইল্স বসানো
হচ্ছে যা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) এর নিদের্শ
বিরোধী। অনুরূপ যার দ্বারা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) এর সলাতে
অমনোযোগী হওয়ার কারণ হয়েছিল। তাহলে
আমাদের বর্তমান ইমাম ও মুসল্লীদের অবস্থা কেমন হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।
* রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি
বলেনঃ ‘‘
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) একদা একটি
কারুকার্যখচিত চাদর গায়ে দিয়ে সলাত আদায় করলেন। আর সলাতে সে চাদরের কারুকার্যের প্রতি তাঁর দৃষ্টি পড়ল। সলাত শেষে তিনি বললেনঃ ‘‘ এ
চাদরখানা আবু জাহামের নিকট নিয়ে যাও আর তার কাছ থেকে কারুকার্য ছাড়া মোটা চাদর
নিয়ে আস। এটা আমাকে সলাত হতে অমনোযোগী করে দিচ্ছিল’’। হিসাম
ইবনু উরওযাহ (রহঃ) তাঁর পিতা হতে এবং তিনি আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘‘ আমি সলাত আদায়ের সময় এর কারুকার্যের প্রতি আমার দৃষ্টি পড়ে
তখন আমি আশংকা করছিলাম যে, এটা আমাকে ফিতনায় ফেলে দিতে পারে।’’ (সহীহ্ বুখারী-তাওঃ হা/৩৭৩ পৃঃ , ১৯৫ সহীহ্ মুসলিম-হা/ ১১২৮ পৃঃ ৩২৯) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, আয়িশা (রাঃ) এর নিকট একটি বিচিত্র রঙ্গের পাতলা পর্দার কাপড়
ছিল। তিনি তা ঘরের এক দিকে পর্দা হিসাবে ব্যবহার করছিলেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)- বললেনঃ ‘‘ আমার সামনে থেকে তোমার এই পর্দা সরিয়ে নাও। কারণ সলাত আদায় করার সময় এর ছবিগুলো আমার সামনে ভেসে ওঠে। (সহীহ্ বুখারী-১৯৫ পৃঃ হা/ ৩৭৪)
৬৫। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের দেশে অধিকাংশ মুসল্লীদের দেখা যায় স্থান পরিবর্তণ না
করে ফরয ও সুন্নাত এই স্থানে আদয় করে থাকে। অথচ তা
সুন্নাহ বিরোধী। বরং দুই সলাতের মধ্যে পার্থক্য করা উচিত।
* রসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ মুআবিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ‘‘নাবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, আমরা যেন এক সলাতের সাথে অন্য সলাতকে মিলিয়ে না দেই যতক্ষণ
পর্যন্ত কথা না বলি বা বের না হয়ে যাই। (সহীহ্
মুসলিম, ফা.আরকানুল ইসলাম-২১/২৮৮ পৃঃ ৩৯১) এজন্য বিদ্বানগণ বলেন, ফরয এবং সুন্নাতের মধ্যবর্তী সময়ে কথা বলে বা স্থানান্তর
হয়ে পার্থক্য করা উচিৎ।
৬৬। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের দেশে অধিকাংশ মাসজিদে জুমু‘আর খুতবা আরবীতে
দেওয়া হয় যার কোন সহীহ্ ভিত্তি নেই। এবং দু’টি খুতবার পরিবর্তে
বাংলায় অতিরিক্ত আরো একটি খুতবা দেওয়া হয়। যা
স্পষ্ট বিদ‘আত।
* রসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) তাঁর মাতৃভাষায়
খুতবা দিতেন। অতএব আমাদেরকেও তাঁর সুন্নাতের
অনুসরণে মাতৃভাষায় খুতবা দিতে হবে। উপস্থিত
মুসল্লীগণ যে ভাষায় বুঝেনা সে ভাষায় জুমু‘আর খুতবা প্রদাণ
করা জায়েজ নয়। যদি উপস্থিত মুসল্লীগণ অনারব হন, তারা আরবী না বুঝেন, তবে
তাদের ভাষাতেই খুতবা প্রদান করবে। মাতৃভাষায়
খুতবা প্রদাণের দলীল হচ্ছে, মহান আল্লাহর বাণী- ‘‘আমি যে রসূলই প্রেরণ করেছি, তাকে নিজ সম্প্রদায়ের ভাষা ভাষী করে পাঠিয়েছি। যাতে তিনি তাদেরকে (আল্লাহর বিধান) বর্ণনা করে দেন।’’ (সূরা ইবরাহীম-৪)
৬৭। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের সমাজে এক শ্রেণীর তথাকথীত মুফতিরা ফতওয়া দিয়ে থাকে
সলাতে কুরআন মাজীদ দেখে পড়লে সলাত হয়না। বিষয়টি
তারা সলাত বিনষ্টের কারণের মধ্যে উল্লেখ করেছেন। (তালীমুল মাসায়েল, বাং.কো. শিক্ষা বোড, সদর দপ্তর চরমোনাই, বরিশাল-৮ পৃঃ) অথচ ফরয ব্যতীত নফল সলাতে কুরআন মাজীদ দেখে
পড়া যায়।
* রসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ ‘‘হযরত আয়িশা (রাঃ) এর দাশ যকওয়ান কুরআন
দেখে সলাত পড়তেন। (বুখারী, তিরমিযী, তাগলীকুত
তালীক-ইবান হাজার-২/ ২৯০,২৯১। নামাযের মাসায়েল, হরুণ
আযিযী নদবী। মাক্তবা বায়তুস সালাম, বিয়াদ, সৌদি আরব)
৬৮। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের সমাজে মাসজিদগুলোতে দেখা যায় কাতার সোজা করার জন্য
মুয়াজ্জিন বলে থাকে অথবা মুক্তাদিদের মধ্য থেকে কেউ বলে কাতার সোজা করুন। অথচ এটা
ইমামের দায়িত্ব।
* রসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ হযরত আনাস (রাঃ) বলেনঃ ‘‘রসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) তাকবীর তাহরীমা বলার পূর্বে আমাদের দিকে ফিরে
দাঁড়াতেন এবং বলতেন, সোজা হয়ে এবং একসাথে মিলিয়ে দাঁড়াও। (সহীহ্ বুখারী, সহীহ্
মুসলিম, নায়লুল আওতার-৩/২২৯)
৬৯। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের সমাজে মাসজিদগুলোতে জামা‘আত চলা অবস্থায়
দেখা যায় সামনের কাতারে জায়গা থাকা অবস্থায় কেউ কেউ একা এক কাতারে দাঁড়ায়। এটা
সুন্নাহ বিরোধী। অনুরূপভাবে অনেককে দেখা যায় সামনের কাতার পূর্ণ হওয়ায় যায়গা
না থাকার কারণে একজনকে টেনে এনে পিছনে দাঁড় করানো হয়। তারও
কোন সহীহ্ ভিত্তি নেই।
* রসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ হযরত ওয়াবেছা ইবনে মা’বাদ (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে
পিছনের কাতারে একা একা সলাত পড়তে দেখে তাকে পুনরায় সলাত পড়ার আদেশ দিয়েছেন। (আহমাদ, তিরমিযী, সহীহ আবু দাউদ-১ হা/৬৩৩ পৃঃ)
৭০। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের সমাজে এক শ্রেণীর মুসল্লীদের দেখা যায় বিশেষ করে
একদল পীরের মুরিদদের খুব গুরুত্ব সহকারে মাগরিবের পরে দুই, দুই রাক‘আত করে ৬ রাক‘আত আউয়াবিনের সলাত
