বিশ্ব ইজতেমার ঈমানদীপ্ত ইতিহাস
============================
লিখেছেন মুফতি ওসমান আল-হুমাম উখিয়াভী
চরম্বা, লোহাগাড়া,চট্টগ্রাম।
মুহাদ্দিস জামিয়া কুরআনিয়া দারুল উলূম ওসমানাবাদ
kvqL gy.Bwjqvm KvÜjfx
in.(1303-1362wnRix)t
wZwb Avjøvni c‡_i GK gnvb `vÕC| gymwjg
we‡k¦i kxl© Djvgv‡q †Kiv‡gi g‡a¨ Ab¨Zg e¨w³Z¡| ZvewjM Rg‡Zi cÖwZôvZv| †h
Rvgv‡Zi `vÕCMY AvR cÖvP¨-cÖvZx‡P¨i mxgvbv †cwi‡q wek¦gq Qwo‡q c‡o‡Q Bmjv‡gi
cvqMvg I `vIqvZ wb‡q| c„w_exi cÖvq me©ÎB GB Rvgv‡Zi Avgj Pvjy i‡q‡Q| GB Kv‡Ri
myev‡` m`i mv‡ne ûRyi in. Bwjqvm in. Gi mv‡_ Mfxi fv‡e m¤ú„³ n‡q c‡owQ‡jb| d‡j
Ny‡i wM‡qwQj Zvi Rxe‡bi †gvo| jÿ Kiæb! m`i mv‡ne ûRyi in. Gi wb‡Ri fvlvq t
ÔRxe‡bi Avwg me‡PÕ †ewk cÖfvweZ n‡qwQ Avjøvni c‡_i gnvb `vC gymwjg D¤§vni `i`x
eÜz nhiZ gvIjvbv gy.Bwjqvm in. Gi mygnvb `vIqv‡Zi Kg©bxwZi ci‡k| wZwb wQ‡jb
Avjøvni gvÕgyi (Avjøvn KZ…K wb‡`©wkZ)| Avwg ejwQ bv †h, Zvi Kv‡Q Inx ev Avmgvbx
cÖZ¨v‡`k Avm‡Zv| wKšÍ ZvewjM Rgv‡Zi GB mygnvb Kv‡Ri Rb¨ wZwbB wQ‡jb Avjøvni
g‡bvbxZ ev›`v| c_‡fvjv gvbyl‡K Bmjv‡gi c‡_ wb‡q Avmvi R‡b¨ Zvi GB †h
wPšÍv-fvebv, Gi g‡a¨ wZwb wb‡R‡K G‡Kev‡i wejxb K‡i w`‡qwQ‡jb| c_åó I w`KåvšÍ
gvby‡li Kv‡Q Qz‡U wM‡qwQ‡jb `i`fiv g‡bi e¨vKzjZv wb‡q| ‡W‡KwQ‡jb Zv‡`i‡K Mfxi
ggZvq Bmjv‡gi k¦vk¦Z evYxi w`‡K| Avjøvn-ivm~‡ji me© Avb~M‡Z¨i w`‡K| Avjøvni
Ljxdv wnmv‡e Zvi wb‡`©k cvj‡bi R‡b¨ G j‡ÿ¨ wZwb Qz‡U wM‡qwQ‡jb e¨vKzj ‡e-Kvivi
wP‡Ë gvby‡li Øv‡i Øv‡i| Zvi Pvjy Kiv G Avgj I `vIqv‡Zi KvR eZ©gv‡b ïay
wn›`y¯Ív‡b bqÑ Gwkqv gnv‡`k BD‡ivc-Av‡gwiKvqI Qvo‡q c‡o‡Q| GLb wek¦gq G KvR
Pj‡Q| mKvj-mܨv| ZvewjM Rgv‡Zi `vIqv‡Zi mydj I mdj¨ Ab¨ ‡h †Kvb `vIqv‡Zi Zzjbvq
†ewk|,তত্কালীন বৃটিশ-ভারতের
রাজধানী দক্ষিণ দিল্লীর এক জনবিরল অঞ্চল 'মেওয়াত' এ'দাওয়াতে তাবলিগ জামাতে'র
গোড়াপত্তনের কয়েক দশক পর, ১৯৪১ খৃস্টাব্দে
নিজামুদ্দীন মসজিদের নূহ
মাদ্রাসায় প্রথম বড় পরিমণ্ডলে তাবলিগ ইজতেমার সূচনা হয়েছিল। তখনো তাবলিগ জামাতের দাওয়াত
পৌঁছেনি এই বঙ্গভাগে। প্রথম যুগে 'শওক' ও
'জযবার' সাথে ফায়দা হাসিলের
যে 'মেহনত' চলছিল তা হযরত
মাওলানা আবদুল আজিজের (রহ.)মাধ্যমে ১৯৪৪
সালে এসে পৌঁছে বাংলাদেশে । তবে তারও দু'বছর পরে
এদেশে
'বিশ্ব ইজতেমা'র ঐতিহাসিক
পটভূমি রচিত হয়েছিল কাকরাইল মসজিদে ছোট আয়তনে। অতঃপর এই মারকাজ ছেড়ে ১৯৪৮ সালে
চট্টগ্রাম হাজী ক্যাম্পে,১৯৫৮ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে,১৯৬৫ সালে টঙ্গীর পাগারে এবং অবশেষে ১৯৬৬ সালে টঙ্গীর তুরাগ নদীর (কহর দরিয়া) উত্তর-পূর্ব তীর সংলগ্ন ১৬০
