কাদিয়ানীরা কাফের কেন?
==================মুফতি ওসমান আল-হুমাম উখিয়াভী।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।
(এক)
আগেই জেনে নিন, কাদিয়ান একটি গ্রামের নাম। ভারত সীমান্ত এলাকার পাঞ্জাব প্রদেশের একটি জেলার নাম গুরুদাসপুর। উক্ত জেলায় একটি গ্রামের নাম কাদিয়ান’। ১৯০১ সালে ওই গ্রামেরই এক লোক নিজেকে নবী দাবি করেছিল।
Qadiani exposed !! Death of Mirza Ghulam Ahmad Qadiani in Toilet. see Video in this Link
লোকটি পরবর্তিতে তার গ্রামের নামেই প্রসিদ্ধি লাভ করে। তার অনুসারিরা সারা বিশ্বে “কাদিয়ানী” নামে পরিচিত। বিশিষ্ট উলামায়ে কেরাম তাদের কথিত (ভন্ড) নবীর ধর্মকে কাদিয়ানী ধর্ম বলেই আখ্যায়িত করেছেন। যেহেতু কাদিয়ানী ধর্মমতের প্রতিষ্ঠাতা মির্যা গোলাম আহমদ ছিল কাদিয়ান’ নামক গ্রামেরই অধিবাসী। যদিও লোকটি ইতিপূর্বে নিজেকে কখনো ঈসা মসীহ হবার, কখনো বা ইমাম মাহদি ইত্যাদি হবার দাবি করেছিল।
(সহিহ হাদিসের আলোকে ইমাম মাহদি (আ)-এর আগমন-ভবিষৎবাণী শীর্ষক লেখাটি পড়তে ক্লিক করুন :www.markajomar.com/?p=1696)
সারা বিশ্বে মুসলিম ধর্ম বিশেষজ্ঞদের সর্বসম্মত ফতুয়ার ভিত্তিতে প্রায় সবগুলো মুসলিম শাসকবৃন্দ কাদিয়ানিদের মুরতাদ ও ধর্মচ্যুত বলে রাষ্ট্রীয় ভাবে ঘোষণা দিতে থাকে। সবার আগে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ ১৯৭৪ ঈসায়ীর সেপ্টেম্বরে কাদিয়ানিদের অমুসলিম সংখ্যালঘু বলে ফরমান জারি করে। তারপর আরব-বিশ্ব সহ অন্যান্যরা।
.
(দুই)
এ কথা আজ আর কারো অজানা নয় যে, বৃটিশ সরকারের বিশেষ এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ঊনবিংশ শতাব্দির শেষের দিকে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে নবীরূপে দাঁড় করিয়ে দেয়। এ ব্যক্তি নানা উদ্ভট দাবি দাওয়ার মাধ্যমে ইসলামের বহু স্বতঃসিদ্ধ বিষয়কে অস্বীকার করতে থাকে। পরে তার স্বরূপ উন্মোচন করে দেন মুসলিম বিশেষজ্ঞগণ। পবিত্র কুরআন আর সহিহ হাদিসের আলোকে তাকে এবং তার অনুচরদের সুস্পষ্টভাবে কাফের হবার ফতুয়া জারি করেন।
নবুওয়াতের দাবিদার মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী ১৯০৮ সালে হঠাৎ কলেরায় আক্রান্ত হয়ে লাঞ্ছনাকর ও ঘৃণিতভাবে মৃত্যুবরণ করে। তার মৃত্যুর পর তার নির্বোধ অনুচররা ইহুদী খ্রিষ্টান শক্তির প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ফিতনার এ দাবানল সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়ার প্রয়াস চালায়। ইতিমধ্যে বহু মুসলিম রাষ্ট্র তাদেরকে রাষ্ট্রীয় ভাবে কাফের ঘোষণা করেছে এবং সেসব দেশে তাদের প্রকাশনা ও প্রবেশ পর্যন্ত নিষিদ্ধ করেছে। সৌদি আরব কাদিয়ানিদের কাফের আখ্যায়িত করার পরপরই তাদের হজ্ব ভিসা আজীবনের জন্য বাতিল করে দিয়েছে।
.
প্রায় ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ এ বাংলাদেশেও ভন্ড নবী মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানির অনুচরদের অমুসলিম ঘোষণা করার দাবি উঠেছে। তাদের খপ্পরে পড়ে কোনো মুসলিম যেন বেঈমান হয়ে না যায় সেজন্য তাদের রাষ্ট্রীয় ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করার প্রতিশ্রুতি পত্রে এদেশ স্বাক্ষরকারীও বটে। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদ বৃটিশ ও তাদের মিত্রশক্তির রাক্ষসী ইশারায় এ দেশে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণার গণদাবি বারংবার উপেক্ষিত হচ্ছে। যার ফলে কাদিয়ানিদের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ ও বিভ্রান্তিমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে। যা ক্রমান্বয়ে ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে।
♦খতম আর খাতাম শব্দের বিশ্লেষণ :
খাতমুন নাবুওয়াত এর পরিচয় প্রদানে ﺍﻻﺳﺘﻘﺎﻣﺔ ﻋﻠﻲ ﺍﻻﻳﻤﺎﻥ গ্রন্থকার বলেন:
.
ﺧﺘﻢ ﺍﻟﻨﺒﻮﺓ ﻫﻲ ﺍﻥ ﻳﺆﻣﻦ ﻋﻠﻲ ﺍﻥ ﺁﺧﺮ ﺍﻻﻧﺒﻴﺎﺀ ﻭ ﺧﺎﺗﻢ ﺍﻟﺮﺳﺎﻻﺕ ﻫﻮ ﺳﻴﺪﻧﺎ ﻭ ﻧﺒﻴﻨﺎ ﻣﺤﻤﺪ ﺻﻠﻌﻢ ﺣﻴﺚ ﺍﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻗﺪ ﺧﺘﻢ ﺑﻪ ﺳﻠﺴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺒﻮﺓ ﻭﺍﻟﺮﺳﺎﻟﺔ. ﻭ ﻛﻞ ﻣﻦ ﺍﺩﻋﻲ ﺑﺎﻟﻨﺒﻮﺓ ﺑﻌﺪﻩ ﻓﻬﻮ ﻣﻦ ﻗﺒﻴﻞ ﺍﻟﺪﺟﺎﻟﻴﻦ ﻭﺍﻟﻜﺬﺍﺑﻴﻦ .
অর্থাৎ খাতমুন নাবুওয়াত হল হযরত মুহাম্মদ (সা)-কে সর্বশেষ নবী ও রাসূল বলে এভাবে বিশ্বাস করা যে, অবশ্য আল্লাহতালা তাঁর মাধ্যমে নাবুওয়াত ও রেসালাতের ধারাবাহিকতা সমাপ্ত করে দিয়েছেন। আর যারা তারপর নবুওয়াতের দাবি করবে, তারা দাজ্জাল ও মিথ্যাবাদী।
জ্ঞাতব্য :
কাদিয়ানী সম্প্রদায় নিজেদের গোমরাহিকে জিইঁয়ে রাখার শেষরক্ষা হিসেবে পবিত্র কুরআনের আয়াতে অপব্যাখ্যা করা সহ কতেক গোঁজামিলের আশ্রয় নেয়। যা সীমাহীন মুর্খতার শামিল।
√ তারা বলে যে, খতম শব্দের অর্থ —শেষ’।
√ আর খাতাম শব্দের অর্থ — মোহর, সীল এবং আংটি।
পবিত্র কুরআনে উল্লিখিত শব্দটি — খাতাম (মোহর, সীল এবং আংটি)। কাজেই হযরত মুহাম্মদ (সা) ছিলেন পূর্বেকার নবী রাসূলদের নবুওয়াত এর সীল মোহর। আর সেই সীল মোহর তিনি একাই ছিলেন।
.
আর খাতাম শব্দের পরবর্তি শব্দটি — নাবিয়্যীন (নবীগণ)। এখানে নবীগণ দ্বারা উদ্দেশ্য হল ‘শরীয়ত সহ আগমনকারী নবী’। অর্থাৎ তাঁর দ্বারা ﺍﻻﻧﺒﻴﺎﺀ ﺫﻭ ﺍﻟﺸﺮﻳﻌﺔ বন্ধ হয়েছে ; কিন্তু স্বাধারণ নবীদের আগমন বন্ধ হয়নি। (এ পর্যন্ত কাদিয়ানীদের বক্তব্য শেষ হল)।
↑
আমাদের জবাব :
নবুওয়াতের দাবিদার মির্যার অনুসারীদের উপরুল্লিখিত উদ্দেশ্যমূলক দাবিগুলোর জবাব নিম্নরূপ–
১-খাতাম শব্দের আভিধানিক অর্থ — ছাপ, সীল মোহর বা আংটি ; বহুবচনে ﺧﻮﺍﺗﻢ (খাওয়াতিম)।
কিন্তু কাদিয়ানিদের দাবি অনুসারে পবিত্র কুরআনে উল্লিখিত “খাতাম ( ﺧﺎﺗﻢ)” শব্দটিকে ‘সীলমোহর’ অর্থে ধরে নিলেও হযরত মুহাম্মদ (সা) তিনি শেষনবী হিসেবে সাব্যস্ত হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ধরণের বিপত্তি বাধেনা। কেননা তাদেরই উক্ত দাবি অনুসারে হযরত মুহাম্মদ (সা) পূর্বেকার নবী রাসূলদের নবুওয়াতের ক্ষেত্রে একমাত্র ‘খাতাম’ বা ‘সীল-মোহর’ হওয়াই প্রমাণিত হল। যার ফলে পবিত্র কুরআন একথা বুঝাতে চাচ্ছে যে, হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর পরে সব ধরণের নতুন নবী আসার পথ চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে। সেজন্য যারাই মুহাম্মদ (সা)-এর পর নতুন ভাবে নবুওয়াতের দাবি করবে, তারা দাজ্জাল ও মিথ্যাবাদী। একথা বুঝার জন্য আমাদের বেশিদূর যেতে হবেনা। আমাদের পার্থিব কিছু নিয়ম কানূন থেকেই শিক্ষা গ্রহণ করা যেতে পারে।
.