আদায় করতে। অথচ তার কোন সহীহ্ ভিত্তি নেই। (মোকছুদুল মোমেনীন-১৯২-১৯৯৩ পৃঃ) প্রকাশ থাকে যে, এই
মর্মে তিরমিযী বর্ণিত হাদীসটি ‘যঈফ’। বরং কোন
কোন মুহাদ্দীস হাদীসটিকে জাল ও বানোয়াট বলেছেন। (মুসান্নিফ ইবনু — শাইবা-২/১৪-১৬ হা/ নামে জালিয়াতি-৩৮২ পৃঃ)
* রসূলূল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ বিভিন্ন হাদীসে যে, সলাতকে
সলাতুয্ যুহা বলা হয়েছে ফারসীতে তাকেই চাশ্তের সলাত বলা হয়। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ‘‘উটের বাচ্চা যখন বালু গরম হওয়ার জন্য মায়ের কোল ছেড়ে পালায়
অর্থাৎ রৌদ্রের উত্তাপের কারণে, তখন সলাতুল
আউয়াবিনের সময় হয়।’’ (সহীহ্ মুসলিম, মিশকাত-১১৬ পৃঃ) এর দ্বারা প্রতিয়মান হয় যে, সলাতুয্ যুহা বা চাশতের অপর নাম সলাতুল আওয়াবীন, যা সূর্যের তাপ উত্তপ্ত হওয়ার পর পড়তে হয়।
ফুটনোটঃআমাদের দেশের সময় প্রায় ৯ টা হতে মধ্যাহ্নের পূর্ব পর্যন্ত
আওয়অবীন সলাত আদায় করা যায়। নাবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) এই সলাতটি ২,৪,৬,৮,১০,১২ রাকা‘আত পর্যন্ত অবস্থার প্রেক্ষিতে আদায়করেছেন। (দেখুন যাদুল মাআদ-১/৩৫১ পৃঃ)
৭১। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের দেশে জুমু‘আর সলাতের পর ‘‘আখেরী যোহর’’ নামে পুনরায় যোহরের চার রাকা‘আত একই ওয়াক্তে পড়ার যে রেওয়াজ এদেশে চালু আছে তা
নিঃসন্দেহে বিদ‘আত। গ্রামে জুমু‘আ হবে কি হবেনা, এই সংসয়ের কারণে কিছু লোক দুটিই আদায় করে থাকে। আববাসীয়
খলীফাদের শাসন আমলে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ভ্রান্ত ফের্কা মু‘তাযিলাগণ এটি
চালু করে। (সলাতুর
রসূল-১১০ পৃঃ) অথচ যুগ যুগ ধরে আহলে সুন্নাতের নামে এক শ্রেণীর মুসল্লীগণ এই ভ্রান্তি লালন করে
আসছে।
* রসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ শহরে হৌক বা গ্রামে হৌক প্রত্যেক বয়স্ক পুরুষ ও জ্ঞান
সম্পন্ন মুসলিমদের উপর জামা‘আত সহকারে জুমু‘আর সলাত আদায় করা ফরযে আয়ন’ (জুমু‘আ-৯) গোলাম, রোগী, মুসাফির, শিশু ও মহিলাদের উপরে জুমু‘আজর সলাত ফরয নয়। (আবু দাউদ, মিশকাত-হা/১৩৭৭)
এমনকি দু’জন মুসলিম কোন স্থানে থাকলেও তারা একত্রে জুমু‘আ আদায় করবে। (নায়ল-৪/১৫৯-৬১
মিরআত-২/২৮৮-৮৯) উল্লেখ্য যে, হানাফী
মাযাহাবের প্রামাণ্য গ্রন্থ দুরে মুখতারে আখেরী জোহর’ মাকরূহ ও নাজায়েজ বলা হয়েছে। (দুর্বে মুখতার, হাক্বীকাতুল
ফিক্কহ-২৫৩ পৃঃ)
৭২। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের দেশে জুমু‘আর পূর্বে চার রাকা‘আত কাবলাল জুমু‘আ ও পরে চার রাকা‘আত বাআদাল জুমু‘আ আদায় করা হয়, যার কোন ভিত্তি নেই।
* রসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ জুমু‘আর পূর্বে নির্দিষ্ট কোন সুন্নাত সলাত
নেই। মুসল্লীগণ শুধু ‘‘তাহইয়াতুল
মাসজিদ’’)
দু‘রাকা‘আত পড়ে বসবে। সময়
পেলে খুতবার পূর্বে যত ইচ্ছা নফল সলাত আদায় করবে। জুমু‘আর সলাতের শেষে মাসজিদে চার আর বাড়িতে
হলে দু’রাকা‘আত আদায় করবে। তবে মাসজিদে চার বা দুই কিংবা চার ও দুই মোট ছয় রাকা‘আত সুন্নাত ও নফল পড়া যায়। (মুসলিম, মিশকাত হা/১১৬৬, মিরআত-২/১৪৮)
৭৩। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের সমাজে একটি মহা ভ্রান্তি লক্ষ্য করা যায়, আর তা’হল মাসজিদের
পার্শে লাগানো কবরস্থান অথবা মাসজিদের সামনে লাগানো কবরস্থান, এরূপ
মসজিদে সলাতই হয়না।
* রসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি
বলেছেনঃ ‘‘
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) তাঁর রোগ
শয্যায় বলেছিলেনঃ আল্লাহ ইয়াহুদ ও নাসারাদের (খ্রিষ্টান) প্রতি লা’নত বর্ষণ করুন, কারণ
তারা তাদের নাবীদের কবরকে মাসজিদ বা সাজদার স্থান করে নিয়েছে। ’’ আয়িশা (রাঃ) বলেছেনঃ ‘‘যদি
এরূপ করার আশংকা না থাকতো তাহলে তাকে উন্মুক্ত স্থানে কবর দেওয়া হতো। কিন্তু যেহেতু তিনি আশংকা করতেন যে, তাঁর কবরকে মাসজিদ বা সাজদার স্থান করা হতে পারে তাই
উন্মুক্ত স্থানে কবর করতে দেননি। বরং ‘আয়েশা (রাঃ) কক্ষে তার কবর করা হয়েছে। (সহীহ বুখারী, সহীহ
মুসলিম-হা/ ১০৭৩ পৃঃ ২৯৭ ই.সে) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) আরো বলেনঃ ‘‘ কবর ও গোসলখানা ছাড়া সকল ভূখন্ডই মাসজিদ হওয়ার উপযুক্ত।’’ (আহমাদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, নাসাঈ, আবু দাউদ) অন্য হাদীসে বলা হয়েছে ‘তোমরা তোমাদের বাড়ীতে কিছু সলাত অর্থাৎ (সুন্নাত ও নফল)
আদায় কর এবং ওটাকে কবরে পরিণত করনা’ (আহমাদ, আবু দাউদ) এর দ্বারা প্রমাণিত হয় কবরস্থান কোন সলাতের জায়গা
নয়।
৭৪। প্রচলিত ভুলঃ জুমু‘আর সলাত শুদ্ধ হয়না কেবল জামে শহর কিংবা শহরের ঈদগাহ ব্যতীত। গ্রামাঞ্চলে
জুমু‘আর জায়েয নয়। (হিদায়া ১৫৫ পৃঃ)
* রসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘‘ হে
বিশ্বাসীগণ যখন জুমু‘আর সলাতের আযান বা আহবান শুনবে দৌড়ে
চলে আস।’’ (সূরা জুমু‘আ-৯) নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) যখন মদ্বীনায়
হিজরত করেন,
তখন বনু আমর ইবনে আওফদের কুবায় অবস্থান করেন। ইবনে ইসহাকের বর্ণনায় সোম, মঙ্গল, বুধ ও
বৃহস্পতিবার কুবায় অবস্থান করে কুবা মসজিদ নির্মাণ কাজ করেন। অতঃপর জুমু‘আর দিন তাঁরা সেখান হতে চললেন এবং বনু
ইবনে আওফের ওখানে গিয়ে জুমু‘আ আদা করলেন। মদ্বীনায় সর্বপ্রথম এটাই জুমু‘আ। এ জুমু‘আ মদ্বীনায় মাসজিদে নববী তৈরীর পূর্বে পড়া হয়। (যাদুল মাআদ-১/২৩০ পৃঃ, বাংলা
ই.ফা.ফা ১৯৮৮) প্রমাণিত হ’ল সর্বপ্রথম জুমু‘আ যেখানে পড়া হয় তা শহরে ছিলনা। তাহলে শহর ব্যতীত জুমু‘আ হবেনা একথার
দ্বারা কি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) এর আমলের বিরোধীতা করা
হয়না?