একর জায়গার বিশাল খোলা ময়দানে
বিশ্ব ইজতেমায়-বিশ্ব তাবলিগের পুনর্জাগরণ ঘটে।১৯৯৬ সালে তত্কালীন সরকার এ জায়গায় ১৬০ একর জমি স্থায়ীভাবে ইজতেমার
জন্য বরাদ্দ দেয় এবং অবকাঠামোগত
উন্নয়ন ঘটায়। 'বিশ্ব ইজতেমা' শব্দটি বাংলা ও আরবি শব্দের বন্ধন। আরবি 'ইজতেমা' অর্থ সম্মিলন, সভা বা সমাবেশ। ভারতের মুম্বাই ও ভূপালে এবং হালে পাকিস্তানের রায়বেন্ডে বিশ্ব ইজতেমা হলেও টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমাই বড়। গোট দুনিয়ার নানা প্রান্ত থেকে আগত তাবলিগদের বৃহত্ এই
ইজতেমা দিনে দিনে নতুন মাত্রা ধারণ করছে। তবে এর সূচনার
ইতিহাসটি মসৃণ ছিল না। বড় বড় চড়াই-উত্রাই পেরিয়ে আসতে হয়েছে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ভারতবর্ষের মুসলমানদের
এক ক্রান্তিকালে বিংশ শতাব্দীর ইসলামী চিন্তাবিদ ও সাধক হজরত মাওলানা ইলিয়াস আখতার কান্ধলভী (১৮৮৫-১৯৪৪ খ্রি.) দাওয়াতে
তাবলিগের পুনর্জাগরণ করেন। দিল্লীর চরিত্র
স্খলিত,ধর্ম-কর্মহীন, অশিক্ষিত ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন
নামেমাত্র মুসলমান 'মেওqvZ' জনগোষ্ঠীকে ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস, ধর্মের পূর্ণাঙ্গ অনুশীলন ও কালেমার দাওয়াতী মর্ম শিক্ষাদান
এবং বিভ্রান্তির কবল থেকে মুক্ত করার
ব্রত নেন। হজরত মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) অনুধাবন
করেছিলেন যে, জনগণের বৃহত্তর অংশে ইসলামের মৌলিক
বিশ্বাস সুদৃঢ়করণ ও তার বাস্তব
অনুশীলন না হলে মানবসমাজে পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে না। বরং সাধারণ
মানুষের জীবনে দ্বীন ইসলাম না আসলে মু'মিন হতে
পারে না। ১৩৪৫ হিজরিতে দ্বিতীয় হজ্ব থেকে ফিরে এসে তিনি তাবলিগ গাশ্ত শুরু
করলেন,
জনসাধারণের মাঝে কালেমা ও নামাযের দাওয়াত দিতে লাগলেন। তাবলিগ জামাত
বানিয়ে বিভিন্ন এলাকায় বের হওয়ার দাওয়াত
দিলেন। এভাবে গ্রামে
গ্রামে কাজ করার জন্য জামাত তৈরি
করে দিতেন। কয়েক বছর মেওয়াতে এ পদ্ধতিতে কাজ অব্যাহত থাকলো। ১৩৫২ হিজরিতে তৃতীয় হজ্ব পালনের পর তিনি বুঝতে পারলেন যে, গরিব মেওয়াতী
কৃষকদের পক্ষে দ্বীন শেখার সময় পাওয়া কষ্টকর। তাদের 'দিন আনতে পান্তা ফুরানো' দশা। ঘর-সংসার ছেড়ে
মাদ্রাসায় দ্বীন শেখাও অসম্ভব। ওয়াজ-নসিহতের মাধ্যমে সামগ্রিক জীবন পাল্টে দেয়া বা জাহেলী
বিশ্বাসকে পরিবর্তন করাও
সম্ভব নয়। তাই একমাত্র উপায় হিসেবে তাদের ছোট ছোট জামাত আকারে ইলমী ও দ্বীনি মারকাজগুলোতে গিয়ে সময় কাটানোর জন্য
উদ্বুদ্ধ করতে লাগলেন এবং ধর্মীয়