মনে করুন, আগামীকাল সারা দেশে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। প্রজাতন্ত্রের নির্বাচন কমিশনার সারা দেশে ব্যালট পেপার পাঠাতে শুরু করল। আর সবাই একথা ভাল করেই জেনে থাকবেন যে, প্রতিটি ব্যালট পেপার যেসব ব্যাগপত্রে থাকে সেসব ব্যাগপত্রের মুখ সীল করে দেন। যাতে উক্ত ব্যাগপত্রে অসৎ উপায়ে কেউ কোনো রকম হস্তক্ষেপ করা মাত্রই ধরা পড়ে যায়।
ঠিক তেমনি আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর মাধ্যমে আল্লাহতালা পৃথিবীতে নতুন করে নবী রাসূল আসার ধারাও সীল করে দিয়েছেন। ফলে নতুন করে নবী হওয়ার পূর্বাপর ধারাটি চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়। (সুবহানাল্লাহ)
২-
একটু আগেই “খাতামুন্নাবিয়্যীন” মানে নবীগণের সীল-মোহর এ অর্থ মেনে নিয়েই আমরা প্রমাণ করলাম যে, হযরত মুহাম্মদ (সা) তিনিই সর্বশেষ নবী। উনার নবুওয়াতের মাধ্যমে কেয়ামত পর্যন্ত দুনিয়ায় নবীদের নবুওয়াতধারা সীল তথা রুদ্ধ করে দেয়া হয়েছে।
এবার দেখার বিষয় হল, স্বয়ং নবী মুহাম্মদ (সা) হতে উক্ত খাতামুন্নাবিয়্যীন শব্দের সুস্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা সহিহ হাদিসে রয়েছে কিনা?
.
হ্যাঁ নিশ্চয়ই। আমরা বুখারি মুসলিম সহ অনেক কিতাবে এর প্রমাণ পেয়ে যাই। সহিহ বুখারি এবং মুসলিম কিতাবে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে —
.
و انا العاقب والعاقب الذي ليس بعده نبي
.
অর্থাৎ হযরত জুবাইর ইবনুল মুতঈম (রা) বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল (সা) ফরমায়েছেন ‘আমি হলাম আক্বিব। আক্বিব তিনি, যার পরে কোনো ধরণের নবী নেই।’
.
জ্ঞাতব্য :
.
উক্ত হাদিসে ‘আক্বিব’ তথা শেষে হওয়া— শব্দের উল্লেখ রয়েছে। এছাড়াও হাদিসে উল্লিখিত نبي (নবী) শব্দটি اسم النكرة (অনির্দিষ্ট বাচক বিশেষ্যপদ)। এতে বুঝানো হয়েছে যে, সকল প্রকারের নবুওয়াত-বাহক নবীর আগমন নিষিদ্ধ। হোক সেই নতুন শরীয়ত-বাহক কিংবা আগের নবীর অনুসরণে নতুন কোনো নবী— সবই নিষিদ্ধ। কাজেই মির্যার অনুসারীদের সকল দায় সারা অপব্যাখ্যা হাদিসের এ নীতি-বিরুদ্ধ হওয়ায় ধোপে টিকেনা।
.
সহিহ মুসলিম শরিফে আরো সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে যে, و ارسلت الي الخلق كافة و ختم بي النبيون
.
অর্থাৎ হযরত আবু হোরায়রা (রা) হতে বর্ণিত রাসূল (সা) ফরমায়েছেন “আমি প্রেরিত হয়েছি সমগ্র সৃষ্টির প্রতি। আমার মাধ্যমেই নবীগণের নবুওয়াতের ধারা সমাপ্ত করা হয়েছে।”
জ্ঞাতব্য: উক্ত হাদিসে একদম সুস্পষ্টভাবে ختم (খতম) শব্দের উল্লেখ রয়েছে। যার প্রকৃত অর্থ সমাপ্তি। সুতরাং বুঝা গেল, আয়াতের ভেতর خاتم النبيين শব্দের অর্থ ‘নবীগণের সমাপ্তকারি’ উদ্দেশ্য নেয়ারও যথেষ্ট কারণ ও যুক্তি রয়েছে। কারণ, পবিত্র হাদিস হচ্ছে পবিত্র কুরআনেরই পরিপূরক ও বিশ্লেষণ। তাই হাদিস ছেড়ে কুরআন বুঝার চেষ্টা করা সীমাহীন পথভ্রষ্টতারই আলামত।
.
সহিহ মুসলিম শরিফে (৪/১৭১৯) আরো এসেছে, হযরত ছাওবান (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা) ফরমায়েছেন إنه سيكون في امتي كذابون ثلاثون كلهم يزعم انه نبي و أنا خاتم النبيين لا نبي بعده رواه.مسلم
অর্থাৎ আমার উম্মতের মধ্যে অচিরেই এমন ত্রিশ জন মিথ্যাবাদীর আবির্ভাব হবে, যাদের প্রত্যেকেই নিজেদের নবী দাবি করবে। অথচ আমিই হলাম খাতামুন্নাবিয়্যীন, আমার পর কোনো নবী নেই।
জ্ঞাতব্য: এ হাদিসে খাতামুন্নাবিয়্যীন শব্দের ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে ‘লা নাবিয়্যা বা’দী’ (আমার পরে কোনো ধরণের নবী নেই)। উল্লেখ্য, হাদিসে “নবী” শব্দটি অনির্দিষ্ট বাচক বিশেষ্যপদ। এ সম্পর্কে একটু আগে আলোচনা করেছি।
যাইহোক, সহিহ হাদিসে খাতামুন্নাবিয়্যীন এর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা থাকার পরেও তার মর্মার্থ “সর্বশেষ নবী” এরকম মানে করার ক্ষেত্রে যাদের আপত্তি থাকবে, তাদের অজ্ঞতা আর অন্তরের বক্রতা এ দুটির চিকিৎসা অতিব জুরুরি।
(তিন)
♦মির্যা কাদিয়ানী নিজেকে নতুন শরীয়তবাহক রাসূল দাবি করার প্রমাণ :
মির্যা কাদিয়ানীর পুত্র মির্যা বশীরুদ্দিন মাহমুদ “হাকীকাতুন নবুওয়াত” পুস্তকে কতেক তথাকথিত ইলহামকে তার পিতার নবী এবং রাসূল হওয়ার পক্ষে স্বতন্ত্র দলিল বলে উল্লেখ করেছেন। এরূপ ৩৯টি ইলহামের উল্লেখ তিনি করেছেন। আমি তন্মধ্য হতে মাত্র কয়েকটি উল্লেখ করছি। যেমন –
১-মির্যার কথিত আরবী ভাষার ইলহামের একটি ছিল এই যে, اني مع الرسول أقوم و أفطر و أصوم অর্থাৎ আমি (আল্লাহ) রাসূলের সাথে কিয়াম করব, রোযা রাখব এবং ইফতার করব।
২-আরেক স্থানে রয়েছে : هو الذي أرسل رسوله بالهدي و دين الحق و تهذيب الأخلاق. অর্থাৎ তিনি আল্লাহ যিনি তার রাসূলকে (কাদিয়ানী) পাঠিয়েছেন হিদায়াত দিয়ে, সত্য দীন দিয়ে এবং চরিত্রের সংস্কারকর্ম দিয়ে।
৩-আরেক জায়গায় রয়েছে : إني مع الرسول أقوم و ألوم من يلوم অর্থাৎ আমি রাসূলের (কাদিয়ানী) সাথে দাঁড়াব এবং তিরস্কার করব যাকে তিনি তিরস্কার করবেন।
৪-আরেকটি জায়গায় এটিও রয়েছে যে, سيقول العدو لست مرسلا سنأخذه من ماره او خرطوم অর্থাৎ শত্রুরা বলবে, তুমি রাসূল নও। আমি (আল্লাহ) অচিরেই ধরব তার নাকের নরম জায়গা বা শক্ত জায়গা।
৫-কথিত আরেকটি ইলহামের ভাষ্য হল, إني مع الرسول أقوم و من يلومه ألوم অর্থাৎ আমি আমার রাসূলের সাথে দাঁড়াব। যাকে তিনি শাসন করবেন, আমিও করব।” এভাবে মির্যা কাদিয়ানী কথিত খোদায়ি ইলহামের প্রচারণার মাধ্যমে মির্যা নিজেকে আল্লাহতালার তরফ হতে প্রেরিত একজন নতুন নবী রাসূল বলে দাবি করেছিল। তো কাদিয়ানীরা এর পরেও মির্যাকে মুরতাদ বলে স্বীকার না করলে আমাদের কিবা করার আছে!