৭৫। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের সমাজে অনেক মুসল্লীদের দেখা যায় তাকবীরে উলা ধরার
জন্য অথবা জামা‘আত ধরার জন্য খুব দ্রুত দৌড়ে আসে। এটা
সুন্নাতের খিলাফ।
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ ‘‘যখন সলাতে ইক্বামত প্রদাণ করা হয়, তখন তাড়াহুড়া করে সলাতের দিকে আসবেনা। বরং হেঁটে হেঁটে ধীরস্থিরতার সাথে এবং শান্তভাবে আগমণ করবে। অতঃপর সলাতের যতটুকু অংশ পাবে আদায় করবে। আর যা ছুটে যাবে তা (পরে) পূর্ণ করে নিবে।’’ (সহীহ্ বুখারী, সহীহ্
মুসলিম ধীরস্থিরভাবে মাসজিদে আগমণ করা অনুচ্ছেদ, ফা,আরকান ৩৪১ পৃঃ)
৭৬। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের দেশে রমযান মাসের শেষ জুমু‘আকে ‘জুমু‘আতুল বিদা’ বলে খুব
গুরুত্ব দেওয়া হয়। অথচা
তার কোন বিশুদ্ধ ভিত্তি নেই। এই
মর্মে জালিয়াতরা বিশেষ কিছু ফযীলত বানিয়ে সমাজে প্রচার করেছে। যেমন, যদি কোন
ব্যক্তি রমযান মাসের শেষ জুমু‘আর দিন এক ওয়াক্ত (অন্য বর্ণনায় ৫ ওয়াক্ত) কাযা সলাত আদায়
করে তবে, ৭০ বৎসর পর্যন্ত তার সকল কাযা সলাতের ক্ষতিপূরণ হয়ে যাবে।’’ বিষয়টি
সম্পর্কে মুহাদ্দিসগণ একমত যে, এই কথাটি জাল বা মিথ্যা (মোল্লা আলী ক্বারী আল-হানাফী, আল-আসরার
২৪২ পৃঃ, শাওফালী, আল ফাওয়াইদ, ১/৭৯ পৃঃ, আবদুল হাই লাখনাবী আল-আসার পৃঃ ৮৫ ডা. আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর, হাদীসের
নামে জালিয়াত ৪৩পৃঃ)
* রসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ সহীহ্ হাদীসে জুমু‘আর দিনকে ‘সাইয়েদুল আইয়াম’ বা সর্ব
শ্রেষ্ঠ দিন বলা হয়েছে। সূর্যের নিচে এর চেয়ে উত্তম দিন আর
নেই। (সহীহ্ মুসলিম -২/ ৫৮৯, সহীহ্
ইবনু খুজাইমা-৩/১১৫) অনুরূপভাবে রমযান মাস আল-কুরআন নাযিলের মাস, এই দিক দিয়ে তা শ্রেষ্ঠ ও বরকতময় মাস। এই দৃষ্টিকোণ রমযান মাসের জুমু‘আর দিনটির মর্যাদা সহজেই অনুমেয়।
৭৭। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের দেশে তথাকথিত এক শ্রেণীর মুফতিরা পূর্ব জীবনের ছুটে
যাওয়া সলাতকে ‘‘ওমরী ক্বাজা’’ বলে আদায় করার ফাতওয়া দিয়ে থাকে। অনুরূপভাবে
মৃত্যুকালে ছুটে যাওয়া সলাতের কাফফারা আদায় করার কথা বলে। অথচ তার
কোন ভিত্তি নেই।
* রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ সলাতকে তার নির্ধারিত সময় আদায় করা আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ। (সূরা
নিসা-৪ঃ১০৩) ইচ্ছাকৃত সলাত ছেড়ে দিলে সে আর মু‘মিন থাকেনা। (তাওবা-১১মারইয়াম-৫৯-৬০) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া
সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘নিশ্চয়ই একজন মু‘মিন ব্যক্তির মধ্যে এবং শিরক ও কুফরের মাঝে পার্থক্য হলো সলাত
পরিত্যাগ করা।’’ (সহীহ্ মুসলিম বিতাবুল ঈমান) বুরাইদা
বিন হুসাইব হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ ‘‘ আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) কে বলতে
শুনেছি আমাদের এবং তাদের অর্থাৎ মুশরিকদের মাঝে একমাত্র চুক্তি হলো সলাত, যে ব্যক্তি সলাত ছেড়ে দিবে সে কাফির হয়ে যাবে।’’ (আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ্) প্রমাণিত হ’ল ইচ্ছাকৃত সলাত ছেড়ে দিলে সে আর ইসলামেই থাকেনা তার আবর
ক্বাজাও কাফ্ফারা কিসের? হ্যাঁ যদি কারো সারাঈ ওজর বশত ছুটে
যায় তা ততখনাৎ আদায় করাই তার কাফ্ফারা স্বরূপ। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘‘ যে ব্যক্তি সলাত পড়া ভুলে গেছে অথবা সলাতের সময় ঘুমিয় পড়েছে, তার জন্য স্মরণ হওয়া বা জাগ্রত হওয়ার সাথে সাথে পড়ে দেওয়াটা
কাফ্ফরা স্বরূপ। (সহীহ্
বুখারীৎ-১/২৭০ সহীহ্ মুসলিম) অন্য হাদীসে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)
এর নিকট জিজ্ঞাসা করা হলো, আমরা যদি সলাতের সময় ঘুমিয়ে পড়ি তখন
কি করব? জবাবে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ‘‘ঘুমের কোন দোষ নেই। দোষতো জাগ্রত থাকা অবস্থায়। কাজেই তোমাদের কেহ যদি ভুলে যায়, কিংবা ঘুমিয়ে পড়ে তাহলে যখন জাগ্রত হবে কিংবা স্মরণে আসবে
তখনই সলাত পড়ে নিবে।’’ (তিরমিযী, নাসাঈ, আবু দাউদ)
প্রমাণিত হল,
কাযায়ে উমরী বলতে কুরআন, সহীহ্
হাদীসে কোন সলাত নেই। এটা মনগড়া ফতওয়া। বরং অতীতে ছুটে যাওয়া সলাতের জন্য তাওবা ও ইস্তেগফার করতে
হবে।
যখন একটি বস্ত্তর আসল ছায়া বাদ দিয়ে
অবশিষ্ট ছায়া ঐ বস্ত্তর দ্বিগুন হয়। (আল-হিদায়া ১ম খন্ড, সলাতের সময় অধ্যায়, ৫৯ পৃঃ বেহেশতি জেওর ১২২, ১২৩ পৃঃ
মাসআল)
* রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ‘‘ আসরের সলাতের সময় আরম্ভ হয় যখন কোন বস্ত্তর ছায়া (পূর্ব
দিকে অংশ) ঐ বস্ত্তর সমান হয়।’’ (সহীহ্
মুসলিম, ই.ফা.বা-২ হা/১২৬২ মিশকাত-২ হা/ ৫৩৪ মিশকাত মাদ্রাসার
পাঠ্য-২ হা/৫৩৪, ৫৩৬ জামে তিরমিযী-১ হা/ ১৪৭ পৃঃ ১৮৯
বুলুগুল মারাম-১ হা/ ১২৭)
৭৯। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের সমাজে অনেক ইমাম ও মুক্তাদিদের দেখা যায় ফরয সলাতের
সালাম ফিরানোর সঙ্গে সঙ্গে মাথায় হাত রেখে একটি দু‘আ পড়া হয়, যার কোন
সহীহ্ ভিত্তি নেই।
* রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ ফরয সলাতের সালাম শেষ করে প্রথমে সরবে একবার ‘আল্লা-হু আকবর’ ও
তিনবার ‘আস্তাগফিরুল্ল-হ’ বলে
বিভিন্ন মসনুন দু‘আ আছে। যার জন্য বিস্তারিত দেখুন এই বান্দার খেলা ‘মুসলিমের দু‘আ’ বইটি। উল্লেখ্য