পরিবেশে তালিম দিতে আরম্ভ করলেন। সেই ধর্মীয় মজলিসে উলামা-মাশায়েখদের ওয়াজ-নসিহতের পাশাপাশি তাদের দৈনন্দিন জীবনের নিয়মনীতি বাতলে দেয়া হতো। দ্বীনদার পরহেজগার লোকদের জীবনযাপন, কথাবার্তা, আচার-আচরণ, চাল-চলন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতেন। ধর্মীয় মৌলিক বিশ্বাস ও ইবাদতের অনুশীলনের পাশাপাশি তিনি মুসলমানদের অনুসৃত প্রধান
ধর্মগ্রন্থ আল-কুরআনের
প্রয়োজনীয় কিছু সূরা- ক্বেরাত শিক্ষাদান, দোয়া-দরূদ, জরুরি মাসআলা-মাসায়েল সম্পর্কে অবহিত করে তার তাবলিগ জামাতকে একটি
ভ্রাম্যমাণ মাদরাসাতে
রূপান্তরিত করেন। প্রায় প্রতি মাসে একবার মেওয়াতের কোনো না কোনো স্থানে এবং বছরে একবার 'নূহ' অঞ্চল মাদরাসায়
তাবলিগী জলসা হতো। দিল্লীর তাবলিগ জামাত, ব্যবসায়ী দল, নিজামুদ্দীনে অবস্থানকারী
জিম্মাদারগণ এবং মাযাহেরুল উলূম
সাহারানপুর, দারুল উলূম দেওবন্দ, দারুল উলূম নাদওয়াতুল উলামা ও দিল্লী ফতেহপুর মাদরাসার কতিপয় আলেম ও শিক্ষক তাতে
অংশগ্রহণ করতেন। হযরত মাওলানা ইলিয়াস রাহ. বিশিষ্ট তাবলিগী সাথীদের নিয়ে
জলসার উদ্দেশ্যে রওনা হতেন। সফরের সারা পথ
দাওয়াত দিয়ে যেতেন। দেশ-কাল পেরিয়ে এভাবেই পর্যায়ক্রমে তাবলিগের বিশ্বব্যাপী প্রচার ও প্রসার ঘটে। প্রথম ইজতেমা
সম্পর্কে হযরত মাওলানা সাইয়্যেদ আবুল হাসান আলী নদভী তার 'একটি নূরানী
ইজতিমা'
ও 'হযরত মাওলানা
ইলিয়াস রাহ. ও তাঁর দ্বীনি দাওয়াত' গ্রন্থে জানাচ্ছেন,৮, ৯ ও ১০ জিলকদ ১৩৬০
হিজরি,
মোতাবেক ২৮, ২৯ ও ৩০ নভেম্বর ১৯৪১ খৃস্টাব্দে
প্রথম দিল্লীর নিজামুদ্দীন মসজিদের ছোট এলাকা মেওয়াতের নূহ মাদ্রাসায় যে তাবলিগ ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়, মেওয়াতভূমির মানুষেরা এত বড় সমাবেশ ইতিপূর্বে আর দেখেনি। বাস্তবানুগ ধারণা মতে লোকসংখ্যা ছিল বিশ/পঁচিশ হাজার। এদের একটা বিরাট অংশ নিজের সামান ও নিজের খাবার-দাবার কাঁধে করে ত্রিশ/চল্লিশ ক্রোশ পথ হেঁটে হাজির হয়েছিলেন। বহিরাগত বিশিষ্ট মেহমানদের সংখ্যাও হাজারের কাছাকাছি ছিল। তারা মুঈনুল ইসলাম
মাদরাসার ভবনে শানদার
মেহমানদারিতে ছিলেন। মজমার সুপ্রশস্ত শামিয়ানার নিচে মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী রাহ. জুমার নামায পড়িয়েছিলেন। জামে মসজিদসহ প্রায়
মসজিদে নামায হওয়া সত্ত্বেও প্রধান জামাতের
কাতারের কারণে সড়ক চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এমনকি ছাদে ও বালাখানার উপরেও শুধু মানুষ আর মানুষ দেখা যাচ্ছিল। তবে শুরুতে তাবলিগী কাজ ব্যাপক সমর্থন পায়নি। ধীরে ধীরে এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। এ ব্যাপারে হজরত মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) এর ন্যায়নিষ্ঠা, ধৈর্য,
পরিশ্রম, পরিকল্পনা ও
নির্দেশনায় অপরিসীম ভূমিকা রাখে। মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) সারাজীবন পথহারা মানুষকে সঠিক পথের