♦ সূরা নিসা, আয়াত নং ৬৯-এর অপব্যাখ্যা খণ্ডন :
কাদিয়ানী সম্প্রদায় বড্ড অদ্ভুত প্রাণী! ! হাদিসের সাথে মহা ধৃষ্টতা দেখানোর পাশাপাশি তারা আয়াতের ভেতরও সুবিধামত অপব্যাখ্যা দেয়। এভাবে তারা সীমাহীন অজ্ঞতা আর নির্বুদ্ধিতার দৃষ্টান্ত রেখে চলছে। তারা চিরাচরিত অভ্যাস মাফিক সূরা নিসার ৬৯ নং আয়াতের অপব্যাখ্যা করে পৃথিবীতে আরো আরো নতুন নবী আসার দাবি করে। যা আগ থেকেই আমার জানা ছিল। যেজন্য তাদের এহেন অপব্যাখ্যার স্বরূপ উন্মোচন করে দিতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। ইতিমধ্যে সেগুলোর চুলচেরা অনুসন্ধান চালিয়ে উপযুক্ত জবাবও দিয়ে আসছি। আয়াতটি হল:
ﻭَﻣَﻦ ﻳُﻄِﻊِ ﺍﻟﻠّﻪَ ﻭَﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝَ ﻓَﺄُﻭْﻟَـﺌِﻚَ ﻣَﻊَ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺃَﻧْﻌَﻢَ ﺍﻟﻠّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢ ﻣِّﻦَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻴِّﻴﻦَ ﻭَﺍﻟﺼِّﺪِّﻳﻘِﻴﻦَ ﻭَﺍﻟﺸُّﻬَﺪَﺍﺀ ﻭَﺍﻟﺼَّﺎﻟِﺤِﻴﻦَ ﻭَﺣَﺴُﻦَ ﺃُﻭﻟَـﺌِﻚَ ﺭَﻓِﻴﻘًﺎ
অর্থাৎ আর যে কেউ আল্লাহর হুকুম এবং তাঁর রসূলের হুকুম মান্য করবে, তাহলে যাঁদের প্রতি আল্লাহ নেয়ামত দান করেছেন, সে তাঁদের সঙ্গী হবে। তাঁরা হলেন নবী, ছিদ্দীক, শহীদ ও সৎকর্মশীল ব্যক্তিবর্গ। আর তাদের সান্নিধ্যই হল উত্তম। (সূরা নিসা: ৬৯)
জ্ঞাতব্য :তারা এ আয়াত হতে যে ব্যাখ্যা ধরে নেয় তা সীমাহীন ভুল এবং চরম বিকৃত মর্মার্থ। যে ব্যাখ্যা একমাত্র মির্যা কাদিয়ানীর অনুসারীরা ছাড়া পৃথিবীর কোনো মুফাসসীর করেন নি। উক্ত আয়াতের শানে নুযূল (আয়াত নাযিলের প্রেক্ষাপট) যাচাই করে দেখলেই কাদিয়ানীদের উদ্দেশ্যমূলক সেই চরম বিভ্রান্তির মুখোশ উন্মোচিত হয়ে যায়। তাফসীরে ইবনে কাসীর কিতাবের সরাসরি লিংক নিচে দেয়া হল। সেখান থেকেও আয়াতটির শানে নুযূল দেখা যেতে পারে।
♦সূরা নিসার ৬৯ নং আয়াত নাযিলের প্রেক্ষাপট:
সূরা নিসার ৬৯নং আয়াতের শানে নুযূল আলোচনা করতে গিয়ে আল্লামা ইবনে কাসীর (রহ) বেশকিছু রেওয়ায়েত উল্লেখ করেছেন। যেখানে সবগুলো রেওয়ায়েতই বুঝিয়েছে যে, উক্ত আয়াতের বিষয়বস্তু দুনিয়ার সাথে নয়, বরং পরকালিন জীবনের সাথেই সম্পর্কিত। অর্থাৎ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অনুসারিরা নাবিয়্যীন, সিদ্দিকীন, শুহাদা আর নেককারদের সংগী হওয়ার বিষয়টি কেবল পরকালিন জীবনেই ঘটবে। যেহেতু মুহাম্মদ (সা)-ই শেষ নবী। তাঁর মাধ্যমে পরবর্তী নবুওয়াতের ধারাকে সীল (চিরতরে বন্ধ) করে দেয়া হয়েছে। পবিত্র কুরআনে মুহাম্মদ (সা)-কে খাতামুন্নাবিয়্যীন তথা নবীগণের সীল-মোহর বা শেষনবী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
মির্যা কাদিয়ানীর অনুসারীদের একাংশ উক্ত আয়াতের শানে নুযূল এর প্রতি কোনো রকম ভ্রুক্ষেপ না করেই উদ্ভট ব্যাখ্যার আশ্রয় নেয়। তারা এ থেকে হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর পরেও আরো নবী দুনিয়ায় আবির্ভাব হবার দাবিদার। মূলত তাদের এসব কাণ্ডজ্ঞানহীন দাবি— মির্যার মুখ রক্ষা করা। ইতিহাস স্বাক্ষী যে, মির্যার জ্ঞানগর্ভ কথার চেয়ে বাগাড়ম্বরপূর্ণ কথাবার্তাই বেশি ছিল। তাফসীরে ইবনে কাসীরের ভেতর আয়াতটির শানে নুযূল বর্ণনা করতে গিয়ে একদম প্রথমেই বিশিষ্ট সাহাবী হযরত ছাওবান (রা)-এর একটি হৃদয় নিংড়ানো ঘটনা আলোকপাত করেছেন। তিনি হযরত ‘কালবি’ (রহ) এর সূত্রে লিখেছেন :
↓
ﻗﻮﻟﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ: } ﻭَﻣَﻦ ﻳُﻄِﻊِ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻭَﭐﻟﺮَّﺳُﻮﻝَ {… ﺍﻵﻳﺔ. [ 69]. ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻜﻠﺒﻲ: ﻧﺰﻟﺖ ﻓﻲ ﺛَﻮْﺑَﺎﻥَ ﻣﻮﻟﻰ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ، ﻭﻛﺎﻥ ﺷﺪﻳﺪ ﺍﻟﺤﺐ ﻟﻪ، ﻗﻠﻴﻞ ﺍﻟﺼﺒﺮ ﻋﻨﻪ؛ ﻓﺄﺗﺎﻩ ﺫﺍﺕ ﻳﻮﻡ ﻭﻗﺪ ﺗﻐﻴﺮ ﻟﻮﻧﻪ ﻭﻧﺤﻞ ﺟﺴﻤﻪ، ﻳﻌﺮﻑ ﻭﺟﻬﻪ ﺍﻟﺤﺰﻥ، ﻓﻘﺎﻝ ﻟﻪ [ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ]: ﻳﺎ ﺛَﻮﺑَﺎﻥُ، ﻣﺎ ﻏﻴَّﺮ ﻟﻮﻧﻚ؟
ﻓﻘﺎﻝ: ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﺎ ﺑﻲ ﻣﻦ ﺿﺮ ﻭﻻ ﻭﺟﻊ، ﻏﻴﺮ ﺃﻧﻲ ﺇﺫﺍ ﻟﻢ ﺃَﺭَﻙَ ﺍﺷﺘﻘﺖ ﺇﻟﻴﻚ، ﻭﺍﺳﺘﻮﺣﺸﺖ ﻭﺣﺸﺔ ﺷﺪﻳﺪﺓ ﺣﺘﻰ ﺃﻟﻘﺎﻙ، ﺛﻢ ﺫﻛﺮﺕ ﺍﻵﺧﺮﺓ ﻭﺃﺧﺎﻑ ﺃﻥ ﻻ ﺃﺭﺍﻙ ﻫﻨﺎﻙ؛ ﻷﻧﻲ ﺃﻋﺮﻑ ﺃﻧﻚ ﺗُﺮْﻓَﻊُ ﻣﻊ ﺍﻟﻨﺒﻴّﻴﻦ، ﻭﺃﻧﻲ ﺇﻥ ﺩﺧﻠﺖ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻛﻨﺖ ﻓﻲ ﻣﻨﺰﻟﺔ ﺃﺩﻧﻰ ﻣﻦ ﻣﻨﺰﻟﺘﻚ، ﻭﺇﻥ ﻟﻢ ﺃﺩﺧﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻓﺬﺍﻙ ﺃﺣْﺮَﻯ ﺃﻥ ﻻ ﺃﺭﺍﻙ ﺃﺑﺪﺍً. ﻓﺄﻧﺰﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻫﺬﻩ ﺍﻵﻳﺔ
অর্থাৎ এ আয়াত রাসূলের ক্রীতদাস হযরত ছাওবান (রা) এর প্রেক্ষিতে নাযিল হয়েছে। তিনি রাসূল (সা)-কে খুবই ভালবাসতেন। রাসূলকে ছাড়া কোনো কিছুতেই ধৈর্য ধারণ করতে পারতেন না। একদা রাসূল (সা) তার নিকট আগমন করলেন। ইত্যবসরে (তিনি দেখতে পেলেন) ছাওবান এর শরীর বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে এবং শরীর দুর্বল হয়ে পড়ছে। চেহারায় দুশ্চিন্তা বুঝাচ্ছে। এরই প্রেক্ষিতে রাসূল (সা) ছাওবানকে জিজ্ঞেস করলেন, কিসে তোমায় বিবর্ণ করে দিয়েছে?
জবাবে হযরত ছাওবান বললেন : আমার এ অবস্থা কোনো ক্ষতিকর বা অপদস্ততার জন্য নয়। তবে ব্যাপারটি হল, আমি আপনাকে যখন দেখিনা তখন দেখা পেতে অতিব আগ্রহী হয়ে পড়ি। আপনার সাক্ষাৎ পাওয়া পর্যন্ত আমি ভীষণ নির্জনতা অনুভব করতে থাকি।অতপর পরকালিন জীবনের আলোচনা করলাম। (ছাওবান বললেন) আমি পরকালে (কিয়ামতে) আপনাকে দেখতে না পাওয়ার আশংকা করছি। কেননা আমি জানি যে, আপনি নিশ্চয় নবীদের সাথেই উত্থিত হবেন। আর আমি যদি জান্নাতি হইও, তো আপনা তুলনায় খুব নিম্নমানের জান্নাতি হয়ে (আপনার কাছ থেকে দূরে) থাকব। আর যদি জান্নাতে প্রবেশ নাই করি, তাহলে তো সেই পরকালিন জীবনে কখনোই আপনার দেখা পাবো না” -এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তায়ালা ﻗﻮﻟﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ: } ﻭَﻣَﻦ ﻳُﻄِﻊِ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻭَﭐﻟﺮَّﺳُﻮﻝَ {… ﺍﻵﻳﺔ. [ এ আয়াত নাযিল করেছেন।
(তাফসীরে ইবনে কাসীর : সূরা নিসা, আয়াত ৬৯)।
তাফসীরে ইবনে কাসীরের লিংক: ( www.alro7.net/ayaq.php?aya=69&sourid=4#top0)
.