যে, ফরয সলাত শেষে মাথায় হাত দিয়ে ‘বিসমিল্লা-ইল্লাযি লা-ইলা-হা গাইরুহু আর-রাহমানুর-রহীম, আল্লাহুম্মা আযহিব আন্নিল হাম্মা ওয়াল হাযনা’ বলতে হবে মর্মে, ত্বরারনীতে
যে বর্ণনাটি এসেছে তার সনদ নিতান্তই যঈফ, যা
আমলযোগ্য নয়। (সিলসিলা যইফাহ
হা/৬৬০, ২/১১৪ পৃঃ, যইফুল জামে হা/ ৪৪৯২)
৮০। প্রচলিত ভুলঃ এদেশের একটি প্রশিদ্ধ ফাতওয়া গ্রন্থে একটি সুন্নাহ বিরোধী
ফতওয়া দেখা যায় তাহল ঈদের সলাতের পর বাড়ীতে ফিরে আসার পর চার রাকা‘আত নফল সলাত পড়া মুস্তাহাব। (ফাতওয়ায়ে আলমগীরী-১/ ৩৩৬ পৃঃ)
* রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, হাদীস। নাবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) ঈদের সলাতের আগে এবং পরে কোন সলাত আদায় করেননি। (সহীহ্ বুখারী-২/ ৯১৩ ই.ফা.বা)
৮১। প্রচলিত ভুলঃ পল্লী গ্রাম এবং মাঠে ময়দানে অধিবাসী যাদের উপর জুমু‘আ ওয়াজিব না
তাদের জন্য জায়েজ আছে জুমু‘আর দিন আযান ইক্বামতসহ যোহরের সলাত জামা‘আতের সাথে আদায় করা। (অনুরূপ) গ্রাম্য লোক যদি শহরে প্রবেশ করার এরূপ নিয়্যাত করে
যে, সে জুমু‘আর ওয়াক্তের পূর্বে বা পরে চলে যাবে, তবে তার
উপর জুমু‘আ ওয়াজিব হবেনা। (ফাতওয়ায়ে আলমগীরী-১/ই.ফা.বা. ৩৫৫ পৃঃ)
* রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ উল্লিখিত ফাতওয়ায় গ্রামে জুমু‘আ ওয়াজিব নয় এবং যোহর পড়ার ফাতওয়া দেওয়া হয়েছে। অথচ ‘গ্রামে ও শহরে জুমু‘আর সলাত’ নামে একটি
অনুচ্ছেদ রচিত হয়েছে সহীহুল বুখারীতে। অনুচ্ছেদ
নং ৫৬৭। বুখারী ২য় খন্ড ই.ফা.বা। এই অনুচ্ছেদের ৮৪ নং হাদীসে ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ ‘‘ আল্লাহর
রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর মাসজিদে জুমু‘আর সলাত অনুষ্ঠিত হবার পর প্রথমে জুমু‘আর সলাত অনুষ্ঠিত হয় বাহরাইনে জওয়াসা নামক স্থানে অবস্থিত
আবদুল কায়স গোত্রের মাসজিদে। অনুরূপভাবে
৮৪৯ নং হাদীসে ওয়াদিউল কুরার একটি স্থানে কৃষ্টি জামির আশেপাশে একদল সুদানী ও
অন্যন্যরা বসবাস করতেন আর সেখানে তারা জুমু‘আ কায়েম করেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) মদ্বীনায় ১ম জুমু‘আ বনি সালিম ইবনে আওফে যা ছিল বতনেওয়াদী ওয়াদীরে রানুনায়। (আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া ই.ফা.বা, -৩/৩৫৭ পৃঃ) এ স্থানটিও শহর ছিলনা। শুধুকি তাই? সূরা জুমু‘আর আবেদন কি তাহলে শুধু শহরবাসীর জন্য। এ সূরার নির্দেশ ও ফরজিয়াতকে পালন করতে গ্রামবাসীকে মহান
আল্লাহ ও তাঁর নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) তো কোথাও নিষেধ করেননি?
৮২। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের সমাজে অনেক মুসল্লীদের দেখা যায় মাঠে ময়দানে
উন্মুক্ত স্থানে সুত্রা বিহীন অবস্থায় সলাত আদায় করতে, এবং
সামনে থেকে অতিক্রম কারীকে বাঁধাও দেওয়া হয়না। অথচ তা
সুন্নাত বিরোধী
* রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ যে জিনিষ দ্বারা কোন জিনিষকে আড়াল করা হয় তাকে সুতরা বলে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম সর্বদা সুত্রা
রেখে সলাত আদায় করতেন। সুত্রা ব্যবহার করা ওয়াজিব। (তামামুল মিন্নাহ-৩০০ পৃঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহিওয়া সাল্লাম বলেনঃ ‘‘সলাতরত ব্যক্তির সামনে সুত্রার ভিতরে
কেউ অতিক্রম করলে, সলাতী যেন তাকে বাঁধা দেয়, প্রয়োজন হলে লড়াই করবে।’’ (সহীহ্ বুখারী, সহীহ্
মুসলিম, মিশকাত-৭৪ পৃঃ) সলাতরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে অতিক্রম করতে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম কঠোরভাবে
নিষেধ করেছেন। (সহীহ্ বুখারী, সহীহ মুসলিম, বুলুগুল
মাবাম-৬৭ পৃঃ,
ইমামের সুতরাই মুক্তাদীর জন্য যথেষ্ঠ। (সহীহ্ বুখারী, সহীহ্
মুসলিম, মিশকাত-৭৪ পৃঃ)
জুমু‘আর দিনে খুত্বা দেওয়ার উদ্দেশ্যে খতিবগণ মিম্বারে উঠে সালাম দেয়না। অথচ তা
সুন্নাহ বিরোধী।
* রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ জুমু‘আর দিন খুত্বা দেওয়ার উদ্দেশ্যে
মিম্বারে উঠার সময় সালাম দেওয়া সুন্নাত। জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, ‘‘নাবী কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) যখন মিম্বারের
উপর উঠতেন,
তখন সালাম দিতেন।’’ (ইবনু মাজাহ্ হা/১১০৯, আলবনী, সহীহ্ ইবনু মাজাহ্ হা/৯১৭) যাদুল আ‘আদ-১/৪১৪) উল্লেখ্য যে, জুমু‘আর খুত্বার শুরুতে সূরা কাফ তেলাওয়াত করা সুন্নাত। (সহীহ্ মুসলিম, মিশকাত-১২৩
পৃঃ) অথচ এ সুন্নাতটি আমাদের সমাজে বিলুপ্ত প্রায়।
৮৪। প্রচলিত ভুলঃ ঈদের মাঠে মিম্বার ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। (সহীহ্ বুখারী-২/৪ পৃঃ ফতহুলবারী দ্বিতীয় খন্ড
৪৪৯ পৃঃ) এটা মারোআনী দেব‘আত। অথচ
আমাদের দেশের অনেক আলেমগণ মেম্বার নিয়ে তাতে খুত্বা দেন। এমনকি
অনেক ঈদের মাঠে মেম্বার পাকা করা হয়েছে, হচ্ছে। আর
আমাদের শ্রদ্ধেয় আলেমগণ এইসব মিম্বারে উঠে তাদের মূল্যবান ভাষণ দেন এবং
রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) সুন্নাত বর্জন করে মারোয়ানী বিদ‘আত প্রতিষ্ঠিত
করেন, দেখে মনে হয় যেন মৌলবী সাহেব নাবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহিওয়া সাল্লাম) থেকেও বড় হুজুর! (নাউজুবিল্লাহ)