সন্ধান দিয়ে এই দাওয়াত ও তাবলিগ
জামাত তথা বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্বের ঐক্যের প্রতীক বিশ্ব ইজতেমাকে ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য এক সুদৃঢ় মজবুত ও
শক্তিশালী অবকাঠামোর ওপর ভিত্তি স্থাপন
করে ১৯৪৪ সালের ১৩ জুলাই ৫৯ বছর বয়সে ইহকাল ত্যাগ করেন। তাঁর ইন্তেকালের পর বিশ্ব মুসলিম
ঐক্য ভ্রাতৃত্বের প্রতীক বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় প্রধান মুবাল্লিগ নিযুক্ত হন তাঁর সুযোগ্য পুত্র হজরত মাওলানা ইউসুফ কান্ধলভী (রহ.)। তিনি তাবলিগের দাওয়াতী জামাতকে ভারতের চৌহদ্দি
থেকে বের করে এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের
বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছাতে থাকেন। এই তাবলিগের
দাওয়াতের সূত্র ধরেই মুসলিম ঐতিহ্যের স্পেনের মাটিতে ৫০০ বছর পর মসজিদের মিনারে আজানের সুমধুর আওয়াজ ধ্বনিত হয়। দ্বিতীয় আমির মাওলানা ইউসুফ কান্ধলভীর (রহ.) যুগে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে এর আন্দোলন সবচেয়ে বেশি ও শক্তিশালী
হয়।
এরপরই ক্রমেই তাবলিগের কার্যক্রম বাংলাদেশ, ভারত,
পাকিস্তানের গণ্ডি ছাড়িয়ে পৌঁছে যায় বিশ্বের সর্বত্র। হযরত মাওলানা আবদুল আজিজ (রহ.)-এর মাধ্যমে ১৯৪৪ সালে
বাংলাদেশে তাবলিগ শুরু হয়। বার্ষিক ইজতেমার
প্রয়োজন অনুভব করে হজরত মাওলানা ইউসুফ কান্ধলভী (রহ.) মুরব্বীদের নিয়ে পরামর্শ করেন। বৈঠকে বাংলাদেশের নাম বেরিয়ে আসে। তাবলিগ জামাতের সদর দফতর দিল্লীতে থাকা সত্ত্বেও এর বার্ষিক
সমাবেশের জন্য বাংলাদেশকে
বেছে নেয়া হয়। আর সেই থেকেই বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্যের প্রতীক মুসলিম উম্মাহর দ্বিতীয় সর্ববৃহত্ সমাবেশ ও মহাসম্মেলন বিশ্ব ইজতেমা বাংলাদেশে এসে নয়া দিগন্তে পৌঁছে। সাধারণত প্রতিবছর শীতকালে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়ে থাকে, এজন্য ডিসেম্বর বা জানুয়ারি মাসকে বেছে নেয়া হয়। পুরো সমাবেশের আয়োজনই করে থাকেন এক ঝাঁক ধর্মপ্রাণ
মুসলমান স্বেচ্ছাসেবক- আর্থিক, শারীরিক সহায়তা দিয়ে প্রথম থেকে শেষাবধি তারা এই সমাবেশকে সফল করতে সচেষ্ট থাকেন। পুরো সমাবেশস্থলটি একটি উন্মুক্ত মাঠ, যা বাঁশের
খুঁটির উপর চট লাগিয়ে ছাউনি দিয়ে সমাবেশের জন্য প্রস্তুত করা হয়। শুধুমাত্র বিদেশি
মেহমানদের জন্য টিনের ছাউনি ও টিনের বেড়ার ব্যবস্থা করা হয়। সমাবেশস্থলটি প্রথমে খিত্তা ও পরে খুঁটি নম্বর দিয়ে ভাগ করা
হয়। অংশগ্রহণকারিগণ
খিত্তা নম্বর ও খুঁটি নম্বর দিয়ে নিজেদের অবস্থান সনাক্ত করেন। তাছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলাওয়ারি মাঠের বিভিন্ন