যাইহোক, বুঝতে পারলাম যে, উক্ত আয়াতটির বিষয়বস্তু হিসেবে যা ফুটে উঠে তার সম্পর্ক দুনিয়ার সাথে নয়, বরং পরকালের সাথে। অর্থাৎ যে কেউ আল্লাহর হুকুম এবং তাঁর রসূলের হুকুম মান্য করবে, তাহলে যাঁদের প্রতি আল্লাহ নেয়ামত দান করেছেন, সে রোজ কেয়ামতে তাঁদের সঙ্গী হবে। আল্লাহর নেয়ামতপ্রাপ্তগণ হলেন নবী, ছিদ্দীক, শহীদ ও সৎকর্মশীল ব্যক্তিবর্গ। সুতরাং কাদিয়ানিদের ব্যাখ্যাটি অসার ও বানোয়াট।
কাজেই উক্ত আয়াতের অপব্যাখ্যা করে যারা দুনিয়াতে আরো নতুন নবী-রাসূল আবির্ভাব হবার আক্বিদা রাখবে কিংবা বলবে যে ‘কুরআনে আছে, তাঁর অনুসরনে ও অনুকরনে তাঁর উম্মত হতে আরো নবী আসতে পারে’— (নাউযুবিল্লাহ), তারা নিঃসন্দেহ আয়াতের অর্থ বিকৃতিকারী এবং কাফির।
কারণ উক্ত আয়াত অবতরণের প্রেক্ষাপট যাচাই করলে সুস্পষ্ট হয়ে যাবে যে, আয়াতটিতে যেসকল নেয়ামতপ্রাপ্তদের সঙ্গী হবার সুসংবাদ দান করা হয়েছে সেই সুসংবাদটি কার্যত রোজ কেয়ামতের সাথেই সম্পর্কিত, দুনিয়ার জীবনের সাথে নয়।
মির্যার অনুসারীদের প্রতি চ্যালেঞ্জ
সূরা নিসার উক্ত আয়াত দিয়ে আপনারা যে ধুম্রজাল সৃষ্টি করছেন তার অসারতা তো একটু আগেই প্রমাণ হয়ে গেল! এখন আমি আপনাদের প্রশ্ন রাখতে চাই যে, শুধু কুরআন থেকে সুস্পষ্ট অর্থবোধক এমন একটি আয়াত (অর্থ এবং তাফসির সহকারে) দেখান, যেখানে শরীয়তবাহী কিংবা শরীয়তবিহীন নতুন কোনো নবী আসার পক্ষে বক্তব্য রয়েছে। জানি, কস্মিনকালেও পারবেন না!
.
আরেকটি প্রশ্ন, আপনাদের দাবি অনুসারে যদি পবিত্র কুরআনে নতুন করে কোনো নবী আসার প্রতি ইংগিত থাকত, তাহলে ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে নবীজির জীবদ্দশাতেই মুসাইলামাতুল কাজ্জাব নামক এক ব্যক্তি যখন নিজেকে নবী হওয়ার দাবি করল, তখন সাহাবায়ে কেরাম (রাদি:) কেন তার সাথে লড়াই করে তাকে হত্যা করলেন?
নবীজি (সা)ও বা কেন তাকে হত্যা করার জন্য সাহাবাদের প্রেরণ করেছিলেন??
নাকি নবীজি (সা) কুরআনের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন!! নাউযুবিল্লাহ।
ফলে বুঝা গেল, ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে নবী দাবিদার মির্যাকেও সে অভিন্ন কারণেই হত্যা করার হুকুম ছিল। কিন্তু বৃটিশের আশ্রয় প্রশ্রয়ে থাকায় মির্যা সাহেব বেচে গেলেন।
♦হাদিস অমান্য করার অভিনব কারসাজি :
মির্যার অনুসারীরা পবিত্র হাদিসকে বাতিল করার জন্য কিছু শয়তানি চালবাজির আশ্রয় নেয় এবং আয়াতকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে। যার কারণে ওরা নিজেদের ভুলটি সংশোধন করার পথ খুঁজে পায়না। তারা হাদিসকে অমান্য করার বেয়াদবি স্বরূপ সূরা জাশিয়ার ৬ নং আয়াতের মধ্যে যে ভুলটি করেন তা নিম্নরূপ। আয়াত হল- فباي حديث بعدالله و آياته يؤمنون
↓
মির্যার অনুসারীরা পবিত্র হাদিসকে বাতিল করে মতলব হাসিল করার জন্য সূরা জাশিয়ার উক্ত আয়াতের মধ্যে যে ভুল অনুবাদটি করে তা হল — ‘আল্লাহ এবং তার আয়াতের বিরুদ্ধে কোনো হাদিসই গ্রহণযোগ্য নয়’।
.
ভুল অনুবাদ সনাক্তকরণ :
↓
উক্ত আয়াতের ভেতর “আয়াত” শব্দের অর্থ হবে “নিদর্শনাবলি”। যার প্রমাণ আয়াতটির পূর্বোক্ত আয়াতেই রয়েছে। একটু খুঁজে দেখুন। অথচ তারা এস্থানে “আয়াত” মানে আয়াতই অর্থ নিয়েছে, যা সুস্পষ্ট ভুল।
এরপর “বা’দাল্লাহ ওয়া আয়াতিহী” এর অর্থ করেছে “আল্লাহ এবং তার আয়াতের বিরুদ্ধে” । কিন্তু এটাও ভুল। অথচ এর অর্থ হবে “আল্লাহ এবং তার নিদর্শনাবলির পর”।
তারপর তারা “ইউমিনূন” এর অর্থ করেছে “গ্রহণযোগ্য নয়”। এটাও চরম বিকৃতি এবং ভুল অর্থ। অথচ এখানে এর অর্থ হবে “বিশ্বাস স্থাপন করবে”। সুতরাং এবার আয়াতের অর্থ হবে — “অতএব তোমরা আল্লাহ এবং তাঁর নিদর্শনাবলির পরেই কোন কথায় বিশ্বাস স্থাপন করবে?”
যাইহোক, যাদের অনুবাদ এতটাই গলত আর বিকৃত তাদের বিশ্লেষণ কতটা সহিহ আর স্বচ্ছ হবে তা সবাইকে একবার ভেবে দেখা দরকার! এবার আমরা হাদিস শরিফের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে একটু আলোচনা করব।
♦ হাদিসের গুরুত্ব আর প্রয়োজনীয়তা :
ইমাম আবু হানিফা (রহ) (মৃত ১৫০ হিজরী) হাদিসের গুরুত্ব আর প্রয়োজনীয়তা বুঝাতে গিয়ে লিখেছেন : لولا السنة ما فهم احد منا القرآن অর্থাৎ সুন্নাহ বা হাদিস বিদ্যমান না থাকলে আমাদের কেউই কুরআন বুঝতে পারত না।”
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ) (মৃত ২৪১ হিজরী) লিখেছেন : إن السنة تفسير الكتاب و تبينه অর্থাৎ সুন্নাহ বা হাদিস হল কুরআনের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণকারী।”
শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহ) লিখেছেন : السنة بيان للكتاب و لا تخالفه অর্থাৎ সুন্নাহ বা হাদিস হল কুরআনের ব্যাখ্যাদানকারী এবং সুন্নাহ কুরআনের বিরুধিতা করেনা।”
কিন্তু আফসোস! !! কাদিয়ানিরা নিজেদের ভ্রান্ত মতবাদ জিইঁয়ে রাখার উদ্দেশ্যে একদিকে হাদিসকে অমান্য করার ধৃষ্টতা দেখায় আর অপর দিকে কুরআনের ভেতর অপব্যাখ্যার আশ্রয় নিয়েছে। আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন।
আরেকটি প্রশ্ন হল, মির্যার অনুসারীরা انا خاتم النبيين لا نبي بعدي শীর্ষক হাদিসের মধ্যে ভুল অনুবাদ করে বলে যে, “আমাকে বাদ দিয়ে কোনো নবুওয়াত নেই” ।
আমার প্রশ্ন, মির্যার উম্মতেরা যদি নিজেদেরই মতাদর্শে সঠিক হয়ে থাকে তাহলে আমাকে বলুন ﻻ ﻧﺒﻲ ﺑﻌﺪﻱ এর অনুবাদের ক্ষেত্রে “আমাকে বাদ দিয়ে” এ অর্থ কোথায় এবং কিভাবে রয়েছে ? এ অতিরঞ্জিত অংশটুকুর আরবীটা কী? অথচ ইতিপূর্বে প্রমাণ করা হল যে, কুরআনের কোনো আয়াতই সুন্নাহ বা হাদিসের বিরুদ্ধে যায়না। এতদ্ব্যতীত নবীজি (সা) সুনানে তিরমিযির আরেকটি হাদিসে সুস্পষ্টভাবে এ কথাও বলেছেন যে,
ﺍﻧﻘﻄﻌﺖ ﻓﻼ ﺭﺳﻮﻝ ﺑﻌﺪﻱ ﻭ ﻻ ﻧﺒﻲ ﺍﻥ ﺍﻟﺮﺳﺎﻟﺔ ﻭﺍﻟﻨﺒﻮﺓ ﻗﺪ
অর্থাৎ নবুওয়াত আর রেসালতের ধারা বন্ধ হয়ে গেছে। অতএব আমার পরে কোনো নবী রাসূল নেই।” তো এর কী উত্তর দেবেন? নাকি এখানেও অপব্যাখ্যার আশ্রয় নেবেন?