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ আবু সা‘ঈদ খুদ্রী (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) ‘ঈদুল ফিত্র’ ও ‘ঈদুল আযহা’র দিন ‘ঈদমাঠে যেতেন এবং যেখানে তিনি প্রথম যে কাজ শুরু করতেন তা হ‘ল সলাত। আর সলাত
শেষ করে তিনি লোকদের দিকে মুখ করে দাঁড়াতেন এবং তাঁরা তাঁদের কাতারে বসে থাকতেন। তিনি তাদের নাসিহাত করতেন, উপদেশ দিতেন এবং নির্দেশনা দান করতেন। যদি তিনি কোন সেনাদল পাঠাবার ইচ্ছা করতেন, তবে তাদের আলাদা করে নিতেন। অথবা যদি কোন বিষয়ে নির্দেশ জারী করার ইচ্ছা করতেন, তবে তা জারী করতেন। অতঃপর তিনি ফিরে যেতেন। আবূ সাঈদ (রাঃ) বলেন, লোকেরা
বরাবর এ নিয়ম অনুসরণ করে আসছিল। অবশেষে
যখন মারওয়ান মদ্বীনাহর ‘আমীর হলেন, তখন ‘ঈদুল আযহা’ বা ‘ঈদুল ফিত্রের উদ্দেশ্যে আমি তাঁর
সঙ্গে বের হলাম। আমরা যখন ‘ঈদমাঠে’ পৌঁছালাম তখন
সেখানে একটি মিম্বার দেখতে পেলাম, সেটি কাসীর ইবনু
সালত্ (রাঃ) তৈরী করেছিলেন। মারওয়ান
সলাত আদায়ের পূর্বেই এর উপর আরেহণ করতে উদ্যত হলেন। আমি তাঁর কাপড় টেনে ধরলাম। কিন্তু তিনি কাপড় ছাড়িয়ে খুত্বা দিলেন। আমি তাঁকে বললাম, আল্লাহর
কসম! তোমরা (রসূলের সুন্নাত) পরিবর্তন করে ফেলেছ। সে বলল, হে আবূ সাঈদ!
তোমরা যা জানতে তা গত হয়েগেছে। আমি
বললাম, আল্লাহর কসম! আমি যা জানি তা তার চেয়ে ভাল, যা আমি জানি না। সে তখন
বলল, লোকজন সলাতের পর আমাদের জন্য বসে থাকেনা, তাই ওটা সলাতের আগেই করেছি। (সহীহুল বুখারী ১ম খন্ড, পর্ব
(১৩) দু’ঈদ, পৃঃ ৪৬৫ হা/ ৯২৬)
৮৫। প্রচলিত ভুলঃ ঈদের সলাতের শেষে আল্লাহ্র নাবী শ্রোতাদের বোধগম্য ভাষায় একটি
খুত্বা দিতেন। অথচ আমাদের মৌলবী সাহেবগণ ঈদের সলাতের পূর্বে (বাংলায়) মারওয়ানী
ভাষণ বা খুত্বা দেন এবং পরে একটির পরিবর্তে জুমু‘আর খু্ত্বার
ন্যায় আরবীতে দু’টি খুত্বা দিয়ে থাকেন। যা
সহীহ্ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয় বরং বিদ‘আত।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ পূর্বে উল্লিখিত আবূ সা‘ঈদ খুদ্রী (রাঃ) এর বর্ণিত হাদীস দ্বারা একটি খুত্বা সলাতের
পূর্বে মিম্বারবিহীন অবস্থায় প্রমাণিত হয়। উল্লেখ্য যে, আল্লাহর
নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) আমাদের জন্য বৎসরে দু’টি ঈদ অর্থাৎ খুশির দিন নির্ধারণ করেছেন। (সহীহ্ বুখারী-৪০২) অথচ আমরা তৃতীয় আর একটি ঈদ তৈরী করেছি
যাহা ঈদে মিলাদুন্নাবী নামে সারা ভারতবর্ষে মহা সমারহে প্রতি বৎসর পালিত হয়। যা নিঃসন্দেহে বিদ‘আত।
৮৬। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের সমাজে বেশীরভাগ আলেম ও মুসল্লীদের দেখা যায় যে, রুকূ
থেকে উঠে সাজদায় যাওয়ার সময় মাটিতে আগে হাঁটু রাখে ও পরে হাত রাখে। এ মর্মে ‘সহীহ্ হাদীসের আলোকে
হানাফীদের নামায শিক্ষা’ নামক গ্রন্থের লেখক সৈয়দ নজরুল ইসলাম সাহেব, আবু
দাউদের উদ্বৃতিতে একটি হাদীস উল্লেখ করেছেন, কিন্তু হাদীসটি সহীহ্ কিনা তা তিনি উল্লেখ করেন নাই। সত্য
কথা হ’ল হাদীসটি সহীহ্ নয় বরং যঈফ।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ সাজদায় যাওয়ার সময় মাটিতে আগে হাত
রাখতে হবে এবং পরে হাঁটু রাখতে হবে। এটাই
সহীহ্ হাদীস দ্বরা প্রমাণিত। আবু
হুরাইরা (রাঃ) হতে, বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল
(সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘‘ যখন
তোমাদের কেউ সাজদাহ্ করতে ইচ্ছা করবে তখন সে যেন উটের মত না বসে। বরং তার উভয় হস্তকে যেন উভয় হাঁটুর রাখার পূর্বে রাখে।’’ (আবু দাউদ, নাসাঈ, দারেমী, মিশকাত, হা/৮৯৯, সাজদাহ্ ও তার
ফযিলত’ অধ্যায়, সনদ সহীহ)। আবদুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) থেতে সহীহ মরফূ রেওয়াত এসেছে এই
মর্মে যে,
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) সাজদাহকালে
উভয় হস্তকে (যমীনে) রাখতেন হাঁটুদ্বয় রাখার পূর্বে’ (দ্রষ্টব্য সনদ সহীহ্ আলবানী, তাহক্বীক্ব, মিশকাত-১/২৮২
পৃঃ, টিকা নং-১) ইমাম আওযাই বলেন, আমি লোকদেরকে পেয়েছি এই অবস্থায় যে, তারা স্বীয় হস্তগুলিকে তাদের হাঁটুর পূর্বে রাখত। ইমাম মারওয়াবী উক্ত আছারটি স্বীয় ‘মাসায়েল’ গ্রন্থে
(১/১৪৭/১) সহীহ সনদে সঙ্কলন করেছেন। (আলবানী, সিফাতুসালাতিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম, ১৪০ পৃঃ) উল্লেখ্য যে, নবী
কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম সাজদায় যাওয়ার সময় হাঁটু আগে রাখতেন বলে
দারেমী ও সুনান চতুষ্টয়ের বরাতে ওয়েলবিন হুজুর (রাঃ) থেকে মিশকাতে। (হা/ ৮৯৮) যে বর্ণনাটি সংকলিত হয়েছে, তা সহীহ নয়, বরং যঈফ। তাছাড়া আবু হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসটি ক্বওলী ও
ওয়ায়েল (রাঃ) বর্ণিত হাদীসটি ফে’লী। দলীল গ্রহণের সময় ক্বওলী হাদীস অগ্রগণ্য হয়ে থাকে। উল্লেখ্য যে, দুই
সাজদাহর পরে দাঁড়ানোর সময় হাতের উপর ভর না দিয়ে দুই হাঁটুতে হাত রেখে দাঁড়ানোর
হাদীসগুলোও ‘যঈফ’ (দ্রঃ) আল্লামা যায়লা’ই হানাফী, নাসবুর রাইয়াহ
১ম খন্ড পৃঃ ৩৮৯) একদা মালিক ইবনু হুয়াইরিস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া
সাল্লাম) এর সলাত দেখান যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া
সাল্লাম) দ্বিতীয় সাজদাহ থেকে মাথা তুলে বসতেন এবং যমীনের উপর ভর দিলেন, তারপর দাঁড়ালেন (সহীহ্ বুখারী পৃঃ ১১৪১)। তবে কেউ অক্ষম হ’লে বা কোন ওযর
থাকলে শরীআত তাকে ছাড় দিয়েছে। এ