অংশ ভাগ করা থাকে। বিদেশি মেহমানদের জন্য আলাদা নিরাপত্তা বেষ্টনি
সমৃদ্ধ এলাকা থাকে, সেখানে স্বেচ্ছাসেবকরাই কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন, কোনো সশস্ত্র
বাহিনীর অনুপ্রবেশের অধিকার দেয়া হয় না। সাধারণত তাবলিগ জামাতের
অংশগ্রহণকারীরা সর্বনিম্ন তিনদিন মহান আল্লাহর পথে কাটানোর নিয়ত বা মনোবাঞ্ছা পোষণ করেন। সে হিসাবেই প্রতিবছরই বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় তিনদিন জুড়ে। প্রায় প্রতি বছরই এই তিনদিনের মধ্যে শুক্রবারকে রাখার
প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। প্রতি বছরই এই
সমাবেশে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় বিশ্ব ইজতেমা প্রতিবছর দু'বারে করার
সিদ্ধান্ত নেয় কাকরাইল মসজিদ কর্তৃপক্ষ। এরই ধারাবাহিকতায়
২০১১ খ্রিস্টাব্দ থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয় এবং তিনদিন করে আলাদা সময়ে মোট ছয়দিন এই সমাবেশ
অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ আ'ম বয়ান বা খোলাখুলি বক্তৃতার মাধ্যমে শুরু হয় এবং আখেরি
মোনাজাত বা সমাপনী প্রার্থনার
মাধ্যমে শেষ হয়। ইজতেমার মূল আমল হলো বয়ান। প্রতিদিন ফজর এবং
মাগরিবের পর লম্বা সময় নিয়ে বয়ান হয়। জোহর এবং আসরের পরেও ছোট বয়ান হয়। সকাল সাড়ে দশটার দিকে বিশেষ শ্রেণি বা পেশার মানুষ যেমন
ছাত্র,
শিক্ষক, পেশাজীবী, আলীমদের নিয়ে আলাদা আলাদা মজমা করে বয়ান হয়। এ সময় অন্যরা তালীমের মধ্যে থাকেন। বয়ান সাধারণত ভারত এবং পাকিস্তানের আলীম এবং মুরব্বীরা করে থাকেন। তখন বয়ান উর্দুতে হয়। বাংলাতে অনুবাদ হয়। তবে বাংলাদেশের
কেউ বয়ান করলে সরাসরি বাংলাতেই করেন। বিদেশি মেহমানদের জন্য এসব বয়ান তাদের ভাষায় অনুবাদ করে দেয়া হয়। তাদের জন্য সরাসরি আলাদা বয়ানও হয়। বয়ানের মূল
উদ্দেশ্য থাকে মানুষের মধ্যে ঈমানী চেতনা এবং উম্মাতের ফিকির তৈরি করে তাদেরকে জামাতে বের হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা। অনেক সাধারণ
মুসলমান তিনদিন ইজতেমায় ব্যয় করেন না, বরং জুমা'র নামাজে অংশগ্রহণ
করেন কিংবা আখেরি মোনাজাতে
অংশগ্রহণ করেন। তবে সবচেয়ে বেশি মানুষ অংশগ্রহণ করেন আখেরি মোনাজাতে। বাংলাদেশ সরকারের সরকার প্রধান (প্রধানমন্ত্রী), রাষ্ট্রপ্রধান (রাষ্ট্রপতি), বিরোধী দলীয় নেতাসহ অন্যান্য
নেতা-নেত্রীরা সমাবেশে আলাদা-আলাদাভাবে
অংশগ্রহণ করেন। সমাবেশের ভিতরে কোথাও কোনো মুভি ক্যামেরা ঢুকতে দেয়া হয় না। যে বিশাল মাঠটিতে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়, তা সমাবেশ বাদে বাকি সময়টুকুতে গোচারণভূমি থাকে। এমনকি বন্যার সময়
পানির নিচে ডুবে যায়। প্রতিবছরই ইজতেমা ময়দানে কিছু মানুষ মারা যান, তাঁদের জানাযাও