যাইহোক, গত ১৭/০১/২০১৩ ইং -এ দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকাতে কাদিয়ানিদের একটি ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয়েছিল। তা নিশ্চয় সবার জানা আছে। সেখানে সুস্পষ্টভাবে লেখা আছে “আমরা দৃঢ় প্রত্যয়ের সংগে বিশ্বাস রাখি, কুরআন শরিফ শেষ ঐশীগ্রন্থ এবং এর শিক্ষা, বিধান, আদেশ ও নিষেধের মাঝে এক বিন্দু বা কণা পরিমাণ সংযোজনও হতে পারেনা……” এতে একথাও সুস্পষ্ট হয়ে গেল যে, মির্যা কাদিয়ানীর নবুওয়াত দাবিটি গ্রহণযোগ্য ছিল না।কারণ, যদি তাকে নবী মানা হয়, তাহলে তার কথিত ওহী এবং ইলহাম দ্বারা রচিত পুস্তক “বুশরা” (মির্যার কথিত আসমানি কিতাব) পুস্তকটি শেষ ঐশীগ্রন্থ হওয়ারই দাবি রাখত, তাই নয় কি? অথচ কাদিয়ানীদের ক্রোড়পত্রটিতে বুশরাকে নয়, বরং পবিত্র কুরআনকেই সর্বশেষ ঐশীগ্রন্থ বলা হয়েছে! তো এর মানে কি মির্যাও নবী? নাকি গণমাধ্যমকে প্রতারিত করাই উদ্দেশ্য?
(চার)
কাদিয়ানিদের ফেতনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে ইতিপূর্বে জোরালো ভাবে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলা হয়েছিল। নানা নামে অনেক সংগঠনও সক্রিয় ছিল। তন্মধ্যে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়াত মুভমেন্ট, বাংলাদেশ খতমে নবুওয়ত আন্দোলন ইত্যাদি অন্যতম। আজো সে প্রতিরোধ আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। যদিও রাজনৈতিক বা অন্যান্য কারণে সেই প্রতিরোধ ব্যবস্থায় চোখে পড়ার মত কোনো কার্যক্রম নেই। এরই সুযোগে কাদিয়ানিরা নিজেদের ভ্রষ্ট মতাদর্শ সুকৌশলে এগিয়ে নিচ্ছে।
.
গত কয়েক বছরে তারা দেখতে পাচ্ছে যে, তাদের কর্মকাণ্ডে বাধা আসছেনা। যেন বাধা দেয়ার মত কেউ নেই। যেকারণে তাদের আদি ও আসল ইসলাম বিরুধী চেহারার দাম্ভিকতা প্রদর্শন সম্ভব হল নাস্তিক ও এন্টি-ইসলাম ব্লগারদের জাগরণ মঞ্চে। গত এক’শ বছরের দীর্ঘ সময়ে এমন বাধাহীন অবস্থার কল্পনা করাও ছিল তাদের জন্য অসম্ভব ব্যাপার। সুতরাং বাংলাদেশের বর্তমান সময়টিকে বলা যেতে পারে “কাদিয়ানিদের স্বর্ণযুগ”।
(পাঁচ)
কাদিয়ানিজম সম্পর্কে আমার এ তাত্ত্বিক লেখাগুলো মাসিক আল ফুরকান নামিয় পাকিস্তানের একটি ইসলামী ম্যাগাজিন এর কয়েকটি প্রবন্ধেরই সারাংশ। যার সম্পাদনায় ছিলেন আল্লামা মনযূর নু’মানী (রহ) । প্রবন্ধগুলো রচনাকালে এ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে যে, এখানের বক্তব্যগুলো হবে অত্যন্ত সহজ-সাবলীল ভাষায় লেখিত। অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন অল্প শিক্ষিত ব্যক্তিরাও যেন তা সহজে বুঝতে পারে এবং বিষয়টি সম্পর্কে স্বচ্ছ সঠিক ধারণা অর্জন করতে পারে।
প্রথম নিবন্ধটি ‘ইসলাম ও কাদিয়ানী মতবাদ’ ১৯৭৪ ঈসায়ীর ‘আল-ফুরকান’ আগষ্ট সংখ্যার সম্পাদকীয় রূপে লেখা হয়েছিল। যখন দলমত নির্বিশেষে পাকিস্তানের সকল উলামায়ে কেরাম এবং আপামর কালেমা গো জনতা কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে এক তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। তারা সরকারের নিকট কাদিয়ানিদের আইনী ভাবে অমুসলিম সংখ্যালঘু ঘোষণার জোরালো দাবি জানাচ্ছিলো।
সে সময় ভারতীয় পত্র-পত্রিকা বিশেষত অমুসলিমদের খবরের কাগজ গুলো এর সম্পূর্ণ উল্টো নানা বক্তব্য প্রকাশ ও প্রচার করেছিল। ইসলাম সম্পর্কে একেবারে অমুসলিমদের মতই অজ্ঞ কিছু মুসলিমও বিষয়টির বিরুদ্ধে বক্তব্য ও বিবৃতি প্রচার অব্যাহত রেখেছিল।
হযরত আল্লামা মনযূর নু’মানী (রহ) ওই সকল ভদ্রলোকের অজ্ঞতা আর ভুল বুঝাবুঝি দূর করার লক্ষ্যে এ ক্ষুদ্র নিবন্ধটি লিখেছিলেন। এ নিবন্ধে তিনি ইসলামের প্রকৃত বিশ্বাস এবং তার সীমারেখা সুস্পষ্টভাবে আলোচনা করে দেখিয়েছেন যে, ইসলাম ও কাদিয়ানিজম সম্পূর্ণ বিরোধপূর্ণ ও সংঘাতমুখর দু’বস্তু।
(ছয়)
দ্বিতীয় প্রবন্ধে তিনি ‘কাদিয়ানিরা অমুসলিম কেন’ শীর্ষক লেখাটি সেই সময় লিখেছেন যখন পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ ১৯৭৪ ঈসায়ীর সেপ্টেম্বরে সকলের ঐকমতে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে কাদিয়ানিদের অমুসলিম সংখ্যালঘু ঘোষণা দিয়ে ফেলেছে। এ নিবন্ধে আলোকপাত করা হয়েছে যে, কাদিয়ানিদের অমুসলিম হওয়ার ব্যাপারে ন্যূনতম কোনো সন্দেহেরও সুযোগ নেই। এতে বিষয়টি দ্বিপ্রহরের সূর্যের মত স্পষ্ট হয়ে গেছে।
(সাত)
তৃতীয় নিবন্ধ হল একটি সমালোচনা মূলক ও জবাবি লেখা। দিল্লির ‘আল-জমিয়ত’ পত্রিকা’র প্রাক্তন সম্পাদক মাওলানা উসমান ফারাক্লীথ সাহেবের নাম ভেঙ্গে ‘কাদিয়ানী সম্প্রদায় এবং একটি বিদ্বান মহল’ শীর্ষক শিরোনামে “শবস্তান” পত্রিকায় একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করা হয়েছিল। তৃতীয় নিবন্ধটি তারই জবাবি লেখা। কারণ শবস্তান পত্রিকা’র সৌজন্যে পরবর্তিতে কাদিয়ানিদের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও পুস্তক পুস্তিকায় নিবন্ধটি ছাপা হয়। প্রবন্ধটিতে কাদিয়ানিদের মুসলিম সাব্যস্ত করার জন্যে অত্যন্ত চতুরতা ও চালাকির আশ্রয় গ্রহণ করা হয়েছিল।
কিন্তু তাদের এ চালাকি অবশেষে গুঁড়েবালি হয়ে গেল! আল্লামা মনযূর নু’মানী (রহ) এর স্বার্থকতা হল, তিনি এর জবাবি নিবন্ধে দিনের আলোর মত স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, কাদিয়ানিদের ওকালতিতে শবস্তান পত্রিকা’র নিবন্ধটি অজ্ঞতা, নির্বুদ্ধিতা ও ধোঁকাবাজির চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ছাড়া আর কিছুই না।
আল্লাহতালার শোকর, পরবর্তিতে ফারাক্লীথ সাহেব নিজেই এক বিবৃতিতে সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন :
“শবস্তান পত্রিকাটির উক্ত নিবন্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমার নাম ব্যবহার করা হয়েছে। নিবন্ধটি অাদৌ আমার রচনা নয়।”
সেই বিবৃতিতে তিনি আরো উল্লেখ করেছেন, আল্লামা মনযূর নু’মানী তিনি আল-ফুরকান ম্যাগাজিনে উক্ত নিবন্ধটির সমালোচনা করে যা লিখেছেন তাই সঠিক এবং এর সংগে আমিও একমত।