প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘ দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের উপর তিনি কোন সংকীর্ণতা রাখেননি।’’ (হজ্জ-৮৭, আলোচনা দ্রঃ
আলবানী, তাহক্বীক্ব মিশকাত-১/২৮৩ পৃঃ টিকা নং-১ ইরাওয়াউল গালীল-হা/
৩৫৭)
৮৭। প্রচলিত ভুলঃ দুর্গন্ধযুক্ত জিনিষ নিয় মাসজিদে যেতে আল্লাহর নাবী নিষেধ
করেছেন, অথচ আমাদের মাসজিদগুলোর পার্শে দেখা যায় প্রস্রাব পায়খানার
স্থান, যার কারণে অনেক মাসজিদে দুর্গন্ধের কারণে অবস্থান করা যায়না। মানবিক
কারণে প্রস্রাব পায়খানার জন্য বিভিন্ন স্থানে গণশৌচাগার তৈরী করা সরকারের
কাজ, যা উন্নত বিশ্বে দেখা যায়। যে দেশে
মাসজিদ নাই সে দেশের মানুষেরও প্রস্রাব পায়খানার প্রয়োজন হয়। সে
কারণে প্রয়োজনমত সরকার টয়লেটের ব্যাবস্থা রেখেছে। অথচ আমাদের দেশের
মাসজিদ কমিটির লোকেরা এ দায়িত্বটি গ্রহণ করে সরকারকে ফারেগকরে দিয়েছে।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া
সাল্লাম) বলেনঃ ‘‘যে ব্যক্তি এ বৃক্ষ (পিয়াজ-রসূন) থেকে
কোন কিছু খাবে সে যেন আমাদে মাসজিদের নিকটবর্তী না হয়।’’ (সহীহ্ বুখারী) অবশ্য রান্নার মাধ্যমে পিঁয়াজ-রসূনের
দুর্গন্ধ দুর হয়ে গেলে কোন অসুবিধা নেই। অনুরূপভাবে ধুমপান করে (মুখে দুর্গন্ধ নিয়ে) মাসজিদে আসাও
ঠিক নয়।
৮৮। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের সমাজে অনেক মুসল্লীদের দেখা যায় সলাতরত
অবস্থায় হাই প্রতিরোধ করেনা। অথচ তা
সুন্নাত বিরোধী।
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া
সাল্লাম) বলেনঃ ‘‘ তোমাদের কোন ব্যক্তির সলাত অবস্থায়
যতি হাই আসে তবে সাধ্যানুযায়ী প্রতিরোধ করার চেষ্টা করবে। কেননা ঐ (সময়) অবস্থায় শয়তান ভিতরে প্রবেশ করে। (সহীহ্ মুসলিম) প্রতিরোধ করার পদ্ধতি হচ্ছে, ঐ অবস্থায় মুখে হাত দেওয়া। যেমনটি অন্যান্য বর্ণনায় পাওয়া যায়।
৮৯। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের সমাজে অনেক মুসল্লীকে লক্ষ্য করা যায় সালাম ফেরানোর
সময় মাথাটা একটু উপর দিকে উঠিয়ে আবার নীচে নামিয়ে, উভয়
দিকে এরূপ করে। অথচ এটা সুন্নাতে রসূলের বিপরীত কাজ।
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া
সাল্লাম) ডান দিকে সালাম ফিরানোর সময় বলতেন, আস্
সালামুআলাইকুমওয়া রহমাতুল্লাহ্। সে সময়
তাঁর ডান গালের শুভ্র অংশ পিছন থেকে দেখা যেত। অনুরূপ বাম দিকে সালাম ফেরানোর সময় তার বাম গালের শুভ্র অংশ
দেখা যেত। (তিরমিযী, নাসাঈ, আবু দাউদ)
৯০। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের সমাজে অনেক মুসল্লীকে দেখা যায় সরাসরী ইমামের সাথে
সলাতে শরীক না হয়ে অপেক্ষা করে অর্থাৎ ইমাম সাজদায় থাকলে বসার অপেক্ষা করা। বসাবস্থায় থাকলে দাঁড়ানোর
অপেক্ষা করো তিনি যখন দাঁড়াবেন বা রুকূতে যাবেন তখন তার সাথে সলাতে
শামিল হবে। এটা সুন্নাত বহির্ভূত কাজ। বরং
ইমাম যে অবস্থাতেই থাকুক তার সাথে সলাতে শরীক হতে হবে।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ মু’আয বিন জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ‘‘ তোমাদের
কেউ যদি সলাতে উপস্থিত হয়ে ইমামকে কোন অবস্থায় পায় তবে সেভাবেই তারসাথে সলাতে শরীক
হবে ইমাম যেভাবে থাকেন।’’ (তিরমিযী)
৯১। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের দেশের অনেক মাসজিদে দেখা যায় কাতারের মধ্যে স্তম্ভ। যার ফলে
অনেক মুসল্লী নিজের ও অন্যের মধ্যে স্তম্ভ রেখে সলাত আদায় করে যা
সুন্নাত বিরোধী।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ কুর্রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) এর যুগে দু’স্তম্ভের
মধ্যখানে কাতারবন্দী হতে আমাদেরকে নিষেধ করা হত এবং সেখান থেকে আমাদেরকে তাড়িয়ে
দেওয়া হত। (ইবনু মাজাহ্)
৯২। প্রচলিত ভুলঃ প্রচলিত সমাজে হুজুররা বলে থাকেন ঈদের জামা‘আত ছুটে গেলে তা
আর আদায় করার দরকার নেই।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ আল্লাহর নাবীর যুগে সাহাবাগণ ঈদের
জামা‘আত না পেলে দু’রাকা‘আত সলাত পরিবারবর্গদের নিয়ে আদায় করতেন। (সহীহুল বুখারী,-১ কারো
ঈদের সলাত ছুটে গেলে সে দু’রাক‘আত সলাত আদায় করবে।
৯৩। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের দেশে ঈদের দিন খুত্বার শেষে যেরূপ সম্মিলিতভাবে দু’হাত তুলে দু’আ করা হয় ঐভাবে
জামা‘আতবদ্ধভাবে দু’আ করার বিধান আল-কুরআন ও সহী হাদীসে নেই। বরং তা সম্পূর্ণ
বিদ‘আত।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া
সাল্লাম) এর সাহাবাগণ ঈদের দিবসে পরস্পর সাক্ষাতের সময় ‘‘তাক্বাববালাহু-মিন্না ওমিনকুম।’’ আল্লাহ আমাদের ও আপনাদের (নেক আমল) কবুল করুন’ বলতেন। (বর্ণনা
করেছেন মুহামিলী হাফেয ইবনু হাজার উহার সনদকে হাসান বলেছেন। ফিক্হুস সুন্নাহ ১/২৭৪ পৃঃ)
৯৪। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের দেশের বেশিরভাগ মাসজিদে নির্দিষ্ট সময়ে
সলাত হয়না, বরং দেরী করে সলাত আদায় করা হয়। যা খুবই
কষ্টদায়ক।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ উবাদা ইবনুস সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘‘আমার
ইন্তেকালের পর এমন এক সময় আসবে যখন শাসকগণ (ইমামগণ) নির্ধারিত সময়ে সলাত আদায়ে
বিলম্ব করবে,
এমনকি মুস্তাহাব সময় শেষ হয়ে যাবে। কাজেই এসময় তুমি একাকী হলে নির্ধারিত সময়ে সলাত আদায় করে
নিবে। তখন এক ব্যক্তি বলেন, ইয়া
রসূলুল্লাহ! আমি কি পরে তাদের সাথে আবার সলাত আদায় করবো? তিনি বলেনঃ ‘‘হ্যাঁ, করতে পারো, তুমি যদি ইচ্ছা