সেখানে হয়। প্রতিবছরই বেশ কিছু বিয়ে ইজতেমা ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়। শুধু বর ইজতেমা ময়দানে কবুল বলার
মাধ্যমে নিজের সম্মতি জ্ঞাপন করেন। কনের সম্মতি তাঁর
ঘর থেকে অভিভাবক সংগ্রহ করে থাকেন। আগে গণমাধ্যম এই সমাবেশে সরাসরি সংশ্লিষ্ট না হলেও এখন অনেক গণমাধ্যমই সমাবেশের
আখেরি মোনাজাত সরাসরি সমপ্রচার
করে। ইজতেমা ময়দানে
ইসলামের প্রবর্তনকালীন সময়কার স্বাদ এনে দিতে
আযান এবং নামাযের সময় কোনো মাইক ব্যবহার করা হয় না। মূল ইমামের আওয়াজ শুনে বিভিন্ন খিত্তার দায়িত্বে থাকা জিম্মাদারদের 'মুকাব্বিররা' পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে ইমামের আওয়াজ ছড়িয়ে যায় পুরো ময়দান জুড়ে।
তাবলিগ জামাত একটি ইসলাম ধর্মভিত্তিক কাজ (কোন সংগঠন নয়) ZvewjM Rvgv‡Zi Djvgv‡`i
g‡Z যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকা। সাধারণত মানুষকে আখিরাত, ঈমান, আমল-এর কথা বলে তিনদিনের জন্য
উদ্বুদ্ধ করা হয়। এর পর যথাক্রমে সাতদিন ও চল্লিশদিন-এর জন্য আল্লাহর রাস্তায় দাওয়াত-এর কাজে
উদ্বুদ্ধ করা হয়ে থাকে। তাবলিগ জামাত-এর মুল ভিত্তি হিসেবে ধরা হয় ৬টি উসুল বা মূলনীতিকে। এগুলো হলো: কালিমা, নামায, Bল্ম ও যিকির, একরামুল মুসলিমিন বা মুসলমানদের
সহায়তা করা, সহিহ নিয়ত বা
বিশুদ্ধ মনোবাঞ্ছা, এবং `vIqv‡Z তাবলিগ বা ইসলামের
দাওয়াত।[1] মুসলমানরা বিশ্বাস করেন, ইসলাম আল্লাহর মনোনীত একমাত্র পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। সারা পৃথিবীর
মানুষের কাছে ইসলামের বাণী পৌঁছে দেয়ার জন্য আল্লাহ পৃথিবীতে অসংখ্য নবী ও রাসূল
প্রেরণ করেছিলেন। কিন্তু যেহেতু মুহাম্মদ(সাঃ) আল্লাহর শেষ বাণীবাহক, তাঁর পরে আর কোনো নবী বা রাসূল আসবেন না, তাই মুহাম্মদ(সাঃ) বিদায় হজ্জ্বের ভাষণে মুসলমানদেরকে ইসলামের দাওয়াত
দেয়ার দায়িত্বটি দিয়ে যান। তবে এবিষয়ে মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ কুরআনেও উল্লেখ আছে:
كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ
تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ
তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের(কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে।"[2]
وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِمَّنْ دَعَا إِلَى
اللَّهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ
তার চেয়ে ভাল কথা আর কি হতে পারে, যে মানুযকে আল্লাহর
দিকে ডাকে,
নিজে নেক আমল করে আর বলে যে, আমি সাধারণ মুসলমানদের মধ্য হতে একজন।[3]
ইসলামের প্রাথমিক যুগে মুহাম্মদ(সাঃ)এর মৃত্যুর পর তাঁর
আদর্শস্নাত সাহাবী, তাবেয়ী ও তাবে-তাবেয়ীগণের মাধ্যমে
ইসলামী জীবন বিধান প্রচার ও