ফারাক্লীথ সাহেবের উক্ত বিবৃতি দিল্লির “দৈনিক দাওয়াত” পত্রিকাতেও ২৫ শে জানুয়ারি ১৯৭৫ ঈসায়ীতে প্রকাশিত হয়।
‘শবস্তান’ পত্রিকা’র উক্ত প্রবন্ধে আখেরি জামানায় হযরত ঈসা মসীহের (আ) ‘অবতরণ’ প্রসঙ্গেও আলোকপাত করা হয়েছিল। আল্লামা মনযূর নু’মানী সে বিষয়েও আলাদা প্রবন্ধ রচনা করেছিলেন, যা অত্র লেখাটির আরো পরে আপনাদের খেদমতে উল্লেখ করার চেষ্টা করব, ইনশাল্লাহ।
(আট)
ইসলাম কী তা আগে বুঝুন! এটি গতানুগতিক কোনো ধর্ম নয়। দুনিয়ায় মানবরচিত ও বিকৃত ধর্মের অভাব নেই। অনেকগুলো তো এমন যে সেগুলোর কোনো বৈজ্ঞানিক বা গবেষণাধর্মী ব্যাখ্যা তো নেই, ভিত্তিও খুঁজে পাওয়া যায় না। কিন্তু ইসলাম সে রকম কোনো ধর্ম নয়, বরং এটি একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। যার শ্রেষ্ঠত্ব, বাস্তবতা ও গ্রহণযোগ্যতা সবার জানা।
এক সময় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে লিখেছেন : হিন্দু হল অদ্ভুত, আশ্চর্যজনক একটি ধর্ম। এর থেকে বের হওয়া যায়না কিছুতেই। ঈশ্বর মানবো না, তবুও আমি হিন্দু থাকব! কোনো ধর্ম মানবো না, তবুও আমি হিন্দু থাকব!! বহুদিন আগে পণ্ডিত নেহেরু সাহেবের এ উক্তিটি সম্ভবত তার ‘আত্মজীবনী’ বইতে পড়েছিলাম। শব্দ তার যাই হোক, অর্থ যে এটাই তাতে সন্দেহ নেই।
বলতেছিলাম, ‘ইসলাম’ এ রকম আচার অনুষ্ঠান সর্বস্ব কোনো দ্বীন বা ধর্ম নয়। তাই জন্মসূত্রে কেউ মুসলিম হতে পারে না, যদি না সে নির্দিষ্ট কিছু আকিদা বিশ্বাস ও নির্দেশনা মনে-প্রাণে গ্রহণ করে এবং সেগুলো সত্য ও সঠিক বলে মান্য করে।
কারণ এসব বাদ দিয়ে কেউ মুসলিম হতে পারেনা। এমনকি সে কোনো পয়গম্বরের সন্তান হয়ে থাকলেও। যেমনি ভাবে কেন’আন সে হযরত নূহ (আ)-এর ছেলে হবার পরেও মুসলিম ছিলনা। তার কারণ, সে নির্দিষ্ট কিছু আকিদা বিশ্বাস ও নির্দেশনা মনে-প্রাণে গ্রহণ করেনি।তেমনি নির্দিষ্ট আকিদা বিশ্বাস ও নির্দেশনাগুলোর অন্যতম ‘খতমে নবুওয়াত’ বা মহানবী (সা) সর্বশেষ নবী ছিলেন এ কথা মনে-প্রাণে গ্রহণ করা বা বিশ্বাসী হওয়া।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা) ছিলেন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল। নবুওয়াত ও রেসালতের ধারা সমাপ্ত করে দেয়া হয়েছে উনার মাধ্যমে। তারপর কেয়ামত পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত দুনিয়ায় আর কেউ নতুন ভাবে নবী বা রাসূল হবেনা। এটিও জুরুরিয়্যাতে দ্বীনিয়্যাহ’র অন্যতম একটি বিষয়। তাই ‘খতমে নবুওয়াত’ এর উপর ঈমান তথা বিশ্বাস রাখা ফরজ। অন্যথা সে কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হয়ে মুরতাদ হয়ে যাবে।
(নয়)
মনে রাখতে হবে যে, খতমে নবুওয়াত এর ভিত্তি শুধু এটা নয় যে, পবিত্র কুরআনের সূরা আহযাবের ৪০ নং আয়াতে উল্লেখ রয়েছে যে, … ওয়া লাকিন রাসূলাল্লাহি ওয়া খাতামান্নাবিয়্যীন। অর্থাৎ … তবে তিনি আল্লাহ’র রাসূল এবং সর্বশেষ নবী।”
এ আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা সুস্পষ্টভাবে প্রিয় নবী (সা)-কে শেষনবী বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু ভ্রষ্ট কাদিয়ানীরা এখানে “খাতাম” শব্দের অপব্যাখ্যা দেয়। তারা আভিধানিক বক্র ব্যাখ্যার মাধ্যমে সরলপ্রাণ ও ধর্মজ্ঞান শূন্য মুসলিমদের বিভ্রান্ত করে থাকে। তারা বলে যে, উক্ত আয়াতে “খাতাম” অর্থ আংটি বা সিলমোহর। এ হিসেবে কাদিয়ানিদের অপব্যাখ্যাটি এরকম : মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পূর্বের নবীগণের মোহর স্বরূপ।
সুতরাং এ আয়াত দ্বারা মহানবী (সা) এর পর আর কোনো নবী না হওয়া প্রমাণিত নয়। কাজেই তাঁর পরে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীও একজন প্রত্যাশিত নবী! (নাউযুবিল্লাহ)।
তাদের এসব অপব্যাখ্যার প্রত্যুত্তরে আমরা বলে থাকি, তোমাদের উপরিউক্ত বক্তব্য পুরোপুরিভাবে বাতিল। ঊনবিংশ শতাব্দিতে উম্মাহা’র অভিশপ্ত ‘কাদিয়ান’ গ্রামের বংশোদ্ভূত ভণ্ডনবী মির্যার অনুসারী কাদিয়ানিদের মনগড়া ব্যাখ্যা।
ইতিপূর্বে এরকম কোনো ব্যাখ্যা কোনো সাহাবী, তাবেয়ী, তাবে-তাবেয়ী কিংবা সর্বজন স্বীকৃত মুজতাহিদ ইমাম আর মুফাসসীরদের নিকট থেকেও প্রমাণ পাওয়া যায়না। বরং তাফসীরে কাশশাফ, মাদারিকুত তানযীল, রূহুল মা’আনী প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য তাফসীর কিতাবগুলোতে “খাতামুন্নাবিয়্যীন” এর ব্যাখ্যায় সুস্পষ্টভাবে লেখা আছে لا ينبأ بعده نبي অর্থাৎ তাঁর পরে আর কাউকে নবী বানানো হবেনা ।”
মজারব্যাপার হল, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর আগে মুসাইলামাতুল কাজ্জাব এবং আসওয়াদে আনসী সহ আরো অনেকে নবী হওয়ার দাবি করেছিল। কিন্তু তারাও কোনো দিন উক্ত আয়াতের অপব্যাখ্যায় “খাতাম” শব্দের অর্থ ‘সিলমোহর’ বলেনি।
যদি মেনে নিই যে, মহানবী (সা) পূর্ববর্তী নবীগণের মোহর স্বরূপ, তাহলে কাদিয়ানিদের অপব্যাখ্যা মতে পরবর্তিতে আরো যেসব নবী আসবে তাদের মোহর কোথায়?
কিংবা মির্যা কাদিয়ানীরও বা মোহর কোথায়? কেননা, মুহাম্মদ (সা) তো মির্যার জন্মের ১২০৯ বছর আগেই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে গেছেন। এমতাবস্থায় পরে আগমণকারী মির্যার মোহর হবে কে? কাজেই তাদের উপরিউক্ত ব্যাখ্যাটি অসার এবং উদ্দেশ্যমূলক নয় কি? এগুলো মূলত কাদিয়ানিদের ভাঁওতাবাজি আর সত্য গোপন করার ব্যর্থ চেষ্টা। দেরিতে হলেও তাদের এসব কাণ্ডজ্ঞানহীন জারিজুরি দ্বিপ্রহরের মত সুস্পষ্ট হয়ে গেছে। নতুবা এ পবিত্র কুরআন যাঁর উপর অবতীর্ণ হয়েছে সেই রাসূলই খাতামুন্নাবিয়্যীন শব্দের ব্যাখ্যায় হাদিসে বলে গেছেন “লা নাবিয়্যা বা’দী” অর্থাৎ আমার পরে আর কোনো নবী নেই।” কাজেই মানুষ কি এতই নির্বোধ যে, প্রিয় নবী (সা)-এর ব্যাখ্যা না মেনে ওই পাপিষ্ঠ গোলামের অপব্যাখ্যা মেনে নেবে? প্রতিটি স্বচ্ছ বিবেকের প্রশ্ন, নবী করীম (সা) এর পক্ষ থেকে “খাতাম” শব্দের প্রদত্ত ব্যাখ্যার বিপরীতে কাদিয়ানিরা উক্ত অপব্যাখ্যা (মোহর) কোথায় পেল? তবে কি তারা নবী করীম (সা)-এর চেয়েও কুরআন বেশি বুঝে?