করো।’’ (সহীহ্ মুসলিম হা/ ৩৩৬, ইবনে
মাজাহ্, ১/৪৪৯)
৯৫। প্রচলিত ভুলঃ আমাদের সমাজে অনেক মুসল্লীদের দেখা যায় উত্তম ও সুন্দর
পোষাক থাকা সত্ত্বেও ময়লাযুক্ত পোষাক, গেঞ্জি অথবা শুধুমাত্র গামছা বা তোয়ালে, দুর্গন্ধ
ও ময়লাযুক্ত
টুপি যা পরিধান করে বাজারে বা লোকসমাজে যেতে লজ্জাবোধ করে তাই নিয়ে আল্লাহর
সামনে দাঁড়িয়ে যায়। অথচ তা আল্লাহ্র আদেশের অবমাননা ও বদঅভ্যাস। তাই এসব
বদঅভ্যাস পরিত্যাগ করা উচিত।
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিঃ মহান আল্লাহ্ বলেনঃ ‘‘ হে আদম সন্তান! তোমরা প্রত্যেক সলাতের সময় তোমাদের সুন্দর
পোষাক পরিধান কর।’’ (সূরা আল-আরাফ-৩১) তিনি আরো বলেনঃ ‘‘ তোমার পোষাক পবিত্র কর।’’ (সূরা মুদ্দাস্সির-৫) এতে প্রমাণিত হয় যে, নর-নারী সকলকে সলাতের জন্য উত্তম ও পবিত্র পোষাক পরিধান করে
মহান মালিকের সামনে দাঁড়ানো উচিৎ।
৯৬। প্রচলিত ভুলঃ জামা‘আতের সলাতে সমস্ত ফরয, ওয়াজিবগুলো ইমামের অনুসরণ করা মুক্তাদীর জন্য ওয়াজিব। কিন্তু
সুন্নাত ও মুস্তাহাবের ব্যাপারে যদি শাফী মাযাহাবের হয় আর মুক্তাদী হানাফী
মাযহাবের হয় তখন রুকূতে যাওয়ার ও উঠার সময় হানাফী মুক্তাদী হাত উঠাইবেন না। যেহেতু
হাত উঠানো হানাফী মাযাহাবে সুন্নাত নয়, শাফী মাযাহাবে সুন্নাত। অতএব
ইমামের সুন্নাতের অনুসরণ করা জরুরী নয়। এই
প্রকার যদি ফজরের সলাতে শাফী মাযহাবের ইমাম দু’আয়ে কুনূত পাঠ
করে। তখন হানাফী মুসল্লী দু’আ কুনূত পাঠ করিবেনা বরং চুপ করিয়া থাকিবে, যেহেতু
ফজরের সলাতে দু’আ কুনূত পড়া শাফী মাযহাবের সুন্নাত কিন্তু হানাফী মাযহাবে
সুন্নাত নয়। আর যদি হানাফী মাযহাবের লোক শাফী মাযহাবের ইমামের পিছনে
ঈদের সলাত আদায় করে এবং ১২টি তাকবীর বলে, তবে হানাফীরা ৬ তাকবীর বলিয়া চুপ করিয়া থাকিবে।যেহেতু শাফী মাযহাবের ১২ তাকবীর আর হানাফী মাযহাবে ৬ তাকবীর
বলা ওয়াজিব। (মোকছুদুল মোমেনীন বেহেস্তের কুন্জী-১৩১ পৃঃ, মাসয়ালা
নং-৭ লেখক, হাফেয মওলানা আরীফ হক্বানী, প্রখ্যাত আরবী সাহিত্যিক, ফাজেলে
দেওবন্দ, ইউ,পি, ভারত প্রকাশক মাহমুদিয়া লাইব্রেরী-১৯৯৯ ইং)
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ নাবী কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘‘ ইমাম এই জন্যই নির্দিষ্ট করা হয় যেন, তার পূর্ণ অনুসরণ করা যায়। সুতরাং সে যতক্ষণ না রুকূ করে তোমরা রুকূ করিওনা, আর যতক্ষণ না সে উঠে তোমরাও উঠ না। (সহীহ্ বুখারী-১/৩১৯, হা/৬৮৮)
উল্লিখিত ‘মোকছুদুল মোমেনীন’ বক্তব্য
সম্পূর্ণটাই নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাত বিরোধী কারণ ইমাম
চতুষ্ঠায় সকলেই আহলে সুন্নাহর অনুসারী ছিলেন, এবং
ইমাম আবু হানীফাসহ সকল ইমাম বলেছেনঃ ‘‘ সহীহ্
হাদীস পাইলে সেটাই আমার মাযহাব’ অতএব মোকছুদুল
মোমেনীন উল্লিখিত ফতওয়া সবই মনগড়া এটা কোন ইমাই বলেননি। যদি উক্ত বক্তব্য সঠিক হয় তা হলে, চার ইমামের বড় ইমাম আবু হানীফার নামেইতো হানফী মাযহাব তার
পূর্বে সাহাবা (রাঃ) তাবেই তাবা তাবেইর যুগে তো কোন কোন মাযহাব ছিলনা। তখন তারা কোন পদ্ধতি অনুযায়ী সলাত আদায় করেছিলেন। তাদের মধ্যে কি এমন কোন বিষয় ছিল যে, এটা আবু বক্বর এর মাযহাবের সুন্নাত ওমর এর মাযহাবের
অনুসারীরা তার অনুসরণ করবেনা বরং তার সকলেই একই পদ্ধতিতে নাবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অনসরণে রফউল ইয়াদাইন, ফযরের
সলাতে কুনূত,
১২ তাকবীরে ঈদের সলাত আদায় করতেন। এ বিষয়ে সুন্নাত জানার জন্য এই বই এর ভূমিকা এবং ২১ নং ও ৫৬
নং প্রচলিত ভুল দেখুন।
৯৭। প্রচলিত ভুলঃ ইমাম কুদুরী বলেনঃ ‘‘ আর নিজের নাক ও কপালের উপর সাজদাহ করবে। কেননা
নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিয়মিত এরূপ করেছেন।’’ তবে যদি
দু’টির একটির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখে তাহলে ইমাম আবু হানীফার মতে
জায়েয। (হিদায়া
৮৪ পৃঃ)
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ ‘‘ঐ ব্যক্তির সলাত বিশুদ্ধ হয়না যে, কপালের মত করে নাক মাটিতে ঠেকায় না। (দারাকুত্বনী, ত্ববারানী
-৩/১৪০/১) নাসিরুদ্দিন আলবানী, সিফাতু
সলাতুন্বাবী-১৩৫ পৃঃ) অনুরূপভাবে কপাল ও নাকের সাহায্যে সাজদাহ্ করার কথা সহীহ্
বুখারী, সহীহ্ মুসলিমের। আবু
দাউদ ১/১৬ পৃঃ দ্রষ্টব্য।
তাছাড়া নাক দ্বারা সাজদাহ করার সম্পর্কে সহীহ্ বুখারীতে ২টি
অধ্যায় রচিত হয়েছে। যেমনঃ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী
(সাল্লালাহু আলাইয়ি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ আমি সাতটি অঙ্গের দ্বারা সাজদাহ্
করার জন্য নির্দেশিত হয়েছি। কপাল
দ্বারা এবং তিনি হাত দিয়ে নাকের প্রতি ইশারা করে এর অন্তর্ভূক্ত করেন, তার দু’হাত দু’হাঁটু এবং দু’পায়ের
আঙ্গুলসমূহ দ্বারা। আর আমরা যেন চুল ও কাপড় গুটিয়ে না নেই। (সহীহুল বুখারী-১ হা/৮১২ পৃঃ ৩৬৯) মুসলিম ভাই ও বোনেরা উপরে
আপনারা লক্ষ্য করেছেন উল্লিখিত ক্ষেত্রে হিদায়ার ফাতওয়া দ্বারা বুঝা যায় ইমাম আবু
হানীফা (রাঃ)-এর মত হাদীসের বিরুদ্ধে। আমরা
বিশ্বাস করতে পারছিনা যে, এমন স্পষ্ট হাদীস বিরোধী ফাতওয়া কি
কখনও ইমাম হানীফা (রাঃ) দিয়েছেন? না তার নামে
তৈরী করা হয়েছে? নাকি এ বিষয়ে তার কোন হাদীস জানা
ছিলনা, তাইবা কেমন করে হয়। যেখানে হিদায়ার একই পৃষ্ঠায় তারই দুই ছাত্র হাদীস মুতাবিক
মত প্রকাশ করেছেন, সেখানে তিনি কেন হাদীসের বিরুদ্ধে
ফাতওয়া দিবেন?
বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে ভাববার নয় কি?
উল্লেখ্য যে, ইতিস্তখারার
সলাত দিনে ও রাতে যখন ইচ্ছা পড়া যায়। ইস্তি
খারার পর শরীআত সম্মত যে কাজের দিকে মন টানে সেটা করা উচিৎ। স্বপ্নে কিছু দেখা যাবে এরূপ ধারণা দলীল সম্মত নয়। (সহী ফিহুস সুন্নাহ ১/৪২৬ পৃঃ)
৯৮। প্রচলিত ভুলঃ তিন বা চার রাকাআত বিশিষ্ট ওয়াজিব বা ফরয সলাতের দ্বিতীয়
রাকাআতে তাশাহহুদ এর পর ভুল বশতঃ দুরুদ পড়া শুরু করলে যদি ‘‘ আল্লাহুম্মা
সল্লেআলা মুহাম্মাদেন’’ পর্যন্ত বা আরো বেশী পড়ে ফেলে তাহলে সাজদায়ে সহো ওয়াজিব হবে। (আহকামে
বিন্দেগী ১৯৮)
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পদ্ধতিঃ যখন তোমরা প্রত্যেক দুই রাকআতের মাঝে
বসবে তখন তোমরা বলবে আত্তাহিয়াত——-শেষ পর্যন্ত। অতঃপর তোমাদের যে কেউ তার পছন্দমত ইচ্ছাধীন দু’আ নির্বাচন করে তার দ্বারা মহান আল্লাহর নিকট দু’আ করবে’। (নাসাঈ, আহমাদ, তাবারানী তার
কাবীর গ্রন্থে -৩/২৫/১-সনদ সহীহ)। আল্লামাহ
নাসিরুদ্দ্বীন আলবাণী (রাহিমানুল্লাহ) বলেন, আমার
কথা এই যে,
হাদীসের বাহ্যিক ভঙ্গি প্রত্যেক তাশাহহুদে দু’আ পড়া শরীয়তসিদ্ধ হওয়ার প্রতি নির্দেশ করে-যদিও তার পরে
সালাম না থাকে। ইবনু হায্ম (রহঃ) এরও উক্তি তাই। (আলবাণী, সিফাতুস সালাতিন
নাবী-১৬০ পৃঃ ৪নং টিকা)
৯৯। প্রচলিত
ভুলঃ আমাদের সমাজে অধিকাংশ মাসজিদের ঈমামদের দেখা যায় সলাতে তারা
মাসনুন ক্বির’আত পড়ে না এমনকি অনেকে জানেও না মাসনুন ক্বিরা’আত কি? অথচ
নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রত্যেক সলাতে যেসব
সূরাগুলি তিলাওয়াত করতেন আমাদেরও তাই করা উচিত।
* রসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পদ্ধতিঃ নিম্নে রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাতী
ক্বিরা’আত দলীল ভিত্তিক চার্ট প্রদান করা হ’লঃ
সলাত
|
সুন্নাতী ক্বির’আত
|
প্রমাণ
|
ফজর
|
সূরা ক্বাফ, তাকবীর, মুমেন, নাস, ফালাক (সফরে), যুলযিলাহ, ইমরান ৬৪ হতে
সিজদাহ্ দাহর জুমুআর দিন
|
সহীহ্ বুখারী, সহীহ মুসলিম, নাসাঈ, আবু দাউদ, মিশকাত
|
যোহর
|
সূরা অল্লাইল, আলা, বুরুজ, ত্বারিক
|
সহী ইয়াইন, সুনানে আরবা, মিশকাত
|
আছর
|
লোকমান যাবতীয় মোফাসসাল, হুজরাত, নাস পর্যন্ত
|
মুয়াত্তা ইমাম মালিক
|
মাগরিব
|
সূরা তুর, আল-মুরসালাত, হা-মীম,
দুখান, আরাফ, কাফেরুন,
ইখলাস, সফ্ফাত, আলা ত্বীন,
নাস, ফালাক, কখনও কেছারে মোফাসসাল, (কদর-নাস)
|
নাসাঈ, মিশকাত, সহীহ বুখারী,
সহীহ মুসলিম, যা-দুল মায়াদ
|
এশা
|
সূরা আলাক, আশ-সামছ, অল্লাইলে,
অত্বীন আলা
|
সহীহ মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ
|
জুমুআ
|
সূরা আলা, গার্শিয়াহ, জুমুআ, মুনাফেকুন।
|
সহীহ মুসলিম
|
১০০। প্রচলিত
ভুলঃ রাত্রিবেলা নিদ্রা যাইবার পূর্বে উযূ করত, পাক-পবিত্র
পোশাক পরিধান করত, খালেস দিলে দুই রাক‘আত নফল সলাত আদায় করিবে। অতঃপর
নিম্মের দু‘আটি পাঠ করিয়া উত্তর দিকে মাথা রাখিয়া ক্বেবলামুখী কাত হইয়া নিদ্রা
যাইবে। আল্লাহ তা‘আলার অসীম রহমতে কার্যের ফলাফল স্বপ্নের মাধ্যমে জানিতে
পরিবে। এক রাত্রিতে কাঙখিত বিষয় ফলাফল জানিতে না পারিলে তিন রাত্রি
পর্যন্ত এস্তেখারা করিতে হইবে। (মোকছুদুল মোমেনী-২০৬ পৃঃ)
রসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পদ্ধতিঃ ইস্তেখারা অর্থ কোন বিষয়ের ভাল দিকটা
খোঁজ করা কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজে যাওয়ার আগে তার জন্য ইস্তিখারা করা উচিৎ। ইস্তিখারর নিয়ম সম্পর্কে সাহাবী জাবের (রাঃ) বলেনঃ ‘‘রসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে
বিভিন্ন বিষয়ে ইস্তিখারা করার শিক্ষা ঐভাবে দিতেন, যেভাবে তিনি আমাদেরকে কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন। তিনি (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ‘‘যখন তোমাদের কেউ কোন কাজের ইচ্ছা করবে, তখন সে যেন ফরয সলাত ছাড়া দু’রাক‘আত (নফল) সলাত পড়ে তার পর নিম্মের দু’আটি পড়ে। দু‘আ পড়ার সময় ‘হা-ল আমরা শব্দের স্থানে ঐ কাজটির উল্লেখ
করতে হবে, (যে জন্য ইস্তিখারা করা হবে) (সহীহ্ বুখারী, মিশকাত-৩১১৭
পৃঃ)