যাইহোক, সূরা আহযাবের ৪০ নং আয়াত ছাড়াও বুখারি এবং মুসলিম শরীফ সহ হাজার খানেক সহিহ হাদিসে সুস্পষ্টভাবে একথা উল্লেখ রয়েছে যে, হযরত মুহাম্মদ (সা)-ই ছিলেন সর্বশেষ নবী।
عن ابي هريرة رضي الله عنه ان رسول الله صلي الله عليه وسلم قال: «ﺇﻥ ﻣﺜﻠﻲ ﻭﻣﺜﻞ ﺍﻷﻧﺒﻴﺎﺀ ﻗﺒﻠﻲ ﻛﻤﺜﻞ ﺭﺟﻞ ﺑﻨﻰ ﺑﻴﺘﺎ ﻓﺄﺣﺴﻨﻪ ﻭﺃﺟﻤﻠﻪ ﺇﻻ ﻣﻮﺿﻊ ﻟﺒﻨﺔ ﻣﻦ ﺯﺍﻭﻳﺔ ﻓﺠﻌﻞ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻳﻄﻮﻓﻮﻥ ﺑﻪ ﻭﻳﺘﻌﺠﺒﻮﻥ ﻭﻳﻘﻮﻟﻮﻥ: ﻫﻼ ﻭﺿﻌﺖ ﺍﻟﻠﺒﻨﺔ، ﻗﺎﻝ: ﻓﺄﻧﺎ ﺍﻟﻠﺒﻨﺔ ﻭﺃﻧﺎ ﺧﺎﺗﻢ ﺍﻟﻨﺒﻴﻴﻦ» ( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ
অর্থাৎ হযরত আবু হোরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলেপাক (সা) ইরশাদ করেছেন : নিশ্চয় আমার আর আমার পূর্বেকার নবীদের উপমা হল এমন একজন ব্যক্তির অবস্থার ন্যায় যে একটি ঘর নির্মাণ করল অতপর সে তা সুন্দর ও চমৎকৃত করল। কিন্তু সে ঘরটির এক কোণে ইটের একটি স্থান শূন্য অবস্থায় ছেড়ে দিল। অতপর লোকজন তা ঘুরেঘুরে দেখে আশ্চর্যান্বিত হয়ে বলতে লাগল, কেন ওই ইটখানা স্থাপন করল না? নবীজি (সা) বললেন, আমিই হলাম সেই অবশিষ্ট ইট। যেহেতু আমিই সর্বশেষ নবী। (মুসলিম শরিফের বর্ণনায় এসেছে, আমার পরে আর কোনো নবী নেই)। (সূত্র- সহিহ বুখারি শরিফ : ৬/৫৫৮, সহিহ মুসলিম : ৪/১৭১৯; সুনানে তিরমিযী : ৮/১২৮-৩০, আল-মুসান্নাফ ফী শরহে সুন্নাহ : ১৩/২১১)। ইহুদী খ্রিষ্টানদের প্রতিপালিত এ সম্প্রদায়ের স্বরূপ জানার এবং বিভ্রান্তি থেকে আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের হেফাজত করুন। (দশ)
♦ মির্যা কাদিয়ানী ইতিহাসের চরম বিনোদিত ও রহস্য মানব :
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যাদের রাসূল করে পাঠান তাদেরকে যেমন দান করেন চারিত্রিক মাধুর্য ও সততা সাহসিকতা পবিত্রতা, তেমনি মানবীয় গুণাবলীতে তাদের প্রদান করেন আকর্ষণ, পূর্ণতা ও বিশিষ্টতা। যাতে পরবর্তীকালের লোকেরা তাঁদের জীবনী পাঠ করে এসব অনুপম গুণাবলি দ্বারাই অন্যসব মানুষ থেকে উনাদের পৃথক করে নিতে সক্ষম হয়। কিন্তু বেচারা মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী বড্ড হতভাগা! তার জীবন চরিত্র আর ইতিহাস যদি একবার মাত্র দেখি তাহলে আমাদের নিরাসক্ত ও নির্মোহ বিবেক বলে দেবে : না, না; এ ব্যক্তি নবী হতে পারেনা। নিশ্চয়ই এ ব্যক্তি মিথ্যাবাদী এবং প্রতারক। মিথ্যাবাদী তার অনুসারিরাও।মির্যা কাদিয়ানী স্বীয় গৃহ শিক্ষকের নিকট মাধ্যমিক শ্রেণী পর্যন্ত আরবী, ফার্সি, ঊর্দূ ও ইংলিশ পড়েছে। কয়েকবার মোক্তারি পদে চাকুরীর জন্য পরীক্ষাও দেয়। কিন্তু অকৃতকার্য হয়। শেষমেশ শিয়ালকোটে গিয়ে কেরানির চাকুরী করে।
সে আচার আচরণে বড্ড আহমকি প্রকাশ করত। চোখের চশমা মাথায় তুলে রেখে পুরো ঘর খুঁজে বেড়াত।
স্ত্রীর সেলোয়ার দিয়ে পাগড়ি বেঁধে মাঝেমধ্যে নামায পড়ত আর নামাযে দাঁড়িয়ে পান চিবাত। ভীরুতা, কাপুরুষতা আর মিথ্যার ছাপ ছিল তার চোখেমুখে। তার বোকামি আর নির্বুদ্ধিতার নানা কাহিনী জানা যায় তার পুত্র বশিরুদ্দিন (কাদিয়ানিদের দ্বিতীয় খলিফা) এর লেখিত ‘সিরাতুল মাহদি’ পুস্তক থেকে। যেমন, সে নাকি মুরগী জবাই করতে পারত না। একবার মুরগী জবাই করতে গিয়ে আংগুল কেটে পেলে আর বলতে থাকে তওবাহ তওবাহ।
একবার আমেরিকা থেকে দু’জন ব্যক্তি তার নিকট এসে তাকে জিজ্ঞেস করল : আপনি কি নিজেকে নবী দাবি করেন? বলল, হ্যাঁ করি। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, এর প্রমাণ কী? বলল, তোমরা যে এসেছো এটাই তার প্রমাণ। লোক দুটি হতভম্ব হল। ১৯০১ সালের আগে মির্যা নিজেকে মাহদি দাবি করার কিছু দিন পর পুণরায় যখন নিজেকে “মাসীহ ঈসা” দাবি করে প্রচার চালাতে লাগল, তখন লোকেরা তাকে জিজ্ঞেস করল, হযরত মাসীহ ঈসা (আ)-এর তো পিতা ছিল না। অথচ আপনার তো পিতা রয়েছে! তখন মির্যা কাদিয়ানী উপস্থিত একটি জবাবে বলে দিল, ‘ঈসা নবী’রও পিতা আছে। তার নাম ইউছুফ নাজ্জার।’ এবার বুঝুন, সে কত্তবড় দুঃসাহসী মিথ্যুক। তারপর লোকেরা আবার তাকে জিজ্ঞেস করল, হযরত ঈসা’র মায়ের নাম তো বিবি মারিয়াম ছিল। কিন্তু আপনার মা তো মারিয়াম নন! তখন মির্যা কী জবাব দিল তা শুনুন! সে বলল, আমিই বিবি মারিয়াম! ! তারপর সে নিজের জন্য নারীত্বের প্রমাণ দিতে গিয়ে বলল ‘আমার হায়েজ (ঋতুস্রাব) হয়।’ এভাবে সে নিজের অর্শ্ব রোগের দিকে ইংগিত করল।’ একবার সে বেগ পরিবারের এক নিকটাত্মীয়াকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। মির্যা কাদিয়ানী মেয়ের পিতা মুহাম্মদী বেগকে ডেকে বলল, আমার প্রতি ওহী এসেছে যে আমি তোমার মেয়েকে বিয়ে করছি। তাই তোমার বড় মেয়েকে আমার সাথে বিয়ে দিতে হবে। নতুবা তুমি কঠিন বিপদের সম্মুখীন হবে। তোমার মেয়ের কোপালেও ছাই আছে। (অন্যত্রে বিয়ে দিলে) তার স্বামীও মারা পড়বে। এটাই (আল্লাহর হুকুম) আমার ওহী। আমি তোমাকে শুনিয়ে দিলাম। যা খুশি কর। (সূত্র : আয়েনায়ে কামালাত, ৫৭২)।
.
(একাদশ)
মুহাম্মদী বেগ এর বড় মেয়ে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর সাথে বিয়ে বসতে রাজি হল না। কিন্তু কাদিয়ানীও নাছোড় বান্দা! সে কথিত এ ওহীকে সত্য প্রমাণ করতে বহুত কসরত করেছে। গভীর রাতে যাদু-টোনা করতে নষ্ট কূপের নিকট হাজির পর্যন্ত হয়েছিল। কিন্তু মহান আল্লাহ তাকে জনমের মত অপদস্থ করেন এবং তার জালিয়াতির গোমর ফাঁস করে দেন। সে যারপরনাই চেষ্টা চালিয়েও মুহাম্মদী বেগ এর মেয়েকে বিয়ে করতে সক্ষম হয়নি।
মুহাম্মদী বেগ স্বীয় মেয়েকে অন্যখানে বিয়ে দেন। মির্যার মৃত্যুর পরেও ওই দম্পতি দীর্ঘ দিন ধরে সংসার যাপন করেন। অথচ মির্যার হুমকি ছিল, অন্যত্রে বিয়ে দেয়া মাত্রই তার স্বামী কিনা মরা পড়বে! কিন্তু পরবর্তিতে দেখা গেল, তার স্বামী বহু বছর বেচে ছিলেন উপরন্তু খোদ মির্যা নিজেই কলেরায় আক্রান্ত হয়ে নির্মম ভাবে মরা পড়ে। তাও আবার বাথরুমে চুবিয়ে। এ ঘটনাটি তদানীন্তন সময়ে পুরো পাক ভারত উপমহাদেশে খুবই আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। তখনই সারা দুনিয়া ফের জানতে পারল যে, মির্যা কাদিয়ানী কত্তবড় মিথ্যাবাদী আর ধোঁকাবাজ। এরূপ বাগাড়ম্বর সে বহু করেছে। সব সময় আল্লাহ তায়ালা তার কথা এবং প্রতিশ্রুতি মিথ্যে প্রমাণিকরেছেন।
ইতিহাসবিদরা তার ঘৃণিত, স্থায়ী রোগের দীর্ঘ একটি তালিকা বের করেছেন। এর সংখ্যা ১৮-২০টির কম নয়। যেমন, তার দাঁত পোকা খেয়ে শেষ করে দেয়। বাম হাত ভেংগে অবশ অবস্থায় ছিল। মস্তিষ্ক বিকৃতি। স্বল্প নিদ্রা। স্মৃতিলোপ পাওয়া। বহুমূত্র। অর্শ্ব প্রভৃতি। হাকিম নূরুদ্দীনকে লেখা তার এক চিঠি থেকে তার পুরুষত্বহীনতার বিবরণও জানা যায়। অথচ কোনো নবীকেই আল্লাহ তায়ালা এমন রোগে ভোগান না।
(দ্বাদশ পর্ব)
কাদিয়ানী ধর্মমতের অনুসারী লোকগুলো বর্তমানে দু’টি শ্রেণীতে বিভক্ত। যাদের একটি ‘কাদিয়ানী লাহোরি পার্টি’ আর অপরটি ‘কাদিয়ানী মির্যা বশিরুদ্দিন পার্টি’। দ্বিতীয় পক্ষের কাদিয়ানীদের ফতুয়ায় (?) প্রথমোক্ত পার্টির অনুসারীরাও কাফের। কারণ প্রথমোক্ত পার্টির অনুসারীরা মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে বড়জোর “প্রতিশ্রুত ইমাম মাহদি” বলে বিশ্বাস করে। কিন্তু তাকে নবী হিসেবে বিশ্বাস করেনা। প্রথমোক্ত পার্টির অনুসারী তথা কাদিয়ানী লাহোরি পার্টি’ এরাও মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে যে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী এবং রাসূল ছিলেন হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। অপর দিকে দ্বিতীয় পক্ষের বিশ্বাস হল, মির্যা কাদিয়ানী সেও নবী ছিল। কারণ নবুওয়াতের ধারা জারি থাকবে। (নাউযুবিল্লাহ)।
.
আমাদের বাংলাদেশেও কাদিয়ানী ধর্মমতের লোকজন রয়েছে। কিন্তু তাদের সঠিক মতাদর্শ নিয়ে এদেশের মুসলিম বিশেষজ্ঞগণ আজো সন্দিহান। তারা আসলে কোন সম্প্রদায়ভুক্ত? প্রথমোক্ত দলের, নাকি শেষোক্ত দলের?
তবে বিগত ১৭.০১.২০১৩ ইং তারিখে “দৈনিক প্রথম আলো” পত্রিকায় কাদিয়ানিদের পক্ষ থেকে প্রকাশিত ক্রোড়পত্র পড়ে বুঝা গেল, এদেশীয় কাদিয়ানীরা যথাসম্ভব ওই প্রথমোক্ত দলেরই অন্তর্ভুক্ত যাদের বিশ্বাস হল, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী “প্রতিশ্রুত ইমাম মাহদি” ছিল। কিন্তু মুসলিম উম্মাহা’র প্রকৃত আকিদা বিশ্বাস মতে প্রতিশ্রুত সেই মাসীহ ঈসা এবং হযরত ইমাম মাহদি (আলাইহিমাস সালাম) দু’জনের কেউ এখনো পর্যন্ত পৃথিবীতে আগমন করেননি। সহিহ বুখারি সহ অনেক গুলো হাদিসে উনাদের আগমন ভবিষৎবাণী বিবৃত হয়েছে।
ত্রয়োদশ পর্ব
কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলটির দ্বিতীয় ধর্মগুরু ছিল মির্যা বশীরুদ্দিন মাহমুদ। সে ছিল মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর পুত্র। সে ১৯১৫ সালে একটি পুস্তক লিখে। নাম দেয় “হাকীকাতুন নবুওয়াত”। মূলত কাদিয়ানিদের দ্বিতীয়াংশ লাহোরি পার্টির মতাদর্শের বিরুদ্ধেই এ পুস্তক। কারণ লাহোরি পার্টিদের বিশ্বাস, মির্যা কাদিয়ানী বড়জোর ইমাম মাহদি ছিল, নবী ছিলনা।
যাইহোক, মির্যা বশিরুদ্দিন মাহমুদ এর লেখা পুস্তকটির প্রতিপ্রাদ্য বিষয় ছিল, কাদিয়ানীকে নবী হিসেবে সাব্যস্ত করা এবং কাদিয়ানী লাহোরি পার্টিদের মতাদর্শের খণ্ডন করা। পুস্তকটির প্রচ্ছদ শিরোনাম ছিল — ‘প্রতিশ্রুত মাসীহ ও প্রতিক্ষিত মাহদীর নবুওয়াত ও রিসালাতের সুস্পষ্ট প্রমাণ’। ১৮৪ পৃষ্ঠা হতে ২৩৩ পৃষ্ঠা পর্যন্ত প্রায় ৫০ পৃষ্ঠা ব্যাপী একই বিষয়ে লেখা। যেখানে কাদিয়ানী লাহোরি পার্টির মুকাবিলায় ও মির্যা কাদিয়ানীকে নবী সাব্যস্ত করার জন্য প্রায় ২০ টি প্রমাণ পেশ করা হয়।
↓
তন্মধ্যে সপ্তম প্রমাণ হল : “মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী নিজেকে নবী ও রাসূল বলেছেন। তিনি নিজের জন্য নবুওয়াত ও রিসালাতের দাবি করেছেন।”
মির্যা বশিরুদ্দিন মাহমুদ সে উক্ত পুস্তকে তার পিতা মির্যা কাদিয়ানীর ৩৯ টি বক্তব্য উল্লেখ করেছে যেগুলোতে মির্যা নিজেকে নবী, রাসূল ঘোষণা করেছে। আরো পরিষ্কার ভাবে দাবি করেছে যে, সে নবী ও রাসূল। (নাউযুবিল্লাহ) । আমি আজ এখানে সেগুলো থেকে কিছু বক্তব্য তুলে ধরছি। এ গুলো যদিও আমি (আল্লামা মনযূর নু’মানী) খোদ মির্যার পুস্তকাদিতেই অধ্যায়ন করেছি কিন্তু এখানে তা মির্যা বশিরুদ্দিন মাহমুদ এর “হাকীকাতুন নবুওয়াত” নামক পুস্তক হতে পেশ করছি। (ওয়ামা তাওফিক ইল্লাবিল্লাহ)।
১- “আমি সেই খোদার নামে কসম করে বলছি যার হাতে আমার প্রাণ, তিনিই আমাকে পাঠিয়েছেন। তিনিই আমার নাম নবী রেখেছেন।” (সূত্র: পরিশিষ্ট, হাকীকাতুল ওহী – ৬৮)।
২- “আল্লাহ তায়ালার হুকুম মতে আমি নবী”। (মির্যার সর্বশেষ পত্র, ২৬ মে ১৯০৮) ।
৩- “আমার দাবি এই যে, আমি রাসূল ও নবী।” (বদর, ৫ মার্চ ১৯০৮) ।
৪- “এতে কী সন্দেহ যে, আমার ভবিষৎবাণী গুলোর পর দুনিয়াতে ভূমিকম্প ও অন্যান্য আপদবিপদ একেরপর এক শুরু হয়ে যাওয়া আমার সততার একটি নিদর্শন। মনে রাখা উচিৎ পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে আল্লাহতালার রাসূলকে অস্বীকার করলে, তখন অন্য অপরাধীদেরকেও পাকড়াও করা হয়।” (হাকীকাতুল ওহী ১৬১)।
৫- “কাংড়া, ভাগসো পাহাড়ে শতশত মানুষ নিহত হল। কী ছিল তাদের অপরাধ? তারা কাকে অস্বীকার করেছিল? মনে রাখা উচিত, যখন আল্লাহতালার প্রেরিত কোনো দূতকে অস্বীকার করা হয়, চাই সে অস্বীকৃতি জগতের যে কোনো প্রান্তেই হোক; জগতের যে কোনো সম্প্রদায় করুন না কেন, আল্লাহর ক্রোধ — ব্যাপকভাবে আযাব নাযিল করে।” (হাকীকাতুল ওহী ১৬২)।
৬- “আল্লাহ তায়ালা নিজ রাসূলকে প্রমাণ বিহীন পাঠিয়ে দেয়া পছন্দ করেননি।” (দাফেউল বালা ৮)।
৭- “খোদা তায়ালা কাদিয়ানকে এই ধ্বংসাত্মক মহামারী থেকে রক্ষা করবেন। কেননা এটা তার রাসূলের রাজধানী। ” (দাফেউল বালা ১০)।
৮- “তিনিই সত্য খোদা যিনি কাদিয়ানে আপন রাসূল পাঠিয়েছেন।”
(দাফেউল বালা ১১, মির্যা বাশিরুদ্দীন মাহমুদ রচিত ‘হাকীকাতুন নবুওয়াত’ পুস্তক হতে গৃহীত, পৃষ্ঠা নং ১৩, ১৪, ২১২) ।
প্রিয় পাঠকবর্গ! উপরের বক্তব্যগুলোর সবই মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর বক্তব্য। যেখানে সে নিজের ব্যাপারে নবী হওয়ার মতাদর্শটি সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে। ইনসাফের দৃষ্টিতে চিন্তা করে দেখুন, তার বক্তব্যগুলোতে কোনো প্রকারের তাবিল- ব্যাখ্যার সুযোগ আছে কিনা?
এছাড়াও মির্যার মনগড়া তথাকথিত খোদায়ি ইলহামের হাজারো স্থানে নিজেকে নিজে খোদার তরফ থেকে প্রেরিত নবী-রাসূল হওয়ার দাবি করেছিল। (মা’আজাল্লাহ) ।
আল্লাহ তায়ালা ১৯০৮ সালে কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মলমুত্রে চুবে মরা ভণ্ড মির্যা কাদিয়ানী কাজ্জাবের ধোঁকা হতে ও তার অনুসারী আহমদিয়া জামাতের যাবতীয় কর্মকাণ্ড হতে মুসলিম উম্মাহর ঈমানকে হেফাজত করুন। আমীন।
(অসমাপ্ত)
হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ:) প্রমাণ করেছেন যে খৃষ্টানদের খোদা যিশু মানুষ ছিলেন। আর এটা তিনি (আ:) প্রমাণ করেছেন ঈসা (আ:) এর মৃত্যু প্রমাণের মাধ্যমে।
উত্তরমুছুনএখন একজন সুস্থ বিবেক সম্পন্ন মানুষ কিভাবে বিশ্বাস করতে পারে যে তিনি খৃষ্টানদের দালাল ছিলেন??